• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

স্যার মেয়েটা যদি ওই সময়ই মারা যেত তবে অনেকটা বেঁচে যেতাম

প্রকাশ:  ১০ আগস্ট ২০১৮, ১৬:১৪
কাজী ওয়াজেদ

সু-মেকার (চর্মকার) টি খুব দুঃখ করে বললো “স্যার আমার মেয়েটা যদি ওই সময়ই মারা যেত তবে আমি অনেকটা বেঁচে যেতাম”। নিজের মেয়ের মৃত্যু চাওয়ার অমন কুলক্ষনে কথা শুনে খুবই খারাপ লাগলো।

বললাম, তা কেনো রে!

সম্পর্কিত খবর

    বললো স্যার, “মেয়েটাতো মরেই গেল, যাবার আগে আমাকেও মেরে গেল”।

    ডিউটির ফাঁকেই যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় ফ্লাইওভারের নিচে জুতা কালি করানোর সময় ওর সাথে গল্প। কাজ শেষে প্রতিদিন থানায় মালামাল রেখে যাওয়া এই চর্মকারের কথাগুলো খুব ভাবালো।

    বললাম, সংসারের খবর কি? আর আয় রুজি কেমন?

    ও বললো স্যার, ইনকাম যা ছিল ভালই চলতাম। কিন্তু দুবছর আগের এক দুর্ঘটনায় সংসারটা তছনছ হয়ে গেল। মেয়েটা হঠাৎ ছয়তলা থেকে পড়ে গেল। এগারো দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল।

    দীর্ঘদিন যাবত অনেক কষ্টে গচ্ছিত নিজের কিছু টাকা আর মানুষের কাছ থেকে চেয়ে চিন্তে নেয়া এক লক্ষ ছিয়াশি হাজার টাকা খরচ করেও মৃত্যুর হাত থেকে মেয়েটিকে বাঁচাতে পারেনি বলে তার আফসোস! মারাত্মক জখম অবস্থায় এগারো দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে আদরের মেয়েটি তার আত্মসমর্পণ করলো শেষ পরিণতির কাছে!

    তার কথা, বাঁচবেই না যখন, তখন আর এত টাকা খরচ কেন?

    বুঝলাম, নিজ পরমাত্মার মৃত্যু কখনো কারো কাছে কামনাও হতে পারে। বড় আদরের ধন নিজ সন্তানও অনিচ্ছা সত্ত্বেও কখনো...। দারিদ্র্য কখনো মানুষের সত্ত্বাকেও বিসর্জন দিতে কুন্ঠাবোধ করে না। অভাব কখনো মানুষকে বাস্তবতায় নামিয়ে আনলে তার তাড়নায় অনিচ্ছাসত্ত্বেও মানুষ হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে। বেসামাল আর অপ্রস্তুত হয়ে মানুষ কামনা করে কুলক্ষনে কিছু!

    লেখক: ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, যাত্রাবাড়ি থানা, ডিএমপি। (ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

    আপনার মন্তব্য

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close