• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

একুশে পদক পাচ্ছেন ভাষাসৈনিক অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু

প্রকাশ:  ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৮:৩২ | আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৯:০৭
নিজস্ব প্রতিবেদক

ভাষা আন্দোলনে অবদান রাখায় একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু।

বুধবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো. ফয়জুর রহমান ফারুকী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পদকপ্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। চলতি বছর ভাষা, শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে একুশে পদক পাচ্ছেন ২১ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে পদকপ্রাপ্তদের হাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একুশে পদক তুলে দেবেন।

প্রবীণ আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক গোলাম আরিফ টিপু ১৯৩১ সালের ২৮ আগস্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জের কমলাকান্তপুরের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

ছয় বোন তিন ভাইয়ের মধ্যে টিপু বাবা-মার দ্বিতীয় সন্তান। রাজশাহী কলেজে পড়ার সময় তিনি বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন এবং কারাভোগ করেন।

তিনি ছিলেন রাজশাহী ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক। ছাত্রজীবন থেকেই বামপন্থি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ছাত্র রাজনীতির পাশাপাশি দেশের ফুটবল মাঠে একই সময় জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে আরো সক্রিয় হন। পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম গোলাম আরিফ টিপু ১৯৫৩ সালে ভাষাসৈনিক সভাপতি আবদুল মতিনের সঙ্গে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

সে সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা দলের জনপ্রিয় ফুটবলার ছিলেন। আন্দোলন-সংগ্রামের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম ব্যাচে ভর্তি হন এবং আইনে স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি লাভ করেন।

বাবা আফতাব উদ্দিন আহমদ জেলা রেজিস্ট্রার পদে সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে গেলে আইন পেশায় যোগ দিয়ে পরিবারের হাল ধরেন টিপু। রাজশাহী আইনজীবী সমিতির একাধিকবার সভাপতি নির্বাচিত হন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য নির্বাচিত হন কয়েকবার। বার কাউন্সিলেরও সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন একাধিকবার।

ছাত্রজীবন থেকেই রাজশাহী হয়ে ওঠে তার রাজনীতির তীর্থস্থান। মস্কোপন্থি ন্যাপ রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় থেকে নব্বইয়োত্তর সময়ে রাজনীতি থেকে অবসর নেন।

তবে, গণমানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছাড়েননি কখনো। স্থানীয় ও জাতীয় সব ইস্যুতে তিনিই সর্বজনশ্রদ্ধেয় হিসেবে সামনের কাতারে থেকেছেন। জীবনে বহুবার নানা প্রলোভন উপেক্ষা করেছেন। নিরহঙ্কারী, নির্লোভ, সৎ, সাদামাটা জীবনের অধিকারী গোলাম আরিফ টিপু আদর্শচ্যুত হননি।

বহুল আলোচিত নীহারবানু হত্যা মামলায় ডিফেন্স কৌঁসুলি হিসেবে তার সুনাম ৭০’এর দশকে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। উত্তরবঙ্গসহ সারা দেশে অসংখ্য মামলায় তিনি ডিফেন্স কৌঁসুলি হিসেবে ভূমিকা রাখেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিবির হত্যা মামলায় ১৬০ ছাত্রনেতার হয়ে লড়ে খালাস করান।

জীবনে অনেক রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও গরিব মানুষের মামলা বিনা পারিশ্রমিকে করেছেন। মেজর জেনারেল মঞ্জু হত্যা মামলা এবং ওয়ান-ইলেভেনে আটক আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিফেন্স কৌঁসুলি হিসেবে তার যুক্তিতর্ক, বক্তব্য আদালতে উপস্থিত সবাইকে মুগ্ধ করে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র বিক্ষোভে আটক শিক্ষক-ছাত্রদের হয়েও আইনি লড়াই করেছেন এ ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ।

৫৯’এ চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহারাজপুর চৌধুরীবাড়ির ডা. আবুল হোসেন চৌধুরীর বড় মেয়ে জাহানারা চৌধুরী লুইয়ের সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন খ্যাতিমান আইনজীবী গোলাম আরিফ টিপু। চার কন্যা, এক পুত্র ও নাতি-নাতনি নিয়ে তাদের বিবাহিত জীবন অর্ধশতক পেরিয়েছে। আইনি পেশায়ও ৫০ বছর পার করেছেন বেশ আগে।

এখনো তারুণ্যের উদ্যম নিয়ে রাত জেগে বই পড়েন। মামলার নথি ঘাঁটেন। ক্লান্তি তাকে স্পর্শ করে না। আজীবন প্রচারবিমুখ, নিভৃতচারী গোলাম আরিফ টিপু দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অগ্রভাগে থেকেছেন। টিআইবির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন এক সময়।

পিবিডি/আরিফ

গোলাম আরিফ টিপু
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close