চুড়িহাট্টার আগুন নিয়ে সরকারের নানা সংস্থার নানা মত
চকবাজারের শাহী মসজিদে শুক্রবার জুমার নামাজের পর পাশের চুড়িহাট্টা এলাকায় আগুনে পুড়ে মারা যাওয়াদের জন্য বিশেষ মোনাজাত করা হয়। আশেপাশের অনেক মহল্লা থেকেও মানুষজন এসেছিলেন মোনাজাতে অংশ নিতে। এসময় আগুনের সুত্রপাত ও অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়া নিয়েও এলাকাবাসি কথা বলে। খবর বিবিসি বাংলার।
শাহী মসজিদের আশেপাশে আসগর লেন, নবকুমার দত্ত রোড ও হায়দার বক্স লেনের বাসিন্দারাই মূলত ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। মোনাজাতে দুহাত তুলে অনেকেই নিহতদের জন্য কান্নায় ভেঙে পড়েন। দূরে দাঁড়িয়ে কোন নারীও মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন। এদের একজন লালবাগের বাসিন্দা নূরজাহান বেগম।
সম্পর্কিত খবর
"কতডি বাড়িঘর জ্বইলা গেছে। কতডি মানুষ জ্বইলা গেছে। এটার জন্য দু:খ," বলছিলেন নূরজাহান বেগম।
কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হলো এবং সেটি কীভাবেই বা এতো দ্রুত ছড়িয়ে গেলো সেটি নিয়ে চলছে এখন নানা আলোচনা।
চকবাজারে আগুন কেন এতো ভয়াবহ রূপ ধারণ করলো সেটি নিয়ে ভিন্ন-ভিন্ন ভাষ্য পাওয়া যাচ্ছে।
শিল্প মন্ত্রণালয় বলছে, সে এলাকায় কেমিকেল পদার্থের কোন গুদাম ছিল না। অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিসের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাসায়নিক পদার্থের কারণেই আগুন সর্বগ্রাসী রূপ নিয়েছে।
চকবাজার এবং তার আশপাশের এলাকায় এখন এক ধরনের কথা শোনা যাচ্ছে যে এ অগ্নিকাণ্ডের সাথে রাসায়নিক পদার্থের গুদামের কোন সম্পর্ক নেই।কারণ ঐ অগ্নিকাণ্ডের সাথে রাসায়নিক পদার্থের সম্পর্ক আছে সেটি দেখাতে চান না অনেক বাড়ির মালিক এবং ব্যবসায়ী।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি বলেছে, আশেপাশে কেমিকেলের কোন কারখানা বা গোডাউন ছিল না। কেউ কেউ সে কথা বিশ্বাসও করতে শুরু করেছেন।
শিল্প মন্ত্রণালয় যখন বলেছে যে আশপাশে কেমিকেলের কোন কারখানা বা গোডাউন ছিল না, তখন অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ওয়াহিদ ম্যানসনের ভূগর্ভস্থ পার্কিংয়ে গিয়ে দেখা যায়, নানা ধরণের রাসায়নিক পদার্থের বিশাল মজুত।
আগুন নিচের দিকে না গিয়ে সোজা উপরের দিকে উঠে যায়। এমনটাই বলছে ফায়ার ব্রিগেড। এর পরিণাম আরো ভয়াবহ হতে পারতো।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, তাদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ভবনটিতে রাসায়নিক পদার্থ থাকার কারণের আগুন এতোটা ভয়াবহ হয়েছে।
ভবন পরিদর্শনের পর সে কথাই বলছিলেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক লে. কর্নেল জুলফিকার রহমান।
"আমরা জেনেছি যে লাইটার রিফিল করার ক্যানগুলো সেখানে ছিল। উপরে আমি দেখলাম যে ইনসুলেশন টেপগুলো আছে, এগুলো কেমিকেলই অবশ্যই," বলছিলেন মি: রহমান।
তিনি বলেন, রাসায়নিক পদার্থ থাকার কারণে আগুন বেশ দ্রুত ছড়িয়েছে। এছাড়া আগুনের তীব্রতাও ছিল বেশি।
এ ঘটনার পর তদন্ত কমিটি গঠনের যেন শেষ নেই। অন্তত ছয়টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বিভিন্ন সংস্থার তরফ থেকে।
এগুলোর মধ্যে রয়েছে, শিল্প মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিস্ফোরক পরিদপ্তর, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন।
অতীতের বিভিন্ন অগ্নিকাণ্ডের পর নানা কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে পরিস্থিতির কোন বদল হয়নি বলে মনে করেন পরিবেশবাদী আইনজীবী সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান।
"ঘটনার পুনরাবৃত্তি বাংলাদেশে নতুন কিছু না। ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েই চলেছে কিন্তু কিছু হচ্ছে না।"
"আমি বলবো এটা হচ্ছে লোভ সংবরণ করতে না পারা। অতিরিক্ত মুনাফা করার লোভ মানুষের। আর এই লোভটাকেও রাজনৈতিকভাবে সংবরণ করতে না পারা," বলছিলেন রেজওয়ানা হাসান। এদিকে পুলিশ বলছে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এরই মধ্যে একটি মামলা হয়েছে।
ঐ মামলার তদন্তের মাধ্যমে ভবনের মালিক কিংবা কেমিকেল ব্যবসায়ী - কার দায় কতটুকু সেটি নিরূপণ করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
যদিও শেষ পর্যন্ত কাজ হবে কিনা সেটি নিয়ে অনেকের মনেই যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
এনই