• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

এত অভিমান আর দুঃখ নিয়ে মরে গেলেন রাজা ভাই!

প্রকাশ:  ১৭ মার্চ ২০১৯, ২০:১২ | আপডেট : ১৭ মার্চ ২০১৯, ২১:৪৫
ফারুক সাদিক

গত ৪ বছর ধরে সীমাহীন অনটনে, ঋণে জর্জরিত হয়ে, চাকরিহারা হয়ে এক নিষ্ঠুর সময় যাচ্ছিলো শফিউল আলম রাজার।এই ঘোর দুঃসময়ে আমাদের মত যারা অনুজ ছিলাম- আমাদেরকে আকড়ে ধরে বাঁচতে চেষ্টা করছিলেন, সবকিছু ভুলে।এই বিরুদ্ধ সময়েও একটা স্কুল খুলেছিলেন, একবুক স্বপ্ন ছিলো সে স্কুলকে ঘিরেই।কাজ সেরে যদি কোনওদিন উনার অফিসে যেতাম- আগের রাতের বুয়ার রাখা ভাত দুই ভাই ভাগ করে খেতাম।

রাজা ভাইর দুঃসময় শুরু হইছিলো মুলত দৈনিক যূগান্তরের চাকরিটা যাবার পরে। পথে বসে গেছিলেন। আড়াই বছর একটানা চাকরি ছাড়া খালি গান গেয়ে যে দুইপয়সা পেতেন- তাই দিয়ে সংসার চালানো।এই হাল টানতে টানতে দেনায় ডুবে গেছিলেন। আমাদের যাকেই পেয়েছেন কাছে- অনেক যন্ত্রণার পাশাপাশি ভাওয়াইয়া গান নিয়েও তাঁর যন্ত্রণার কথা বলতেন, অবশ্য তার সবটার সাথে একমত হতে পারিনাই সবসময়।

সম্পর্কিত খবর

    দুর্দিন একটা সময়ে ভাবলাম কেটেই গেলো রাজা ভাইর। প্রিয় ডট কম এ একটা চাকরিও হয়ে গেলো।খুব বেশী না হইলেও টিকে থাকার মত বেতন।ধীরে ধীরে ধারদেনা শোধ করে চলে যাচ্ছে। এইরকম খবরে কিছুটা আশ্বস্ত হইতে না হইতেই শুনলাম ভাবী উনার সাথে বিচ্ছেদ নিয়েছেন। একা না, দুই ছেলেমেয়েকেও নিয়ে নিয়েছেন। রাজাভাই খুব দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলতেন- মেয়েটা তাও খোজ করে, মাঝেমধ্যে আসে। কিন্তু ছেলেটা আসেনা। আসতে দেয়না।

    ভাবী কেন বিচ্ছেদ নিয়েছিলেন যে কথা কখনও বলেন নাই রাজা ভাই। খালি বলতেন, পরে শুনিও একদিন।এখন তোমার সময় নাই, অন্য কথা বলি!

    সে বিচ্ছেদের পরে রাজা ভাই একলা থাকতেন।উনার স্বপ্নের স্কুলে। আমি কখনও রাতে গেলে খুব জোর করতেন থেকে যাবার জন্যে। রাজা ভাইর হয়ত একলা থাকতে ভয় করত।মুখে বলতেন না।কিন্তু খুব চাইতেন যেন থেকে যাই। আমি নানান কারণে কোনওদিনই থাকতে পারিনাই।একলা থেকে প্রিয় ডট কমে অফিস করে এতদিন অনেকটাই চিয়ার্ড থাকতেন। হঠাৎ কিছুদিন আগে সে চাকরিটাও গেলো। আবার চাকরি নাই, আবার একলা থাকা। সন্তানদের মুখ দেখতে না পারা।

    এমন একলা থাকতে থাকতে রাজা ভাইর কষ্ট হইতো। টাকা দিয়ে যার গান শুনতে হয়- তিনি মাঝরাতে হুটহাট হারমোনিয়াম ধরে ফেইসবুক লাইভে গাইতে আসতেন, অনাহুতভাবে। কী ভীষণ একাকীত্বে তিনি ভূগতেন- কেবল ভাবতাম। মানবসঙ্গের জন্যে কত আকুলতা, একটু মানুষের কন্ঠস্বর শোনার জন্যে মাঝরাতে একা একটা ঘরে চুড়ান্ত রকমের একা একজন মানুষের এই ব্যকুলতা একটা সময় রাজা ভাইর জন্যে আমার একধরণের স্নেহবোধ কাজ করতো।

    এইভাবে একলা একটা ঘরে, আড়াই কোটি মানুষের একটা শহরে চুপচাপ মরে পড়ে থাকলেন রাজা ভাই। এইরকম একটা রাতের ভয়েই কি? জানিনা। এমন দিনে মরে গেলেন- যখন আমি সে শহরে নাই।

    মোক মাপ দ্যান আজা ভাই। মুই সৌগসমে তোমার গোরত খাড়া হবার পাং নাই।

    লেখক- অনলাইন এক্টিভিস্ট

    শফিউল আলম রাজা
    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close