শহরে ‘নতুন অতিথি’র কোলাহলে ঘুম ভাঙে
উত্তরের হিমেল হাওয়ার দাপটে পাবনায় বেড়েছে শীতের তীব্রতা। সেই ঠান্ডা উপেক্ষা করে ভোরে কিংবা খুব সকালে ওঠা মানুষের সংখ্যা অনেকটাই কম। তেমনি এক সকালে বের হওয়া নতুন সংবাদের খোঁজে। ইট পাথরের শহরে তখনো শুরু হয়নি যান্ত্রিক কোলাহল। পূব আকাশে কেবল উঁকি মারছে রক্তিম সুর্য।
পাবনা শহরের ময়নামতি এলাকার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠলো জলাশয়ের চারপাশ। উড়াউড়ি, ছুটোছুটি, খুনসুটি আর মনের সুখে সাঁতার খেলায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো এক ঝাঁক পাখি। পাবনা শহরের নতুন অতিথি এখন তারা। অন্য এলাকা থেকে উড়ে আসা এই পাখির নাম পাতি সরালি। অতিথি আগমনের এই মনোরম দৃশ্যের দেখা মিললো পাবনা পৌর শহরের ১২ নং ওয়ার্ডে। আর যান্ত্রিক শহরে এখন এই নতুন অতিথিদের কোলাহলে ঘুম ভাঙে স্থানীয় বাসিন্দাদের।
সম্পর্কিত খবর
মঙ্গলবার ভোরে সরেজমিনে দেখা যায়, ঘনবসতিপূর্ন এলাকার বড় বড় দালান। মাঝে ছোট্ট একটা জলাশয়। কচুরীপানা পুর্ন এই জলাশয়েই নির্ভয়ে ঘুরছে এক ঝাঁক পাখি। কেউ সাঁতার কাটছে, কেউ অন্যের সাথে খুনসুঁটিতে মেতেছে। একটু পর পর কিছু পাখি উড়ে জায়গা পরিবর্তন করছে। সামান্য শব্দ হলেই উড়ে যাচ্ছে দল বেঁধে। ওদের কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত পুরো এলাকা। বাড়ির ছাদ বা বারান্দা থেকেই এলাকাবাসীরা উপভোগ করছেন সেই দৃশ্য।
পাখি দেখতে গিয়ে কথা হয় এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা আব্দুলাহ্ শাফির সাথে। তিনি বলেন, বিভিন্ন এলাকায় অতিথি পাখির সমাগম ঘটলেও পাবনার শহর এলাকায় এবারই প্রথম এদের বিচরণ দেখলাম। শহরের যান্ত্রিক শব্দের বদলে এখন সকালে ঘুমভাঙে ওদের কোলাহলে। ওরা যেন নিরাপদে এখানে থাকতে পারে তার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। পাখি শিকারী বা বাহিরের কারো দ্বারা ওদের যেন কোন ক্ষতি না হয়, সে বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝে সচেতনতা তৈরী হয়েছে।
পাখি পর্যবেক্ষক ও কুষ্টিয়া বার্ডক্লাবের সভাপতি এস আই সোহেল জানান, পাতি সরালি নিশাচর স্বভাবের আবাসিক পাখি। দিনে জলমগ্ন ধানক্ষেত ও বড় জলাশয়ের আশেপাশে দলবদ্ধভাবে জলকেলি আর খুনসুটিতে ব্যস্ত থাকলেও রাতে খাবারের সন্ধানে চরে বেড়ায়। এদের প্রধান খাবার পানিতে থাকা গুল্ম জলজ উদ্ভিদ, নতুন কুঁড়ি, শস্যদানা, ছোট মাছ, ব্যাঙ, শামুক, কেঁচো ইত্যাদি। পাখিটির মাথা, গলা ও বুক বাদামি, কালো পা এবং ঠোঁট ধূসর-কালচে রঙের। পিঠে হালকা বাদামির ওপর নকশা আঁকা ও লেজের তলা সাদা। পুরুষ ও স্ত্রী পাখি দেখতে একই রকম। প্রজনন মৌসুমসহ অন্য সময় এরা জুটি বেঁধে পৃথকভাবে দুর্গম বিল-হাওরে বসবাস করে। তাই শীত ব্যাতিত এদের একত্রে বেশি সংখ্যায় দেখা যায় না। পাতি সরালির ওজন প্রায় ৫০০ গ্রাম, দৈর্ঘ্য ৪৫ সেন্টিমিটার। সাধারণত এদের ডানা ১৮.৭ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ৪ সেন্টিমিটার এবং লেজ ৫.৪ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে।
পাবনা বন্য প্রানী সংরক্ষন আন্দোলন কমিটির আহবায়ক ও আলোকচিত্রী এহসান আলী বিশ্বাস জানান, এই পাখি দেশি প্রজাতীর হলেও পাবনার জন্য তারা অতিথি ও দেশীয় সম্পদ। পাখি শিকারের বিরুদ্ধে সরকারি ও বেসরকারিভাবে প্রচারনা বৃদ্ধির পাশাপাশি আইনের প্রয়োগের মাধ্যমে এই সম্পদ রক্ষা করতে হবে।
এ ব্যাপারে সামাজিক বন বিভাগ পাবনার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘শীতের এই সময়ে পাবনার বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর পরিমানে অতিথি সহ দেশী পাখির বিচরন ঘটে। তাদের নিরাপত্তার জন্য আমরা রাজশাহী বন্যপ্রানী বিভাগ ও পুলিশের সহায়তায় মাঝে মাঝেই শিকার বিরোধী অভিযান পরিচালনা করি। তবে লোকবলের অভাবে এটা সবসময় করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।’
পিবিডি/ হাসনাত