যেভাবে এলো ‘খুশিতে, ঠ্যালায়, ঘোরতে’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম জুড়ে ইদানিং বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে ভালো লাগা আর খুশির জোয়ার দেখা দিয়েছে এবং সেই আনন্দ তারা প্রকাশ করছেন একটি ভাষায়, আর সেটা হল, ‘এই মনে করেন ভাললাগে, খুশিতে, ঠ্যালায়, ঘোরতে’।
হঠাৎ এই সংলাপটি নিয়ে ইন্টারনেট ইউজারদের মধ্যে কেন এতো মাতামাতি? এই লাইনটি এলো কোথা থেকে? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে অনেকের মনে।
সম্পর্কিত খবর
মূলত বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাই টিভির একটি সরাসরি সম্প্রচারিত প্রতিবেদন থেকেই এই লাইনটির সূত্রপাত।
২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় ঢাকা-৫ আসনের দনিয়া একে হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের ভোটের চিত্র নিয়ে খবর সংগ্রহ করছিলেন মাই টিভির সাংবাদিক মাহবুব সৈকত।
লাইভ সম্প্রচারের এক পর্যায়ে তিনি ভোটকেন্দ্রের বাইরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন নারীর কাছে জানতে চান যে তাদের হাতে ভোট দেওয়ার অমোচনীয় কালি দেয়া আছে অর্থাৎ তাদের ভোট দেয়া হয়ে গেছে। তা সত্ত্বেও তারা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে এক নারী তখন বলেছিলেন যে, ‘এই থাকতে মনে করেন। খুশিতে, ঠ্যালায়, ঘোরতে’।
সে সময় এই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কম-বেশি শেয়ার হয়েছে ঠিকই। তবে এবার এই ভিডিওর চাইতে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে, সেই নারী ভোটারের উদ্ধৃতিটি। কয়েকটি মিউজিক্যাল ডাবিং অ্যাপ বিষয়টিকে আরও নজরে আনে।
এ বিষয়ে সাংবাদিক মাহবুব সৈকত জানান, তিনি যখন খবর সংগ্রহের কাজটি করছিলেন তখন তিনি ভাবতেও পারেননি তার এই প্রতিবেদনটির একটি অংশ নিয়ে এতোটা আলোচনা হবে। তাও আবার প্রতিবেদন প্রকাশের পাঁচ বছর পর।
মিস্টার সৈকত বলেন, আসলে যখন আমরা সংবাদ সংগ্রহে যাই তখন আমরা বস্তুনিষ্ঠভাবে খবর সংগ্রহের কাজেই থাকি। এখন পরবর্তীতে এটা নিয়ে আলোচনা হবে কি হবে না সেটা মাথায় থাকে না। তবে রিপোর্টটি নিয়ে এতো বছর পর এইরকম আলোচনা হবে ভাবিনি।
তবে সৈকতের প্রত্যাশা কেউ যেন তার খবরটিকে পক্ষপাতদুষ্ট বা নেতিবাচক না ভাবেন। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, একজন রিপোর্টারের কাজ সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে তাদের কথাগুলোকে সামনে আনা। আমি সেটাই করেছি। এর পেছনে আমার অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল না।
সৈকত বলেন, এখন একেকজন মানুষ বিষয়টিকে একেকভাবে নেবে। তবে আমি আশা করবো আমার রিপোর্টের একটা উদ্ধৃতি নিয়ে হাসি ঠাট্টা যাই হোক, সেটা নিয়ে যেন কোনও পক্ষপাতমূলক বা নেতিবাচক আলোচনা না হয়।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টিকে নিয়ে নানা আঙ্গিকে ট্রল করছেন ইউজাররা। কেউ এ সংক্রান্ত মিম শেয়ার করছেন। কেউবা নিজের ব্যক্তিগত ছবি বা ইভেন্টের বিবরণীতেও এই লাইনটি দিয়ে প্রকাশ করছেন তাদের আনন্দের ভাষা।
অনেকে এই লাইনটিকে ঘিরে ব্যাঙ্গ করতেও ছাড়ছেন না। ফেসবুকে বেশ কয়েকজনকে দেখা যায়, সমাজে প্রচলিত বা অযাচিত কিছু প্রশ্ন লিখে, উত্তর হিসেবে তুলে ধরছেন এই লাইনটি। ঠিক যেমনটা জাফরিন হক করেছেন, মার্কেটিং জবে তো প্রচুর ট্রাভেল করতে হয়, তুমি মেয়ে হয়ে মার্কেটিংয়ে জব করো কেন? এ.এ এ.. মনে করেন, খুশিতে, ঠ্যালায়, ঘোরতে।
অন্যদিকে জি সন বিশ্বাস নামে আরেক ইউজার লিখেছেন,
"When someone asks me:
-ঢাকায় এতো জায়গা থাকতে মিরপুরে থাকেন কেন? "এই মিরপুরে থাকতে মনে করেন ভাল্লাগে। খুশিতে, ঠেলায়, ঘোরতে"।
এমনই আরও নানা আঙ্গিকের প্রশ্ন-উত্তর, বা পোস্টে এই একটি উদ্ধৃতিকে ঘিরে চলছে ঠাট্টা ও আলোচনা।
সূত্র: বিবিসি বাংলা।
/পিবিডি/একে