পদ আছে তো সব আছে, পদে নেই কিছুই নেই

পদ আছে তো সব আছে, পদে নেই কিছুই নেই। আহা রাজনীতি! শ্রদ্ধা-ভক্তি-মান্যতার সংস্কৃতি কতো আগ থেকেই উধাও! দেখছি, শুনছি, মানছি কেবল বদলের বাহক হয়ে। বদলাতে বদলাতে কবে থেকে যে বলদ, বলাও মুশকিল!
অনুষ্ঠানমঞ্চে অতিথি সাজানো হয় গুরুজন নয়, গলার মাল্য দেখে। মন্ত্র সেই ইংরেজ জামানায় শেখানো আমলাতন্ত্র। এর মধ্যে কোনো ব্যতিক্রম হলে ঘটে লংকাকাণ্ড। অতিথি বা বক্তার আগে-পরের ক্রমিক না মানলে অনুষ্ঠান পণ্ড করে দেওয়া হয়। এই লাইভ যুগে এ সবই ভাইরাল-মশলা!
সম্পর্কিত খবর
১০ নভেম্বর ছিলো গণমানুষের নেতা বরুণ রায়ের জন্মশত বার্ষিকের সমাপনী অনুষ্ঠান। সুনামগঞ্জে বছরব্যাপী আয়োজনের শেষ পর্ব। ‘বরণীয় বরুণ রায়’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন আনুষ্ঠানিকতা শেষে অতিথিদের বক্তব্য চলছিলো। মঞ্চে অতিথির আসনে বসা স্থানীয় সাংসদ পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ।
ঘোষক প্রথা অনুযায়ী সাংসদকে প্রধান অতিথি বিবেচনায় রেখে বক্তৃতার ঘোষণা দেন। থামিয়ে দেন সাংসদ। আগে বক্তৃতা দিতে চান। সবাই ভেবেছিলেন সাংসদের বোধহয় তাড়া আছে। এ জন্য আগে বক্তব্য দেওয়া। না, পেছনে ছিলো রাজনৈতিক মান্যতা। ঘোষককে থামিয়ে দিয়ে আগে বক্তৃতা দেওয়া প্রসঙ্গটি সাংসদ তার বক্তব্যের একদম শেষে বলেছেন।
সাংসদ বলেন, ‘যে মঞ্চে ডাকসুর সাবেক ভিপি, সিপিবির সাবেক সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধে গেরিলা যোদ্ধা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের মতো জাতীয় নেতা বসা, সেখানে একজন সাংসদ পীর ফজলুর রহমান প্রধান অতিথি মানায় না!...’
রাজনৈতিক মান্যতার সংস্কৃতিতে কী বিরল দৃশ্য! ভালোর এই দৃশ্যপট ভাইরাল হয়নি, আলাদা করে কোনো রিপোর্টও চোখে পড়েনি। এই মান্যতা মহান করেছে সাংসদকে। বরুণ রায়ের জন্ম শতবর্ষের অনুষ্ঠানটিও পেলো অন্য এক মাহাত্ম্য।
একজন বটবৃক্ষ বরুণ রায়ের শেষবেলার সঙ্গী ছিলাম আমরা। পদ-পদবি দেখে মান্য করার প্রবণতায় এক বরুণ রায়কে সর্বজন শ্রদ্ধেয় বলে উঁচুতে রাখার চেষ্টা ছিলো। সেই চেষ্টা-প্রচেষ্টার ধারায় সাংসদ পীর মিসবাহ'র মান্যতা মোটেও ছোটখাটো নয়। শতবর্ষে, শ্রেষ্ঠ এক উপহার।
লেখকের ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম