বিশ্বকাপে অভিজ্ঞতায় এগিয়ে বাংলাদেশ
ইংল্যান্ডের মাটিতে হবে ২০১৯ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ।বিশ্বকাপের দ্বাদশ আসর আগামী ৩০ মে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলসে মাঠে গড়াবে।ক্রিকেট বিশ্বকাপ শুরু হতে আর মাত্র ৪৩ দিন বাকি। এরই মধ্যে অনেক দেশ নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করে ফেলেছে। বিশ্বকাপকে সামনে রেখে বাংলাদেশের দল নিয়েও চলছিল বেশ আলোচনা-সমালোচনা।সব কিছুর অবসান ঘটিয়ে মাশরাফি বিন মুর্তজার নেতৃত্বে ঘোষণা করা হয় বাংলাদেশের ১৫ সদস্যের স্কোয়াড।
মঙ্গলবার(১৬ এপ্রিল) দুপুর ১২.৩০ মিনিটে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্কোয়াড ঘোষণা করেন। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন হাবিবুল বাশার সুমন, আকরাম খান ও মিডিয়া উইংয়ের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস।
সম্পর্কিত খবর
বিশ্বকাপে জায়গা করে নেওয়া খেলোয়াড়দের ভিতরে এর আগে তিনটি বিশ্বকাপ খেলেছেন বাংলাদেশের চারজন ক্রিকেটার। নিশ্চয়ই বাংলাদের দলটা অভিজ্ঞতায় অনেক পরিপূর্ণ থাকবে। কিন্তু এই দলেই আবার সাত ক্রিকেটার আছেন,যারা এর আগে কখনো বিশ্বকাপে খেলেননি। এখন বিশ্বকাপে না খেলা সাতজন সাথে বিশ্বকাপে খেলা চারজন খেলোয়াড়কে নিয়ে দলটা অভিজ্ঞ হলো নাকি অনভিজ্ঞ হলো। এর জন্যে তাকিয়ে থাকতে হবে বিশ্বকাপের আসরের দিকে।
আসন্ন ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করা দশ দলের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ঘোষিত আট দলের ঘোষিত খেলোয়াড়দের তালিকার দিকে খেয়াল করলে এটাই মনে হওয়া স্বাভাবিক যে এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশই সবচেয়ে অভিজ্ঞ দল নিয়ে ইংল্যান্ডে খেলতে যাচ্ছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং আফগানিস্তান এখন পর্যন্ত তাদের বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করেনি। আফগানিস্তান এবার নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের চেয়ে তাদের অভিজ্ঞ হওয়ার কোনো কারণ নেই।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে ক্রিস গেইল থাকলে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানের এটি হবে পঞ্চম বিশ্বকাপ। চোটের কারণে ২০১১ সালে ঘরের মাঠের বিশ্বকাপটা মিস না করলে গেইলের মতো এবার পঞ্চম বিশ্বকাপ খেলতেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাও।
টাইগার দলনেতা মাশরাফি প্রথম বিশ্বকাপ খেলেন ২০০৩ সালে। তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম ২০০৭ সাল থেকেই বিশ্বকাপে তার সঙ্গী। মাহমুদউল্লাহ ও রুবেল হোসেনের এটি হবে তৃতীয় বিশ্বকাপ। ২০১৫ বিশ্বকাপের দলে থাকায় সাব্বির রহমান এবং সৌম্য সরকারের বিশ্বকাপ খেলা হবে দুটি। দলের সাত ক্রিকেটার লিটন কুমার দাস, মোহাম্মদ মিঠুন, মেহেদী হাসান মিরাজ, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, মোসাদ্দেক হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান ও আবু জায়েদ রাহী বিশ্বকাপ খেলবেন এই প্রথম।
এখন পর্যন্ত ঘোষিত সব দল মিলিয়ে তিনটি বিশ্বকাপ খেলা ক্রিকেটার আছেন মাত্র তিনজন। ভারতের মহেন্দ্র সিং ধোনি, নিউজিল্যান্ডের রস টেলর ও শ্রীলঙ্কার লাসিথ মালিঙ্গা। অস্ট্রেলিয়ার দলে এর আগে সর্বোচ্চ দুটি বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা আছে খেলোয়াড়দের। তাও শুধু স্টিভেন স্মিথের। তাদের ১৫ জনের ভিতরে ৯ জনেরই বিশ্বকাপে খেলার অভিজ্ঞতা এবারই প্রথম। একটি করে বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা আছে মাত্র পাঁচজন খেলোয়াড়ের।
ইংল্যান্ডের হয়ে এর আগে দুটি বিশ্বকাপ খেলেছেন মাত্র একজন খেলোয়াড়।তিনি হলেন অধিনায়ক এউইন মরগান। ইংল্যান্ডের দলে বিশ্বকাপের মতো মহাআসরে অভিষেক হবে আটজন ক্রিকেটারের। আর বাকি ছয়জনের জন্য হবে দ্বিতীয় বিশ্বকাপ। এ
ভারতীয় বিশ্বকাপের দলে ধোনির পর অভিজ্ঞতা রয়েছে অধিনায়ক বিরাট কোহলির। এ নিয়ে তিনি তৃতীয় বিশ্বকাপ খেলবেন। বাকি সাতজন এই প্রথম খেলতে মাঠে নামবেন। ছয়জনের জন্য এটি দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপে খেলার জন্যে দলে নাম লেখানো।
অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে নিউজিল্যান্ডকে বাংলাদেশের কাছাকাছিই ধরা যায়। তাদের দলের ৯ জন খেলোয়াড়ের জন্য এটি যেমন প্রথম বিশ্বকাপ, তেমনি বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতাও আছে বাকি ছয়জন খেলোয়াড়ের। তিন বিশ্বকাপ খেলা অভিজ্ঞতাসম্পন্ন টেলরের সঙ্গে আছেন দুটি বিশ্বকাপ খেলা কেন উইলিয়ামসন, টিম সাউদি ও মার্টিন গাপটিল। ম্যাট হেনরি আর ট্রেন্ট বোল্ট ২০১৫ বিশ্বকাপে খেলেছেন।
এবারই সম্ভবত বিশ্বকাপে সবচেয়ে অনভিজ্ঞ দল খেলাবে পাকিস্তান। ১৯৭৫ সালের বিশ্বকাপে সবার জন্যই ছিল প্রথম খেলার অভিজ্ঞতা। আর এবার বিশ্বকাপে ১৫ জনের ভিতরে প্রথম খেলবেন ১১ জন। বাকিদের মধ্যে সর্বোচ্চ দুটি বিশ্বকাপ খেলেছেন মোহাম্মদ হাফিজ।দলে থাকলেও হাফিজের বিশ্বকাপে খেলা নির্ভর করছে তাঁর চোটের ওপর। দলে থাকা শোয়েব মালিক, সরফরাজ আহমেদ ও হারিস সোহেলের এটি হবে দ্বিতীয় বিশ্বকাপ।
প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু দল ঘোষণার দিনই অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা বলেন। সাবেক প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদও অভিজ্ঞদের ওপর আস্থা রাখলেন।তিনি বলেন, ‘আমরা ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে খেলেছি। এবারও একই কন্ডিশনে খেলা হচ্ছে। সেটা যদি খেলোয়াড়েরা মনে রাখে এবং সিনিয়ররা ভালো খেলে, তাহলে এবার আমাদের ভালো কিছু করার সম্ভাবনা আছে।’
বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে যারা আছেন:
মাশরাফি বিন মুর্তজা(অধিনায়ক),তামিম ইকবাল, লিটন কুমার দাশ, সৌম্য সরকার, সাকিব আল হাসান (সহ-অধিনায়ক), মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোহাম্মদ সাইফউদ্দীন, মেহেদি হাসান মিরাজ, রুবেল হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান, সাব্বির রহমান,মোহাম্মদ মিঠুন, মোসাদ্দেক হোসেন ও আবু জায়েদ রাহী।
আয়ারল্যান্ড সফরের জন্য আরো দুইজন দলে ডাক পেয়েছেনঃ নাঈম হাসান ও ইয়াসির আলী।
/এস কে