• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

ঝড়ের কবল থেকে উঠে এলেন সুলতান

প্রকাশ:  ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮, ২১:০০ | আপডেট : ০১ জানুয়ারি ২০১৯, ১৭:১১
এম. এ. কাইয়ুম

সুলতান মনসুরের সাথে ভোটের মাঠে টক্কর দিতে নৌকার কান্ডারি হিসেবে আ’লীগের হাই কমান্ড বেছে নিয়েছিল সাবেক বিএনপি নেতা এম এম শাহীনকে। বিকল্পধারার এই নেতাকে মহাজোট প্রার্থী করে মৌলভীবাজার-২ আসনে। ক্ষমতাসীনদল থেকে দেওয়া হয় সব রকমের সমর্থন। ভোটের মাঠ শাহীনের দখলে নিতে প্রয়োগ করা হয় সর্বোচ্চ শক্তি। সুলতান আটকানোর মিশনে স্থানীয় আ’লীগ হুমড়ি খেয়ে কাজ করে মাঠে। নানা কৌশলে সুলতান সমর্থক ও স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ভোটের মাঠে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে।

তবুও পারলেন না এম এম শাহীন। সুলতানের সাথে টক্কর দিতে গিয়ে নৌকার জোয়ারেও মাঝেও ডুবে গেলেন তিনি। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে জয় বাগিয়ে নিলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শীর্ষ নেতা সাবেক সাংসদ, ডাকসু ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ।

নিজ জন্মস্থান মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন সাবেক আ’লীগের এ সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মনসুর। তিনি পেয়েছেন ৭৯ হাজার ৭৪২ ভোট। তার নিটতটম প্রতিদ্বন্দী বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য এম এম শাহীন পেয়েছেন ৭৭ হাজার ১৭০ ভোট। অর্থাৎ মাত্র ২ হাজার ৫৭২ ভোটের ব্যবধানে আসনটিতে জয় পেলেন ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী। এবারের নির্বাচনে আর অন্য কোনও আসনে এতো হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়নি।

স্বাধীনতার পর এই প্রথম মৌলভীবাজার-২ আসনে জয় পেয়েছে ধানের শীষ প্রতীক। ১৯৯১ এবং ২০০১ সালে এ আসনে দুইবার জামানত হারায় বিএনপি। এবার এই আসনে ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে লড়লেন ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ। জয়ী হয়ে এক নতুন ইতিহাস গড়লেন তিনি।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার প্রতিবাদে কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে অস্ত্র হাতে প্রতিরোধ আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন বাংলা‌দেশ ছাত্রলী‌গের সা‌বেক সভাপ‌তি, বাংলা‌দেশ আওয়ামী লী‌গের সা‌বেক সাংগঠ‌নিক সম্পাদক সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ। এ কারণে জীবনের বড় একটা সময় তাকে কাটাতে হয়েছে ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়ে আত্মগোপনে।

১৯৮৯ সালে ডাকসু’র ভিপি পদে তার বিজয় ছিল ’৭৫ পরবর্তী আওয়ামী লীগের প্রথম আনুষ্ঠানিক কোনও জয়। তার নেতৃত্বে ’৭৫-এর পর প্রথম বঙ্গবন্ধুর ছবি স্থান পায় ডাকসু ভবনে।

এবারের নির্বাচনী মাঠে প্র‌তিপক্ষ দ‌লের হামলা, প্রায় অর্ধ-ডজন মামলায় শত শত নেতাকর্মী গ্রেফতারের পরও মনোবলে ভাঙন ধরেনি সুলতানের। যে আসনে কখনও জয়ী হতে পারেনি ধানের শীষ, এবারের নির্বাচনে সেই প্রতীক নিয়েই শেষ হাসি হাসলেন তিনি।

মৌলভীবাজার-২ আসনে প্রতি নির্বাচনে চমক থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দলীয় প্রতীকের চেয়ে এখানে সবসময় এগিয়ে থাকে প্রার্থীর জনপ্রিয়তা।

১৯৯৬ সালে সুলতান মনসুর নৌকা প্রতীক নিয়ে এখান থেকে এমপি হয়েছিলেন, যা ছিল নৌকার সর্বশেষ জয়। এরপর কখনও জয় পায়নি নৌকা।

১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিতর্কিত একদলীয় নির্বাচনে ধানের শীষের জয় দেখানো হলেও নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী তা স্বীকৃতি পায়নি। কখনও জয় না পাওয়া এ আসনে সুলতান মনসুরের ওপর ভর করে এবার ধানের শীষ চমক দেখিয়েছেন এমনটি বলছেন স্থানীয় ভোটাররা। কারণ, সুলতান মনসুরের ব্যক্তিগত ইমেজের ওপর ভর করে এখানের মানুষ ধানের শীষে ভোট দিয়েছেন।

২০০৮ তে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাননি সুলতান। সে নির্বাচনে সুলতানবিহীন নৌকা পেয়েছিল মাত্র ২ হাজার ভোট।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৯ সালে প্রথম নির্বাচনে আসে বিএনপি। সে নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে অংশগ্রহণ করে সৈয়দ আকমল হোসেন তৃতীয় স্থান অর্জন করেন। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি। ১৯৯১ সালে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী আতাউর রহমান নির্বাচনে আসলেও মাত্র পাঁচ হাজার ভোট পেয়ে জামানত হারান।

১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিতর্কিত একদলীয় নির্বাচনে ধানের শীষের জয় দেখানো হলেও নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী তা স্বীকৃত নয়। ১৯৯৬ সালে সব দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে এ আসনে বিএনপি থেকে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচনে আসেন এমএম শাহীন। কিন্তু ওইবারও তৃতীয় হন তিনি ও তাঁর প্রতীক ধা‌নের শীষ। ২০০১ সালের নির্বাচনে এ আসনে চারদলীয় জোট থেকে জামায়া‌তের ড. শফিকুর রহমান নিবার্চন করে জামানত হারান। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি থেকে ধানের শীষে নির্বাচন করেন এএনএম আবেদ রাজা।

সেবারও ধানের শীষ তৃতীয় অবস্থান থেকে উন্নতি করতে পারেনি। সর্বশেষ ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি বিএনপি।

স্থানীয় ভোটাররা বলছেন, সুলতান মনসুর ক্লিন ইমেজের জাতীয় নেতা। অতীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেও প্রতিপক্ষকে হয়রানি করেননি মনসুর। এলাকার স্বার্থে সবাইকে নিয়ে কাজ করেছেন। তার কাছে কোনো কাজের জন্য এলাকার মানুষ গেলে দলীয় পরিচয় না খুঁজে তা করে দিয়েছেন। তাই এ আসনে একাদশ নির্বাচনে সুলতান মনসুরকে আমরা ভোট দিয়েছি। কারণ এখানে সবার প্রিয় নেতা সুলতান মনসুর।

২০০৮ সালে মৌলভীবাজার-২ আসনে বিএনপির পরাজিত প্রার্থী কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য আবেদ রাজা বলেন, সুলতান মনসুরের কারণে সাধারণ মানুষের মাঝে যে গণজোয়ার সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছিল যার কারণে এত কারচুপির পরেও সুলতানকে আটকানো যায়নি।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা সুলতান মনসুর আহমদ বলেন, এ জয় কুলাউড়াবাসীর। মানুষের শক্তিই যে প্রধান ও মূখ্য, তা কুলাউড়ার জনগণ প্রমাণ করেছে। আমি যে ভোট পেয়েছি তার চেয়ে তিনগুন বেশি ভোট পেতাম, যদি না ধরপাকড় না হত।

/পিবিডি/আরাফাত

সুলতান মনসুর,ধানের শীষ
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close