• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

বাসে ৯৪ ভাগ নারীর গায়ে অশালীন স্পর্শ

প্রকাশ:  ০৮ মার্চ ২০১৯, ০৪:৫২
‍পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় চলাচল করা বাসগুলোতে যৌন হয়রানি ঘটনা আমরা প্রায়ই শুনতে পাই। মাঝে মধ্যে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের খবর পড়ে আমরা শিউরে উঠি । কখনো কখনো এসব ঘটনার প্রতিবাদও করি। কিন্তু এর মাত্রাটি কোন পর্যায়ে তা হয়তো আমরা বুঝতে পারিনা৷ সম্প্রতি দু'টি গবেষণায় এর ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে৷

গবেষণা দু'টি করেছে অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ এবং ব্র্যাক৷ এর মধ্যে সবশেষ গবেষণাটি প্রকাশ করেছে অ্যাকশন এইড, যার শিরোনাম ‘সেফ সিটিজ ফর উইমেন'৷ এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের শতকরা ৮৮ জন নারী রাস্তায় চলার পথে যৌন হয়রানিমূলক মন্তব্যের মুখোমুখি হন৷ এদের মধ্যে ৮৬ শতাংশ গণপরিবহণের চালক ও হেলপারদের দ্বারা হয়রানিমূলক মন্তব্যের শিকার হন৷ নারীর ওপর শারীরিক যৌন হয়রানির বিষয়ের বাইরে এইযে মানসিক যৌন হয়রানি, তা তেমন আমলে নেয়া হচ্ছেনা৷ কিন্তু এটা ভয়াবহ আকার ধারণ করছে৷ এর শিকার নারীরাও ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না যে, তারা কোথায় কীভাবে এর প্রতিকার পাবেন৷

সম্পর্কিত খবর

    অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ইকুয়িটি ম্যানজোর কাশফিয়া ফিরোজ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা সাধারণভাবে পাবলিক পরিবহণে ধর্ষণসহ নানা ধরণের যৌন হয়রানির কথা জানি৷ এবার আমরা যৌন নির্যাতনে শব্দের ব্যবহারকে তুলে আনার চেষ্টা করেছি৷ এতে দেখা যায়, ঘরের বাইরে নারী যে যৌন হয়রানির শিকার হয়, তা প্রধানত চলাচলের পথে এবং পরিবহণে৷ এটা বাড়ছে কারণ এর প্রতিকার পাওয়া যায়না৷ পথে ট্রাফিক পুলিশ বা পুলিশ ফাঁড়িতে অভিযোগ করলে তারা এটা আমলে নেয়না৷ উলটো খারাপ মন্তব্য করে৷ আর বাসের মধ্যে বা বাস মালিকদের কাছে অভিযোগ করার কোনো পদ্ধতি আমাদের এখানে নেই৷''

    ২০১৮ সালে ব্র্যাক গণপরিবহণে যৌন হয়রানি নিয়ে আরেকটি গবেষণা করে৷ এতে দেখা যায়, গণপরিবহণে যাতায়াতকালে ৯৪ ভাগ নারী যৌন হয়রানির শিকার হন৷ এই যৌন হয়রানির জন্য যারা দায়ী তাদের বড় অংশ ৪১ থেকে ৬০ বছর বয়সি পুরুষ, শতকরা হিসেবে তারা ৬৬ ভাগ৷

    শারীরিকভাবে যৌন হয়রানির মধ্যে রয়েছে ইচ্ছাকৃত স্পর্শ করা বা চিমটি কাটা, কাছ ঘেঁষে দাঁড়ানো বা আস্তে ধাক্কা দেয়া, নারীদের চুল স্পর্শ করা বা কাঁধে হাত রাখা ইত্যাদি৷

    ঘটনার শিকার হলে মেয়েরা কী পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন? এই প্রশ্নের উত্তরে গবেষণা জরিপে অংশ নেয়া ৮১ শতাংশ নারী বলেছেন তারা চুপ করে থাকেন৷ আর ৭৯ শতাংশ বলেছেন তাঁরা আক্রান্ত হওয়ার স্থান থেকে সরে যান৷

    ব্র্যাক-এর জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি প্রোগ্রামের সমন্বয়কারী হাসনে আরা বেগম বলেন, ‘‘প্রচলিত যৌন হয়রানির পদ্ধতিগুলোর বাইরে এখন মোবাইল ফোনে ছবি তুলে নিয়ে হয়রানি করার মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে৷ আর পরিস্থিতির কারণেই অধিকাংশ নারী অভিযোগ করেন না৷''

    তিনি বলেন, ‘‘তবে আশার কথা হলো গণপরিবহণে এই যৌন হয়রানি নারীকে থামিয়ে রাখতে পারছেনা৷ এত প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও সে কাজে যাওয়া থেকে বিরত থাকছেনা৷''

    হোসনে আরা বেগম বলেন, ‘‘আমাদের দেশে গণপরিবহণ নীতিমালা নেই৷ আর যৌন হয়রানির আইন সুনির্দিষ্ট নয়৷ এব্যাপারে শুধুমাত্র উচ্চ আদালতের একটি নির্দেশনা আছে৷ তাই প্রয়োজন গণপরিবহণ নীতিমালা এবং সুনির্দিষ্ট আইন৷ এর সঙ্গে প্রয়োজন সচেতনতা৷''

    তিনি বলেন, ‘‘পরিবহণ মালিকদের দায় দায়িত্বের আওতায় আনতে হবে৷ অভিযোগ দেয়ার সহজ পদ্ধতি গড়ে তুলতে হবে৷ আর গণপরিবহণে সিসি ক্যামেরা লাগানোর যতদূর সম্ভব ব্যবস্থা করতে হবে৷''

    কাশফিয়া ফিরোজ বলেন, ‘‘চালক ও হেলপারদের জেন্ডার বিষয়ে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে৷ তাদের এই প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করতে হবে৷ আর এই দায়িত্ব নিতে হবে পরিবহণ মালিকদের৷ সবার ওপরে নারীর প্রতি প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে কাজ করতে হবে৷ পরিবহণগুলোকে করতে হবে নারী বান্ধব৷''

    এনই

    অশালীন স্পর্শ
    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close