• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

এফডিসি ভূতের বাড়িতে পরিণত হবে: মাহফুজুর রহমান খান

প্রকাশ:  ২৯ নভেম্বর ২০১৮, ১৬:৩০ | আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০১৮, ১৬:৫০
বিনোদন ডেস্ক

এই কয়েকদিন আগেও বাংলা সিনেমার একমাত্র কারখানা ছিল এফডিসি। কিন্তু গত কয়েক বছরেই আমূল পাল্টে গেছে চিত্র। অধিকাংশ সিনেমার শুটিং হচ্ছে এফডিসির বাইরে। আর এফডিসিতে সেট পড়ছে বিভিন্ন টেলিভিশন প্রোগ্রাম আর রিয়্যালিটি শো’র। এফডিসির চলচ্চিত্র নির্মাতারা ক্যামেরা থেকে শুটিং ফ্লোর, সব ব্যাপারেই এখন এফডিসির বাইরেই যেন স্বস্তি খুঁজতে চাইছেন এখন। কিন্তু নেপথ্য কারণ কী? সিনেমার আবাদ ভূমি কেন দিনদিন পতিত জমিনে পরিণত হতে চলেছে?

নির্মাতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়,এফডিসিতে শুটিং করতে বাইরের থেকে ভাড়া গুনতে হচ্ছে বেশি। এফডিসি ক্যামেরা ভাড়া দেয় শিফট হিসাবে। বাইরে কোন কারণে শুটিং শিফট টাইম অতিক্রম করে গেলে ক্যামেরা রেন্টাল হাউজগুলো সেটা কন্সিডারের দৃষ্টিতে দেখে। কিন্তু এফডিসি এব্যাপারে যথেষ্ট কঠোর।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলম খোকন জানান, ‘এফডিসিতে শুটিংয়ের পরিবেশ আগের মতো নেই। বাইরের প্রোডাকশন হাউজের চে’ তিনগুণ ভাড়া এখানে। বাইরের হাউজ থেকে ক্যামেরা নিলে ঢাকার বাইরের শুটিংয়ে যাওয়া-আসার দুদিনের ভাড়া দিতে হয় না। কিন্তু এফডিসি থেকে ক্যামেরা নিলে যাওয়া-আসার দিনের ভাড়াও দিতে হচ্ছে। মরার উপর খাড়ার ঘা হচ্ছে এ দু’ দিনের শিফটও ধরা হয় বেশি।

খোকন মনে করেন,‘এফডিসির বর্তমান এমডি চলচ্চিত্রের মানুষ না হওয়ায় চলচ্চিত্রের প্রতি তার ভালোবাসাটা ঘাটতি আছে। এমডি এমনও বলেন যে,প্রয়োজন হলে তিনি চলচ্চিত্রের কাজে ইকুয়িপমেন্ট ভাড়াই দেবেন না। বিজ্ঞাপন ও টিভির কাজে ভাড়া দিলেই এফডিসি চলবে।’

এফডিসিতে রেড স্কারলেট ক্যামেরার ভাড়া শিফটে সাড়ে চার হাজার টাকা। এই টাকার মধ্যে ক্যামেরার মূল অংশ,লেন্স ও ট্রাইপডের জন্য আলাদা আলাদা হিসাবে ভাড়া ধরা হয়। একদিনে দুই শিফট হিসেবে এই ক্যামেরার ভাড়া দাঁড়ায় নয় হাজার। তা ছাড়া রাত ১১টার পরে শুটিং করলে প্রতিঘণ্টার জন্য অতিরিক্ত টাকা গুনতে হয়। আর রাত ১১টার পর যদি তিন ঘণ্টা পেরিয়ে যায় তাহলে এক শিফটের ভাড়া সাড়ে চার হাজার টাকা বেশি দিতে হয়। কারো যদি পুরো দিন গড়িয়ে রাত দুটা পর্যন্ত শুটিং চলে তাহলে তার ক্যামেরার ভাড়া পড়ে সাড়ে ১৩ হাজার টাকা। আর বাইরের ক্যামেরা রেন্টাল হাউজগুলো ২৪ ঘণ্টার জন্য রেড স্কারলেট ক্যামেরা ভাড়া দেয় সাড়ে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকায়।

অন্যান্য ক্যামেরার ভাড়াতেও একই রকম ফারাক লক্ষ্য করা যায়। নির্মাতারা তাহলে কেন এফডিসি থেকে ক্যামেরা ভাড়া নেবেন?

এ বিষয়ে এফডিসির সহকারী পরিচালক (শিডিউল) খন্দকার মশিউল আলম বলেন, ‘আমাদের নিয়ম অনুযায়ী যাওয়া-আসার মধ্যে একদিনের ভাড়া ধরা হয়। আর আমাদের হিসাবে রাত ১২টা পাড় হলে নতুন দিন কাউন্ট করা হয়।’

ভাড়ার তুলনামূলক ব্যাবধানের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘বাইরে প্রোডাকশন হাউজগুলো ব্যক্তি মালিকের। মালিক চাইলে কাউকে টাকা ছাড়াও ক্যামেরা দিতে পারেন।’

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত সিনেমাটোগ্রাফার মাহফুজুর রহমান খান মনে করেন,এফডিসির উচিত ভালো ছবি তৈরিতে সাহায্য করা। এফডিসির প্রতিঠাই ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণে সহযোগিতা করার জন্য। অথচ এফডিসির ফোকাস এখন ব্যবসার দিকে। যখন বাইরের হাউজ থেকে সেটাপ নিয়ে শুটিং করি, তখন খরচ অর্ধেক হয়ে যায়। শুটিং করার সময় শিফট ক্রসিঙয়ের দুশ্চিন্তাও করতে হয় না।’ এছাড়া অন্যান্য ঝামেলাও আছে। ধরেন, সূর্যদয়ের একটা শট নেব। কিন্তু এফডিসি থেকে ক্যামেরা নিতে গেলে ক্যামেরা হাতে পাব সকাল ৯টায়। সারাদিন ক্যামেরা নিয়ে ভাড়া গুনতে হবে। পরের দিন ভোরে শট নেওয়ার পর আবারও সকাল ৯টার পর জমা দিতে হবে। তখন ভাড়া গুনতে হবে চার শিফটের। ক্রিয়েটিভ কাজ কি অফিসের সময় ধরে হয়?’

তিনি মনে করেন, এফডিসি পরিচালনায় দায়িত্বে আসলে চলচ্চিত্রের মানুষের থাকা উচিত। যারা চলচ্চিত্রকে ভালোবাসবেন। নির্মাতাদের সুখ-দুঃখ, দরদ বুঝবেন। তা না হলে সেদিন আর বেশি দ্যরে নয়, যেদিন এফডিসি ভূতের বাড়িতে পরিণত হবে। ’

/হাসনাত কাদীর

মাহফুজুর রহমান খান,হাসনাত কাদীর,এফডিসি
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close