• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

ঢাকায় স্কুটির ব্যবহার: নারীরা ছুটলে ছুটে চলে দেশ

প্রকাশ:  ২৮ নভেম্বর ২০১৮, ২০:২৬ | আপডেট : ২৮ নভেম্বর ২০১৮, ২১:০৫
হাসনাত কাদীর

আপনি ঢাকায় থাকেন?

তাহলে তো আপনার আয়ুর ‘অবচয়’ বা অপচয় প্রতিদিন ২ থেকে ৪ ঘন্টা। কর্মক্ষেত্র থেকে বাসা কিংবা বাসা থেকে কর্মক্ষেত্রের পথে এই অপচয়টা হবেই। আপনার ব্যক্তিগত গাড়ি না থাকলে তো ষোল কলা পূর্ণ হয়ে গেলো। সিটিং বাসে উঠে দেখবেন ঘাড়ের উপর যাত্রী তুলে হাসিমুখে বাস কোম্পানি চিটিং-এ ব্যস্ত। আছে হুড়োহুড়ি ড্রাইভিং। অসহনীয় জ্যাম। আছে যেমন ইচ্ছে তেমন ভাড়া নেয়ার আড়ম্বর। আর আপনি একজন নারী হলে পৃথিবীর অধিকাংশ শহরের গণপরিবহনের মতো এখানেও আছে যৌন হেনস্থার ভয়। এশহরে ঘর থেকে বের হওয়া তাই এক ভীতিকর ব্যাপার এখন।

কিন্তু জীবন তো থেমে থাকে না। থেমে নেই এদেশের নারীরাও। নারীরা এখন ঘরে বসে না থেকে ব্যবসা-বানিজ্য, শিক্ষকতা, চাকরীসহ নানাভাবে দেশের উন্নয়নে ভুমিকা রাখছেন। জ্যামে থেমে না থেকে এসব নারীরা বেছে নিচ্ছেন স্কুটি। তাঁরা স্বনির্ভর বাহন হিসেবে স্কুটিকে বেছে নেয়ায় ঢাকার রাস্তায় চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছে স্কুটির পরিমান। বাড়ছে অনন্যা নারীদের স্বনির্ভর এই ছুটে চলা।

ঢাকায় এখন মহিলা বাইক চালকের সংখ্যা পাঁচ শতাধিক বলে জানা গেছে বিভিন্ন বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণা থেকে। নারী বাইক চালকেরা নানারকম ক্লাবও গড়ে তুলছেন। তেমনই একটি ক্লাবের নাম ‘বাংলাদেশ ওম্যান রাইডার্স ক্লাব’।

ক্লাবটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ইশরাত খান মজলিশ। তিনি জানান, নারীদের ব্যাপারে আমাদের সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি ও মানসিকতা এখন অনেক ইতিবাচক। আমাদের ক্লাবের অনেক সদস্যকেই স্কুটি কিনে দিয়েছেন তাঁদের স্বামীরা। রাস্তাঘাটে যানজট ও যানবাহন পাওয়ার দুর্ভোগ থেকে বাঁচতে স্বামীরা এই ইতিবাচক কাজটি করছেন।

ঢাকার নারীদের স্কুটি বা মোটরবাইক চালানোর প্রবণতা বাড়ার ব্যাপারে মোটরবাইকের একটি বড়সড় বিক্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক জাকারিয়া খান জানান, অনেক সময় মেয়েরা দল বেঁধে স্কুটির খবর নিতে, দাম যাচাই করতে আসছে। স্বামীরা স্ত্রীকে নিয়ে আসছে স্কুটি কিনে দিতে।

মজার ব্যাপার হচ্ছে শুধু সাধারণ নারীরা নন ঢাকার রাস্তায় নারী ট্রাফিক সার্জেন্টরাও এখন লাল রঙের স্কুটি চালিয়ে তাঁদের দায়িত্ব পালন করছেন।

রাজধানীতে গণপরিবহন স্বল্পতা ও জ্যামে পুরুষের তুলনায় অনেক বেশি ভুগতে হয় নারীকেই। তাই স্কুটি পরিণত হচ্ছে নারীর ভালোবাসার বাহনে। বিশেষ করে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণী কিংবা চাকরিজীবী নারীদেরকে বাহনটি দিচ্ছে দারুণ স্বস্তি। সাশ্রয় হচ্ছে সময় ও অর্থ।

স্কুটির সুবিধা অনেক

যে গন্তব্যে যেতে ৫০ টাকা রিকশা ভাড়া লাগে, স্কুটিতে সেখানে যেতে লাগে ১০ টাকার তেল। ফলে পাঁচ গুণ কম খরচে অন্তত পাঁচ গুণ দ্রুততায় পৌঁছানো যায়।

স্কুটি তৈরিই হয় হালকা মেটাল দিয়ে। তাই সহজেই ভারসাম্য রক্ষা করা যায় বলে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও থাকে কম। মোটরসাইকেলের চেয়ে স্কুটি চালানোও সহজ। স্কুটির গতি কিছুটা কম। প্রথমদিকে চালানো শেখার জন্য স্কুটির পেছনের চাকার সঙ্গে অতিরিক্ত দুটি চাকা লাগানো থাকে, যা পরে খুলে রাখা যায়। পার্কের সুবিধার্থে রয়েছে ইজি সেন্টার স্ক্যান্ড।

অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানোর জন্য আছে ৯০ মিলিমিটার চওড়া অ্যান্টি স্কিড টায়ার। ব্যাগ অথবা অন্যান্য জিনিসপত্র রাখার জন্য আলাদা চেম্বার আছে।

রং ও ডিজাইনেও যথেষ্ট বৈচিত্র্য আছে। লাল, নীল, সাদা, হলুদ, পিংক ইত্যাদি বিভিন্ন রঙের স্কুটি পাওয়া যায়। চাইলে পেছনে একটা ঝুড়িও সংযুক্ত করে নেয়া যায়।

স্কুটি চালানো শেখাও খুব কঠিন বিষয় নয়। স্কুটিতে অটোগিয়ার থাকে। মোটরসাইকেলের মতো গিয়ার পরিবর্তনের ঝামেলা নেই। দুই হাতে ধরে ভারসাম্য বজায় রাখলেই চলবে। আরেকটা বড় সুবিধা হলো, সিএনজি গ্যাসের জন্য দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করতে হয় না।

স্কুটি চালানো শেখা যাবে যেখানে

ঢাকা শহরে প্রায় সকল ড্রাইভিং স্কুলেই মেয়েদের স্কুটি চালানো শেখানো হয়। কিছু স্কুটি কম্পানিও কাস্টমারদের স্কুটি চালানো শেখায়। বাংলাদেশ উইমেন রাইডারস ক্লাব নামে পুরান ঢাকায় নারী বাইকার নিয়ে একটা ক্লাবও আছে। তারাও স্কুটি চালানো শেখায়।

স্কুটির বাজার দর

হিরো হোন্ডা, টিভিএস, ইয়ামাহা, জিনান, মাহিন্দ্রা, সিঙ্গার, সুজুকি ইত্যাদি ব্র্যান্ডের স্কুটি পাওয়া যায় বাংলাদেশে । তবে টিভিএস, হিরো, জিনান ও সুজুকির চাহিদা বেশি বলে জানা যায়। স্কুটির দাম কোম্পানি ও সিসি’র তারতম্যে কম বেশি হয়ে থাকে। সাধারণত ৫০ থেকে ১৫০ সিসির হয়ে থাকে স্কুটি। দাম ৭৫ হাজার থেকে দুই লাখ টাকার মধ্যে। আর হেলমেটের দাম পড়বে ৫০০ থেকে ৮৫০ টাকা। স্কুটি পাওয়া যাবে রাজধানীর প্রায় সকল বাইকের শো রুমেই।

শেষ কথা

পছন্দের স্কুটিটি কেনার আগে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে তার অ্যাকসেসরিসজগুলো মার্কেটে এভেইলেবল কিনা। হেলমেট কেনার আগে পরে দেখুন আপনার মাথায় ঠিকঠাক খাপ খাচ্ছে কিনা। অবশ্যই খেয়াল রাখবেন হেলমেট যেন হয় মাথা থেকে চোয়াল পর্যন্ত।

রাস্তায় বেরুনোর আগে ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র অবশ্যই সঙ্গে রাখবেন। অস্বস্তি বোধ করেন এমন পোশাক পরে স্কুটিতে চাপবেন না। ওড়না ও শাড়ি পরলে ওড়না ও শাড়ির আঁচল ঠিক করে নিন। শাড়ি বা থ্রিপিসে স্বস্তি না পেলে জিন্স বা গ্যাবার্ডিনের সঙ্গে টি-শার্ট কিংবা ফতুয়া পরতে পারেন।

রাস্তায় অকারণে লেন পরিবর্তন করবেন না। লেন পরিবর্তনের সময় অবশ্যই ভিউ মিররে নজর রাখবেন। মানসিক চাপ নিয়ে স্কুটিতে চাপবেন না। আর অবশ্যই নিরাপদ গতিতে সাবধানে চালাবেন স্কুটি।

আপনাদের যাত্রা শুভ হোক! নিরাপদে, স্বনির্ভর ভাবে আপনারা ছুটে চলুন নির্বিঘ্নে। আপনারা ছুটলেই যে ছুটে চলে দেশ, মাথা তুলে দাঁড়ায় বাংলাদেশ!

/হাসনাত কাদীর

হাসনাত কাদীর,স্কুটি
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close