• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

মঙ্গলে এবার ‌‘জোকার’ পাঠাবে নাসা!

প্রকাশ:  ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৫:২৭
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

মঙ্গল গ্রহের সাথে পৃথিবীর তুলনামূলক মিল থাকায় মঙ্গল গ্রহে জীবন খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা জ্যোতির্জীববিজ্ঞানে অত্যন্ত আগ্রহের একটি বিষয়। এখন অব্দি অবশ্য মঙ্গল গ্রহে কোন জীবনের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অবশ্য ক্রমবর্ধিষ্ণু একাধিক প্রমাণ ইঙ্গিত দেয় যে, প্রাচীনকালে এই গ্রহে তরল পানির উপস্থিতি ছিল। যা গ্রহটিতে আণবিক জীবন থাকার সম্ভাব্যতাকে বাড়িয়ে দেয়। আবিষ্কারের পর থেকেই গ্রহটি নিয়ে গবেষনা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

এবার ‘লাল গ্রহ’ মঙ্গলেও দেখা যেতে পারে জোকার বা ক্লাউন! যাঁদের পায়ে থাকবে ঢাউস জুতো। লাল টুকটুকে তার রং। নাকটা হবে অসম্ভব রকমের লম্বাটে। তারও রংটা হবে লাল। সেই জোকারকে দারুণ দারুণ স্মার্ট হতে হবে। হতে হবে খুব বলিয়ে-কইয়ে। মুখ থেকে তার যে শব্দটা খসবে, তাতেই যেন হেসে গড়িয়ে পড়েন সকলে। যদিও গড়িয়ে পড়াটা যাবে না। কারণ, মহাকাশে মাইক্রোগ্র্যাভিটির প্রায় শূন্য অভিকর্ষ বলে যে ইচ্ছে হলেও নীচে গড়িয়ে পড়া যায় না!

সম্পর্কিত খবর

    ভিন গ্রহের ভিন মুলুকে এমন জোকারই পাঠানোর কথা ভাবছেন বিজ্ঞানীরা। মহাকাশযাত্রীদের উদ্বেগ, উত্তেজনা কমাতে তাদের আনন্দে ভুলিয়ে রাখতে। তারা খতিয়ে দেখছেন, টানা ১ বা ২ মাস মঙ্গলে থাকার ক্ষেত্রে জোকারদের ভূমিকা কতটা কার্যকরী হতে পারে মহাকাশচারীদের ক্ষেত্রে। আর ৯/১০ বছরের মধ্যে মঙ্গলে প্রথম মহাকাশচারী পাঠাবে নাসা। তাদের টার্গেট ২০২৮ সাল। তা ২০২৩ সালেও হতে পারে। জোর প্রস্তুতি চলছে যার গত এক দশক ধরেই।

    কী করবেন জোকাররা?

    কিন্তু মঙ্গলের মতো একটা রুখুসুখ পাথুরে গ্রহে পা ছোঁয়ানোর বিপদ তো কম নয়। মারাত্মক তেজস্ক্রিয় বিকিরণের ঝড়-ঝাপটা সইতে হবে মহাকাশচারীদের। আছে যেকোনো সময় গ্রহাণু বা উল্কার আছড়ে পড়ার জোরালো শঙ্কাও। সেই উদ্বেগ থেকে মহাকাশচারীদের যতটা সম্ভব দূরে সরিয়ে রাখতেই মঙ্গলে মহাকাশচারীদের সঙ্গে একজন জোকার বা ক্লাউন পাঠানোর খুব প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

    নাসা এ ব্যাপারে যাদের গবেষণা চালানোর দায়িত্ব দিয়েছে, তাদের অন্যতম ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ববিদ জেফ্রি জনসন বলছেন, একমাত্র জোকার বা ক্লাউনরাই পারেন আনন্দের মাধ্যমে মহাকাশচারীদের সব রকমের চিন্তা কাটিয়ে দিতে। চারপাশ বন্ধ, এমন একটা জায়গায় একটানা দীর্ঘদিন থাকতে হলে চিন্তা, ক্লান্তি, মানসিক অবসাদ আসবেই। যা মহাকাশে আরও বিপজ্জনক মহাকাশচারীদের পক্ষে। কারণ, ক্ষিপ্রতাই তাদের সবচেয়ে বড় গুণ। যা ক্লান্তি, অবসাদ, চিন্তা কমে যেতে বাধ্য। একমাত্র জোকাররাই তা কমাতে পারেন।

    কেন জোকার লাগেনি আর্মস্ট্রং-অলড্রিনদের?

    নীল আর্মস্ট্রং ও বাজ অলড্রিন যখন হেঁটেছিলেন চাঁদে, আজ থেকে ৫০ বছর আগে সেই ‘অ্যাপোলো-১১’ অভিযানে, তখন কেন প্রয়োজন হয়নি জোকারের? তার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জনসন ও অন্য বিজ্ঞানীরা বলেছেন, তখন চাঁদে নেমে তাদের দীর্ঘদিন ধরে জটিল কাজকর্ম করতে হয়নি। পতাকা পুঁতেছিলেন, চাঁদের মাটির কিছু অংশ তুলে এনেছিলেন আর হেঁটেছিলেন কিছুটা পথ চাঁদের বুকে, কার্যত ভেসে ভেসে। ছিলেন পাইলট মাইকেল কলিন্সও। তারা চাঁদের মাটিতে কাটিয়েছিলেন বড়জোর সাড়ে ২১ ঘণ্টা।

    কিন্তু মঙ্গলে এবার যে মহাকাশচারীরা যাবেন, তাদের অনেক জটিল কাজ করতে হবে। আগামী ৪০/৫০ বছরের মধ্যে লাল গ্রহে ‘মানবসভ্যতার দ্বিতীয় উপনিবেশ’ গড়ে তুলতে মঙ্গলের প্রকৃতি-পরিবেশের সঙ্গে কীভাবে কতোটা মানিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন, নানা রকমের তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ও প্রতিকূলতা সত্ত্বেও মঙ্গলের কোনো অংশে সভ্যতার পক্ষে দীর্ঘ সময় টিঁকে থাকা সম্ভব হবে, হাতেকলমে এবার তার পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করতে হবে মহাকাশচারীদের। লাল গ্রহের নির্বান্ধব (খুব বেশি হলে যাবেন তিন মহাকাশচারী) এলাকায় দিনের পর দিন কাটিয়ে সেই জটিলতম গবেষণা করতে করতে মহাকাশচারীরা যখন ক্লান্ত হয়ে পড়বেন, তখনই প্রয়োজন হবে চৌকস ক্লাউনদের। ২০৩৩ সালের মধ্যেই মঙ্গলে মানবসভ্যতার দ্বিতীয় উপনিবেশ গড়ে তোলার টার্গেট নাসার।

    জোকার-গল্পকার-শিল্পীরা থাকেন আন্টার্কটিকার অভিযাত্রীদলে

    জনসন নিজে টানা ৪ বছর কাটিয়েছেন আন্টার্কটিকায়। তাই বুঝেছেন এমন ধরণের অভিযাত্রীদলে কতটা প্রয়োজন জোকার বা ক্লাউনদের। কতোটা প্রয়োজন মানসিক চিকিৎসকের, কাউন্সিলরের। কতোটা প্রয়োজন শিল্পী, সাহিত্যিক, গল্পকারের। আন্টার্কটিকায় যাওয়া রুশ, মার্কিন, পোলিশ ও ভারতীয়, সবকয়টি অভিযাত্রীদলেই অন্তত একজন করে জোকার, মানসিক চিকিৎসক বা গল্পকার থাকে বা এখনও রয়েছে বলে জানিয়েছেন জনসন।

    মঙ্গলযাত্রাও তো কম ক্লান্তিকর নয়!

    খুব কাছের রুট ধরে এগলে পৃথিবী থেকে মঙ্গলের দূরত্ব ১৪ কোটি কিলোমিটার। যা পাড়ি দিতে এখনকার মহাকাশযানগুলোর লাগে কম করে ৭ থেকে ৮ মাস সময়। মহাকাশের আবহাওয়ার কারণে তা ৯ মাসও হয়ে যেতে পারে। শুধু যেতেই লাগে প্রায় একটা বছর। ফিরতেও একই সময়। যেতে-আসতে যোগাযোগের কম্যান্ড আদানপ্রদানের জন্য লাগতে পারে আরও ২০ মিনিট করে সময়।

    নাসা একটি গবেষণায় দেখেছে, যেতে-আসতে ৫০ সেকেন্ড দেরি হলেই অবসাদ, উদ্বেগের মাত্রা কতটা বেড়ে যায় মহাকাশচারীদের।

    /অ-ভি

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close