আমার প্রথম ভ্যালেন্টাইন
তিন বছরেরও বেশি সময় ভালোবাসা নীরবেই ছিল। এক তরফা ভালোবাসায় সরব হলে আত্মসম্মানে লাগে। তবে আওয়াজ ছিল, ক্লাসে - আড্ডার সার্কেলে- আশেপাশের সবাই জানতো আমি নূপুরকে ভালোবাসি। কিন্তু মুখ ফুটে ওকে বলা হয়নি। ঐ যে আত্মসম্মানের ভয়। যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়।
যেখানে বাঘের ভয় সেইখানেই রাত হয়। আবার সাহস না করলে জীবনে কিছু হয়ও না। ১৯৯৯ সালের ঘটনা। ভ্যালেন্টাইন ডে মাথায় রেখে ১৩ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় সাহস করে প্রথমবারের মতো বাসার নাম্বারে ফোন। নাম গোপন রাখার শর্তে বন্ধু কালা কামরুলের কাছ থেকে নাম্বার নিয়েছিলাম। অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর দেয়ার পর নূপুরকে ডেকে দেয়া হলো। অবশ্যই উত্তরগুলো ছিল পড়াশোনা সংক্রান্ত বিষয়। ফোন হস্তান্তরিত হবার পর সরাসরি পরের দিন ১৪ ফেব্রুয়ারি ক্লাসের একঘন্টা আগে ক্যাম্পাসে আসতে বললাম। কথার মধ্যে কোনো ভূমিকা, উপসংহার কিছুই ছিলোনা। আমি এখনো ওই রকমই, ভূমিকা থাকেনা। উত্তর যা আসার তাই। আসা যাবেনা, কালই কেন আসতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি বলে ফোন রেখে দিলো।
সম্পর্কিত খবর
আমি সবসময় আশাবাদী মানুষ। “না” শোনার পরও হাতিরপুল গিয়ে আর্চিস গ্যালারি থেকে একটি কার্ড, চুরাশিয়া’র বাঁশি’র সিডি কিনলাম আর নিউ মার্কেট থেকে একজোড়া নুপুর কিনলাম। সকালে গিয়ে কলাভবনের গেইটে বসে থাকলাম, কেন জানি মনে হচ্ছিলো আসবে। সাদা জামায় লাল ওড়না জড়িয়ে সময় মতোই এসেছিলো। এসেই সরাসরি জিজ্ঞাসা’ বলো, কি বলবা। একটু হেটে আইবিএ ভবনের মাঠে গিয়ে বসলাম। এক মিনিটে আমার ভ্যালেন্টাইন গিফট দেয়া ও জরুরি কথা বলা শেষ। কথাগুলো ছিল এইরকম- দ্যাখো, আমি যে তোমাকে পছন্দ করি এটা সবাই জানে। এখন বাকিটা তোমার উপর।”
আমার এখনো মনে হয়, ভ্যালেন্টাইন ডে’তে এতো কাটখোট্টা এবং আনরোমান্টিক এপ্রোচ ইতিহাসে কেউ করেনি। আমার এই এপ্রোচের উত্তর ছিল “সম্ভব না”। অসম্মানিত যাতে না হই, তাই হয়তো চলে যাবার সময় “পায়ের” নুপুরসহ ছোট ভ্যালেন্টাইন গিফটগুলো সাথে করে নিয়ে গিয়েছিলো। আমি যেখানেই শুনি “সম্ভব না” , সেইখানেই খুঁজি “সম্ভাবনা”। তাই ওই ভ্যালেন্টাইন ডে’তেই আমি পায়ের জিনিস বুকে নিয়েছিলাম।এখনো সযতনে সেখানেই আছে... My life , My inspiration।
প্রশ্ন জাগতে পারে এরপর ক্যামনে কি হলো। ওই ভ্যালেন্টাইন ডে’র পর আমাদের মধ্যে কোনো কথা হয়নি অনেকদিন। তাকালেও আড় চোখে। ছয় মাস পর একদিন আমার মোবাইলে ওই ল্যান্ড নাম্বার থেকে ফোন। ধরবোনা ধরবোনা করেও ধরেছি। প্রস্তাব এলো কাল দেখা করতে হবে। তবে কাউকে সাথে রাখা যাবেনা। পরদিন দেখা হবার পর কিচ্ছুক্ষন জীবনের বাস্তবতার কথা শুনলাম। এরপর সেই কাঙ্খিত উত্তর,” আমি রাজি আছি”। আবারো বুঝলাম, চাওয়ার মতো চাইলে খোদা নিরাশ করে না। সেই থেকে একসাথে পথচলা ...
“ভাসিয়ে দিলাম প্রেমের সাম্পান তোরই বন্দরে
যতন করে রাখিসরে তুই বুকের পিঞ্জরে”লেখক: প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব
পিবিডি/এসএম