• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

হবিগঞ্জ জেলার ৪টি আসনের নির্বাচনী চালচিত্র

আ’লীগের দুর্গে আঘাত হানতে মরিয়া বিএনপি

প্রকাশ:  ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২১:১২
কামরুল হাসান, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি

হবিগঞ্জ জেলার ৪টি সংসদীয় আসনেই বইছে নির্বাচনী হাওয়া। আসনগুলো হলো- বাহুবল-নবীগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত হবিগঞ্জ-১, বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ উপজেলা নিয়ে হবিগঞ্জ-২, সদর-লাখাই-শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে হবিগঞ্জ-৩ ও চুনারুঘাট-মাধবপুর উপজেলা নিয়ে হবিগঞ্জ-৪ সংসদীয় আসন।

এই চারটি নির্বাচনী এলাকায় মনোনয়ন প্রত্যাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে সম্ভাব্য প্রার্থীরা জনসংযোগে নেমে পড়েছে। জেলার প্রতিটি আসনেই আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি থেকে একাধিক প্রার্থী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। নিজের যোগ্য প্রমান করতে রঙ-বেরঙের ব্যানার, ফেস্টুন হাট-বাজার ও রাস্তার পাশে টাঙ্গিয়ে রেখেছেন। তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে নিরবে মাঠ ঘোচাতে ব্যস্থ জামায়াতে ইসলামী ও খেলাফত মজলিস।

এদিকে ভোটারাও প্রার্থীদের নিয়ে হিসেব কষতে শুরু করেছেন। এলাকায় কার ব্যক্তি ইমেজ কতটুকু, কে কতটুকু উন্নয়ন করছেন কিংবা কাকে দিয়ে আগামীতে উন্নয়ন হবে এমন চুলছেড়া বিশ্লেষণ। তবে বাংলাদেশে বিগত ১০টি সংসদ নির্বাচনে এ জেলায় নিজেদের আধিপত্য প্রমাণ করেছে আওয়ামী লীগ। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও এ জেলার চারটি আসনেই আশাবাদী ক্ষমতাসীন দলটি। তবে বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন-সুষ্ঠ নির্বাচন হলে চারটি আসনেই জয় পাবে তারা। আর সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন। স্বাধীনতার পর থেকে বিগত দশটি জাতীয় নির্বাচনের হিসেব টানতে গিয়ে দেখা যায়, হবিগঞ্জের চারটি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই বেশি সময়কাল জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

হিসেব অনুযায়ী ১৯৭৩- ২০১৪ সালের নির্বাচন পর্যন্ত হবিগঞ্জ-১ এ আওয়ামী লীগ- ৫ বার, জাসদ ২ বার, জাতীয় পার্টি ২ বার ও বিএনপি মাত্র ১ বার সংসদে ছিল। হবিগঞ্জ-২ এ আওয়ামী লীগ-৬ বার, জাতীয় পার্টি ২ বার ও বিএনপি মাত্র ২ বার সংসদে এলাকার প্রতিনিধিত্ব করেছে। হবিগঞ্জ-৩ এ আওয়ামী লীগ ৫ বার, জাতীয় পার্টি ৩ বার, বিএনপি মাত্র ২ বার সংসদে ছিলেন ও হবিগঞ্জ-৪ এ আওয়ামী লীগ ৬ বার, জাতীয় পার্টি ২ বার, বিএনপি মাত্র ২ বার নিবার্চিত হয়েছে। এই হিসেব মাথায় রেখে আগামী সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জের সবকটি আসনেই আওয়ামীলীগ থেকে নতুন মুখের ছড়াছড়ি। ফলে ভোটাররা যেমন উন্নয়নকে দিচ্ছেন প্রাধান্ন্য, তেমনি নতুনমুখের প্রার্থীদের আশ্বস্থ করছে ভোটের মাঠে থাকার জন্য।

এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর কর্ম পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি। ভাটাররা বলছেন-অবাধ, সুষ্ঠ ও সকল দলের অংশগ্রহনে একটি নির্বাচন। লোকচুরি নির্বাচন হলে মানুষের প্রতি হিংসা প্রতি হিংসা বাড়ে। তাই হবিগঞ্জের মানুষ সবাই চায় সুন্দর একটি নির্বাচন। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য এডভোকেট মোঃ আবু জাহির বলেন, হবিগঞ্জ একটি জেলা। এ জেলায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দ্বিতীয় গোপালগঞ্জ হিসেবে আমরা আখ্যাত করেছি। আমি মনে করি আওয়ামী লীগ পর পর দুইবার রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকার কারণে এ জেলা যে উন্নয়ন হয়েছে অন্যকোনো সরকারের আমলে এতো উন্নয়ন চোখে পড়েনি সাধারণ মানুষের। তাই মানুষ আগামী নির্বাচনেও আওয়ামীলীগকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবে। আমরা চারটি আসনই জননেত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে পারব।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জি.কে গউছ বলেন, বিএনপি একটি বিশাল রাজনৈতিক দল। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপি নির্বাচনে যাবে কি না সন্দিহান। যতক্ষণ পর্যন্ত সহায়ক সরকার না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত নির্বাচনে না যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আমার দল নির্বাচনে গেলে ও মানুষ শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট দিতে পারলে আমি আশাবাদি হবিগঞ্জের চারটি আসনই এবার বিএনপির ঘরে যাবে।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জেলা কমিটির সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক বলেন, হবিগঞ্জ বরাবরই জাতীয় পার্টির দুর্গ হিসেবে পরিচিত। পল্লীবন্ধু সাবেক প্রেসিডেন্ট আলহাজ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ হবিগঞ্জকে মহকুমা থেকে জেলায় পরিণত করেছিলেন। বিগত এরশাদ সরকারের আমল থেকেই এলাকায় উন্নয়নের যাত্রা শুরু হয়। তাই দল হবিগঞ্জের ৪টি আসনে প্রার্থী দিলে আমি মনেকরি মানুষ লাঙ্গল প্রতীকে ভোট দিয়ে আমাদের বিজয়ী করবে।

হবিগঞ্জ- ১

নবীগঞ্জ-বাহুবল উপজেলার সমন্বয়ে সংসদীয় আসন হবিগঞ্জ-১। এ আসনে আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টির অবস্থান বেশ শক্ত। তবে জয়-পরাজয় নির্ধারণ হবে জোট আর মহাজোটের ওপর। তারপরও ড. রেজা কিবরিয়া (প্রয়াত অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবয়িার পুত্র) প্রার্থী হলে সকল হিসাব-নিকাশ পাল্টে যাবার সম্ভবনা দেখছেন ভোটাররা।

শাহ এএমএস কিবরিয়া প্রতিষ্ঠিত ‘মৃদুভাষণ’ পত্রিকায় সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি (ড.রেজা কিবরিয়া) আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হবার ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁর এ ঘোষণার মধ্যে দিয়ে এলাকার সচেতন ভোটাররা নড়েচড়ে বসেছে ।

আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনে এ আসনটিতে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী দলীয় মনোনয়নের জন্য প্রচার-প্রচারণা করে যাচ্ছেন। তবে বিএনপি থেকে একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন সাবেক এমপি জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি শেখ সুজাত মিয়া।

আওয়ামী লীগ থেকে আলোচনায় আছেন- জেলা আ’লীগের সাবেক সভাপতি ও বতর্মান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী, সংরক্ষিত নারী আসনের (হবিগঞ্জ-সিলেট) এমপি আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী, জেলা আ’লীগের সহসভাপতি ও নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর চৌধুরী, সাবেকমন্ত্রী দেয়ান ফরিদ গাজীর ছেলে শাহ মিলাদ গাজী ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল মুকিত চৌধুরী। এছাড়াও আলোচনায় রয়েছেন প্রয়াত অর্থমন্ত্রী শাহ এএম এস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ড. রেজা কিবরিয়া এ আসনে যেকোনো দল থেকে মনোনয়ন নিয়ে মাঠে আসলেই ভোটাররা ব্যালেটের মাধ্যমে তার বাবা হত্যার ঋৃণ শোধ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তার নির্বাচনী প্রতীক নৌকা হলেতো আর কথাই নেই। কারণ তার বাবা ছিলেন আওয়ামীলীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী। একাধিক সূত্র জানায়, এ আসনে আওয়ামী লীগের মধ্যে দলীয় কোন্দল বিরাজমান। যার কারণে কেন্দ্র থেকে প্রার্থী নির্বাচনে হিমশিম খাচ্ছেন উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। আর বিএনপি থেকে শেখ সুজাত মিয়া অনেকটাই নিশ্চিত বলে দাবী দলীয় নেতাকর্মীদের।

১৯৯১ সাল থেকে নবীগঞ্জে বিএনপিকে সংগঠিত করতে নিরলসভাবে কাজ করছিলেন তিনি। এর সুফল পান ২০১১ সালের উপ-নির্বাচনে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়ে চমক দেখান।

নবীগঞ্জ-বাহুবল নির্বাচনী এলাকায় একাধিকবার বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতা বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ দেওয়ান ফরিদ গাজী (প্রয়াত)। তিনি ২০১১ সালে সংসদ সদস্য থাকাকালিন সময়ে ইন্তেকাল করেন। ওই বছরই উপ-নির্বাচনে শেখ সুজাত মিয়ার কাছে সামান্য ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী। তবে জাপা মনোনীত প্রার্থী আব্দুল মুনিম চৌধুরী বাবু নির্বাচনে জামানত হারান। বিএনপির দলীয় প্রার্থী হিসেবে তৃণমূলে পরীক্ষিত শেখ সুজাত মিয়া একক প্রার্থী হিসেবেই আলোচনায় রয়েছেন। তার নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগের এ ঘাঁটিতে বিএনপি শক্তিশালী হয়। গত পৌর নির্বাচনে নবীগঞ্জে শেখ সুজাতের ইমেজ এবং সরব প্রচারণায় বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আলহাজ ছাবির আহমদ চৌধুরী বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীক নিয়ে ধরাশায়ী হন তিনবারের নির্বাচিত মেয়র অধ্যাপক তোফাজ্জল ইসলাম চৌধুরী।

আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিশ্চিত করার জন্য হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মুশফিক হোসেন চৌধুরী ব্যাপক লবিং করছেন। দলীয় ত্যাগ ও তৃণমূল অবস্থান বিবেচনায় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকেই মনোনীত করবেন মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজীর ছেলে শাহ মিলাদ গাজী পিতার গড়া মাঠে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। গত নির্বাচনে তাকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হলেও জোটের স্বার্থে তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। দলের হাইকমান্ড সেই ত্যাগ বিবেচনায় তাকেই মনোনয়ন দেবেন বলে তিনি আশাবাদী।

একইভাবে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আলমগীর চৌধুরী। নতুন প্রজন্মের ভোটারকে জাগিয়ে তোলায় তার বিশেষ গুণ রয়েছে। তৃণমূলের নেতা হিসেবে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছেন। যুবলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল মুকিত চৌধুরীও নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে রয়েছেন।

অন্যদিকে নির্বাচনী এলাকায় দলীয় মনোনয়নের জন্য মাঠে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী। উন্নয়ন কর্মকান্ডে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতে চমক দেখাচ্ছেন তিনি। তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন ওই এলাকার লোকজন। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনা প্রয়াত কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরীর কন্যা হিসেবে এলাকায় তার পারিবারিক ইমেজ রয়েছে। নারী জাগরণে তার অবদান মহিলা ভোটারদের মাঝে বেশ সাড়া জাগিয়েছে। সবচেয়ে আলোচনার বিষয় বাহুবলবাসী এবার তাদের নিজ উপজেলার একজন প্রার্থী চান। সে হিসেবে আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন তারা। শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী কে হন তা দেখার বিষয়।

এছাড়াও গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন জাপার দলীয় সংসদ সদস্য আব্দুল মুনিম চৌধুরী বাবু। আগামী নির্বাচন জোটগত নির্বাচন হলে তিনিই মনোনয়ন পাবেন মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

হবিগঞ্জ- ২

স্বাধীনতা পরবর্তী প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকই বিজয়ী হয়েছে। এ বিজয় ধরে রাখতে আগামী নির্বাচনেও আসন চায় নৌকার প্রার্থীরা। তবে আলেম-ওলামাদের সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগের এ ঘাঁটিতে চমক দেখাতে মরিয়া বিএনপি। একটি বিশ্বস্থ সূত্র জানায়, বানিয়াচং উপজেলায় আলেম-ওলামাদের বিশাল ভোটব্যাংক রয়েছে। যাদের মধ্যে জামায়াত, হেফাজতে ইসলাম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, তৌহিদী জনতার ব্যানারে আলেম-ওলামাগণ এলাকায় কাজ করেন। আবার ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল খেলাফত মজলিশের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা রয়েছেন এখানে। এসব কারণে বিএনপির নেতাকর্মীরা মনে করেন জোটের প্রার্থী যেই আসেন এবার নিশ্চিত বিজয় তাদের।

তবে বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ খান এলাকার উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করছেন। জেলার রাজনীতির পাশাপাশি নিজের নির্বাচনী এলাকায় তার অবদান স্বীকার করেন ভোটাররা। অবহেলিত জনপদে আশার আলো দেখিয়েছেন তিনি। একাদশ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন নিয়ে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করেন অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান। তারপরও আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন প্রশ্নে তাকে ছাড় দিতে নারাজ বানিয়াচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন মাস্টার, সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন খান, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ড. মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক আইনবিষয়ক সম্পাদক ময়েজউদ্দিন শরীফ রুয়েল।

এছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে সরকারের অবসরপ্রাপ্ত সচিব ইকবাল খান চৌধুরী চমক দেখাতে পারেন। শোনা যাচ্ছে কোন্দল নিরসনে তাকে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে। কারন তিনি সরকারে বিভিন্ন দপ্তরে দায়িত্ব পালনকালে জেলাসহ বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ দুই উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্টান, মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান, মন্দির, শ্বশ্মান, রাস্তাঘাট, ব্রীজ, কালভার্ট উন্নয়নে ভূমিকা রেখে এলাকায় ব্যাপক পরিচিতি ও গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছেন। সাধারণ মানুষেরও ধারনা এ আসনে তাকে মনোনয়ন দিলে আসনটি আওয়ামীলীগ জয়ী হবে।

এদিকে ব্যারিস্টার এনামুল হক হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে এলাকায় সক্রিয় রয়েছেন । তিনি সংবাদ সম্মেলন করে প্রার্থিতা ঘোষণা দিয়েছেন।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, সৌদিআরব বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য আহমদ আলী মুকিব দলীয় মনোনয়ন পেতে জোর তৎপরতা শুরু করেছেন। নির্বাচনী এলাকায় দুজনেরই রয়েছে পরিচ্ছন্ন ইমেজ।

রাজনীতির মাঠে সরব ডা. জীবন। ২০০৮ সাল থেকে এলাকায় সক্রিয়। ব্যক্তি ও পারিবারিক ইমেজ কাজে লাগিয়ে চমক দেখাতে পারেন। ডা. জীবন বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে শঙ্কা রয়েছে। তৃণমূলের মানুষ স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য উন্মুখ। দেশের মানুষ ভোটারবিহীন একদলীয় নির্বাচনের কলঙ্ক দেখতে চায় না। দলীয় মনোনয়ন নিয়ে হাইকমান্ডের ওপর আস্থাশীল তিনি। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপির প্রার্থী অবশ্যই বিজয়ী হবে। জিয়া পরিবারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত সৌদিআরব বিএনপির সভাপতি আহমদ আলী মুকিবের প্রার্থিতা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা রয়েছে। আন্দোলন সংগ্রামে ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়ে এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন।

আহমেদ আলী মুকিব বলেন, বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জে হাওর থাকায় এলাকাটি খুবই অবহেলিত। স্বাধীনতার পর উন্নয়ন হয়নি। তাই বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ঘোষিত ভিশন-২০৩০ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এলাকার উন্নয়নে কাজ করছি। দলের চেয়ারপারসন যদি আমাকে মনোনয়ন দেন তাহলে আসনটি পুনরুদ্ধার করতে পারবো।

১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত গোপাল কৃষ্ণ এ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের মেজর জেনারেল (অব.) এমএ রব, ১৯৭৯ সালে বিএনপির অ্যাডভোকেট জনাব আলী বিজয়ী হন। ১৯৮৬ ও ’৮৮ সালে জাতীয় পার্টি থেকে বিজয়ী হন সিরাজুল ইসলাম খান। ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হন হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট শরীফ উদ্দিন আহমেদ। তার মৃত্যুতে ১৯৯৭ সালের উপনির্বাচনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগ প্রার্থী শিল্পপতি নাজমুল হাসান জাহেদ।

হবিগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক শংকর পালও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগ্রহী। তিনি জোটগত সিদ্ধান্তের প্রতীক্ষায়। আওয়ামী লীগের নিশ্চিত আসন হিসেবে পরিচিত ওই নির্বাচনী এলাকায় বিগত ৭টি জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ।

হবিগঞ্জ-৩

সদর-লাখাই-শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে হবিগঞ্জ-৩। এ আসনটিতে টানা দুইবার আওয়ামীলীগ, এর আগেও তিনবার নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জয়লাভ করায় ঘাটি হিসেবে খাতায় নাম লিখিয়েছে। তবে একসময় এ আসনটি ছিল জাতীয় পার্টির রাজ্য। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি চমক দেখাতে একজন হেভিয়েট প্রার্থী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তিনি এতটাই জনপ্রিয় যে, গত পৌর নির্বাচনে কারাগারে থেকেও হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়ে দেশবাসীকে তাক লাগিয়েছেন। তিনি জিকে গউছ। কেন্দ্রীয় বিএনপির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দলের দায়িত্ব পালন করছেন। এ আসনটি জেলা সদর হওয়ায় সংঘত কারনেই জেলাবাসীর নজর হবিগঞ্জ-৩ এর প্রতি।

একসময় হবিগঞ্জ-৩ মানেই জাতীয় পার্টি, এমপি হিসেবে ছিলেন আবু লেইছ মোঃ মুবিন চৌধুরী । এরশাদের রাজনৈতিক পতন আর মুবিন চৌধুরী পার্টি বদল করে বিএনপিতে যোগদানের কারনেই হয়তো জাপা’র আসনটি হাত ছাড়া হয়।

৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত শাহ এ এম এস কিবরিয়ার হাত ধরে আসনটি চলে যায় আওয়ামী লীগের ঘরে। ৯ম জাতীয় সংসদ নিবার্চনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জেলা আওয়ামীলীগের তৎকালিন সাধারন সম্পাদক (বর্তমান সভাপতি) এডভোকেট মোঃ আবু জাহির বিপুল ভোটের ব্যবধানে এ আসনে এমপি নির্বাচিত হন। ফলে লোকমুখে এ আসনটি আওয়ামী ঘাটিতে রূপ নেয়।

জাতীয় পার্টি চায় হারানো রাজ্য ফিরিয়ে আনতে। প্রার্থী হিসেবে জাপা কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য জেলা জাপার সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। এছাড়াও কেন্দ্রীয় কৃষক পার্টির সহসভাপতি ব্রিটেন প্রবাসী প্রকৌশলী এমএম মুমিন চৌধুরী বুলবুলের নির্বাচনী প্রচারণা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

বিএনপি’র নেতাকর্মীরা আগামী নির্বাচনে মরন কামড় দিতে চান বলে দলের একাদিক সুত্রে জানা গেছে। ফলে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘরে বসে নেই, চষে বেড়াচ্ছেন মাঠ থেকে মাঠ, গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। নিজেকে প্রকাশ করার জন্য নানা ভাবে শুরু করেছেন প্রচার প্রচারনা। নির্বাচনী এলাকায় ডিজিটাল পোষ্টার, ফেষ্টুন আর ব্যানারে ছেয়ে গেছে।

বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা আগাম প্রচার-প্রচারণায় মাঠে নেমেছেন। পথসভা-সমাবেশ ও বিভিন্ন বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে দোয়া ও ভোট চাইছেন তারা। এ ছাড়া এসব নেতাদের ছবি সম্বলিত পোস্টার ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে এলাকা।

বিএনপি যদি হারানো দুর্গ ফিরে পেতে চায় তাহলে যোগ্য প্রার্থী দিতে হবে। কারণ আ’লীগের প্রার্থী একজন হেভিওয়েট প্রার্থী। তার সঙ্গে দুর্বল প্রার্থী দিয়ে ভোটযুদ্ধ জমে উঠবে না। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘোরার পাশাপাশি দলের মনোনয়ন পেতে লবিং করছেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে।

গরিব-দুঃখী পরিবারকে আগে থেকেই নানাভাবে সহযোগিতা করে আসছেন জিকে গউছ। তিনি মনোনয়ন পেলে আসনটি বিএনপি দখলে নিয়ে চমক সৃষ্টি করতে সক্ষম হবেন বলে তার সমর্থকরা দাবি করেছেন।

বিএনপি’র প্রার্থী জিকে গউছ ঝাঁপিয়ে পড়েছেন মাঠে। তিনি ইতোমধ্যেই নির্বাচনী এলাকায় জন সমর্থন নিতে ইতোমধ্যেই গ্রামে গ্রামে ‘উঠান বৈঠক’ করেছেন। এছাড়াও জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ড্যাব সভাপতি ডাঃ আহমদুর রহমান আবদাল বিভিন্ন হাটবাজারে পোস্টার লিফলেট বিতরণের পাশাপাশি গণসংযোগ ও পথসভার মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট এনামুল হক সেলিমও বসে নেই। তিনিও মনোনয়নের আশায় হাটবাজার, রাস্তাঘাটে পোস্টার, লিফলেট ও ফেস্টুন সাঁটানোর মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

ভোটাররা বলেছেন, গউছ ভাই প্রার্থী হলে জয় নিশ্চিত। কারন জনসেবা ও উন্নয়নে তার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে। যেমন-হবিগঞ্জ পৌরসভায় তিন বারের মেয়র নিবার্চিত হয়ে এলাকার উন্নয়ন দিয়ে পুরো জেলায় তার সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে।

হবিগঞ্জ-৪

পাহাড়, চা-বাগান অধ্যুষিত চুনারুঘাট-মাধবপুর উপজেলার সংসদীয় আসন হবিগঞ্জ-৪। এই আসনটিতে আওয়ামী লীগে থেকে প্রার্থী যেই হোন না কেনো, প্রতীক নৌকা হলেই নির্বাচনের নদী পাড় হওয়া সহজ হয়ে যায়।

চা-শ্রমিকরা কথা প্রসঙ্গে বলেন, ভোটের কাগজে নৌকা দেখলে ঠিক থাকতে পারি না। শেখ বাবু আমাদের ভোটের অধিকার দিয়েছিলেন। তাছাড়া সাব (সৈয়দ মোঃ ফয়সল, বিএনপি) ভালো মানুষ, তার মার্কাটা যদি নৌকা হতো?

চা-শ্রমিকদের কথার ধরণ শুনলেই বুঝা যায় তারা নৌকা ছাড়া ভোট দিতে নারাজ। এক্ষেত্রে প্রার্থী কোন বিষয় না।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৭০ সাল থেকে এ পর্যন্ত মাত্র তিনটি নির্বাচন ছাড়া বাকী সবকটি নির্বাচনে এ আসন থেকে জিতেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী।

সব মিলিয়ে এ আসনটি যেনো আওয়ামী লীগের জন্য সংরক্ষিত! ভোটের মাঠে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ছিলেন, কিন্তু জেতেননি এমন উদাহরণ বিরল। তবে আ’লীগ থেকে এবার একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকায় দলটিতে দেখা দিয়েছে টানাপড়েন।

প্রয়াত সমাজকল্যাণমন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদ এ আসন থেকে টানা ৬ বার আওয়ামী লীগের এমপি নির্বাচিত হন। বর্তমানেও এ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী নৌকা প্রতীক নিয়েই জয়ী হয়েছেন। এবার এই আসনে আওয়ামীলীগ থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে মাধবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র মুক্তিযোদ্ধা এস.এম মুসলিম, ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মাধবপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন চৌধুরী (অসীম), সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী মরহুম এনামুল হক মোস্তফা শহীদের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড নেতা নিজামুল হক মোস্তুফা শহীদ রানা, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা প্রকৌশলী আরিফুল হাই রাজিব, চুনারুঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট মো. আকবর হোসেন জিতু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আবু তাহের।

তারপরও এলাকায় ভালো মানুষ হিসেবে খ্যাতি রয়েছে বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মাহবুব আলীর। তবে দলীয় নেতাকর্মীদের অনেকের অভিযোগ, বেশিরভাগ নেতাকর্মীরই কোনো মূল্যায়ন নেই তার কাছে। এদিকে তার সম্পর্কে নানা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী। তিনি বলেন, তার বাবা মৌলানা আসাদ আলী প্রাক্তন সংসদ সদস্য ছিলেন। আওয়ামী লীগের দুর্দিনে পারিবারিকভাবেই তারা দলের নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি নির্বাচিত হয়ে নেতাকর্মীদের পারস্পরিক সংযোগ নিবিড় করেছেন এবং দুই উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড করেছেন। তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গেও তার ভালো সম্পর্ক রয়েছে।

মাধবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহ মোঃ মুসলিম বলেন, তিনি এ আসনে মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হলে দলীয় নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করার পাশাপাশি এলাকার উন্নয়নে কাজ করবেন।

আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বলেন, এ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন পেলে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। এলাকার অনেক রাস্তাঘাটের সংস্কার করে বেশ সুনামও অর্জন করেছেন তিনি।

জেলা অওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাকির হোসেন চৌধুরী অসীম বলেন, তৃণমূলের প্রতিটি নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে তার সম্পর্ক রয়েছে। মনোনীত হলে এ আসনে জয়ের আশা ব্যক্ত করেন তিনি।

সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রীপুত্র নিজামুল হক রানা বলেন, তার বাবা প্রাক্তন সমাজকল্যাণমন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদ ছয়বার এ আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রী হয়েছেন। উন্নয়ন ও সংস্কার কর্মকান্ডে জন্য তার জনপ্রিয়তাও ব্যাপক। এরই ধারাবাহিকতায় কেন্দ্র থেকেও তিনি সবুজ সংকেত পেয়েছেন। তিনি বলেন, চুনারুঘাটে আওয়ামী লীগের ভোট বেশি; তাই এ আসন থেকে নৌকার জয়ের সম্ভাবনাও বেশি।

এদিকে জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মোঃ ফয়সল এবারও দলের প্রার্থী হিসেবে কৌশলে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। দলের কয়েকটি মতবিনিময় সভায় সম্প্রতি তিনি শেষবারের মতো নির্বাচন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। নেতাকর্মীরাও অতীতের ব্যর্থতার গ্লানি মুছে তার হাত ধরে জয় ছিনিয়ে আনার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশায় আছে আরো দুই নেতা। একজন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক সাবেক এমপি (সংরক্ষিত আসন) শাম্মী আক্তার শিপা ও জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান চৌধুরী।

২০ দলীয় জোটের প্রধান শরিক বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জেলা শাখার আমির কাজী মাওলানা মুখলিছুর রহমানের বাড়ি চুনারুঘাট উপজেলায়। তিনি আগামী নির্বাচনে জোটের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জোটের অন্য শরিক দল খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বাচ্চুর বাড়িও মাধবপুর উপজেলায়। তারও এ আসন থেকে প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জাতীয় পার্টি থেকে জেলা কমিটির আহ্বায়ক আতিকুর রহমান আতিকও দলীয় মনোনয়ন পেলে এ আসনে নির্বাচন করবেন বলে ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন। যদিও তিনি হবিগঞ্জ-৩ অর্থাৎ সদর আসনে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত।

এই দুই উপজেলার ২১টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভায় মোট ভোটার ৪ লাখ ২২ হাজার ৬২৩ জন। এর মধ্যে চুনারুঘাট উপজেলায় রয়েছে ২ লাখ তিন হাজার ৩৩১ ভোটার ও মাধবপুর উপজেলায় রয়েছে ২ লাখ ১৯ হাজার ২৯২ ভোটার।

এনই

সংসদীয় আসন,হবিগঞ্জ
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close