• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

নদীর বুকে পুকুর খনন করে মাছ চাষ!

প্রকাশ:  ০৩ এপ্রিল ২০১৯, ১৪:৩৮
শাহজাহান আলী বিপাশ, ঝিনাইদহ

ঝিনাইদহ জেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত ১২ নদীর জায়গা দখল করে গড়ে উঠছে ঘরবাড়ি, দোকানপাট, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। চলছে দখলের হিড়িক। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাব দেখিয়ে স্থানীয় ব্যক্তিরা নদীর জমিতে কেউ বা বসতবাড়ি আবার কেউ পুকুর কেটে দখল করছে। একই সাথে দেদারছে চলছে দুষণ আর খননের অভাবে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে জেলার সব’কটি নদী। জেগে ওঠা চরে চলছে চাষাবাদ। তবুও নদীগুলো বাঁচাতে দেখা মিলছে না সংশ্লিষ্ট বিভাগের দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ।

এক সময়ের প্রমত্তা চিত্রা নদীর ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ অংশের নিমতলা ও মধুগঞ্জ বাজার সংলগ্ন এলাকার দু-পাশে দেদারছে ফেলা হচ্ছে ময়লা, মিশছে বাথরুমের পাইপ, পাড়ে তৈরি করা হয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বসতবাড়ি, বড় বড় ভবন। দখলের কবলে ৩৯ মিটার প্রস্থের নদীটি এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে, প্রস্থতা দাড়িয়েছে মাত্র কয়েক মিটারে। এমন চিত্র নবগঙ্গা, ইছামতি, কপোতাক্ষ, বেগবতি, কোদলা সহ জেলার ১২টি নদীর। দিনের পর দিন এক শ্রেণির প্রভাবশালী মানুষ নদী দখল উৎসবে মেতে উঠেছে। নদী তীরে দোকানপাট, বাড়ি ঘর তৈরি করে নদীকে সংকুচিত করে ফেলছে। কেউবা নদীর ভিতরে পুকুর কেটে মাছ চাষ করছেন। ফলে নদীগুলো শুকিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে আর জেগে ওঠা চরে মানুষ ইচ্ছামত চাষাবাদ করছেন। বর্ষাকালে কিছুটা পানি থাকলেও শুকনা মৌসুমে পানি চোখে পড়ে না বললেই চলে। প্রভাবশালীদের ভয়ে কিছু বলতেও পারে না সাধারণ মানুষ।

সরেজমিন জেলার সদর উপজেলা, কোটচাদপুর ও কালীগঞ্জ উপজেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত ঐতিহ্যবাহী চিত্রা নদীর তীর ঘুরে দেখা যায় চিত্রা নদীর দুই তীর দখল করে মাটি দিয়ে ভরাট করে তৈরি করা হয়েছে পাকা বাড়ি, ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান, ক্লাব ঘর, রাজনৈতিক দলের অফিস কিংবা ধমীয় প্রতিষ্ঠান। নদীর বুকে আবার কেউ কেউ বানিয়েছে পুকুর। নদীর দৈঘ্য প্রস্ত সরু হয়ে যাওয়ায় নদীগুলো শুকিয়ে গেছে। মহেশপুর উপজেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত কপোতাক্ষ নদ দখল করেও তৈরি করা হয়েছে বাড়ি, ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান। জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে কৃষি ফসল।

জেলার অধিকাংশ নদীর বুকে চলছে চাষাবাদ। কোথাও কোথাও একটু পানি থাকলেও অধিকাংশ যায়গাই পানি শুন্য। ঝিনাইদহের অধিকাংশ নদীতেই চলছে এমন চাষাবাদ। কোথায় ধান, কোথায় কলা, আবার কোথা কলাই, ভুট্টাসহ অন্যান্য সবজি। খননের অভাবে ভরাট হয়ে গেছে ঝিনাইদহের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ১২টি নদনদী। আর যে সকল স্থানে পানি আছে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলে নদী দুষণ করা হচ্ছে। ফলে নষ্ট হচ্ছে নদীর পানি, দুষণ ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশে।দেশীয় মাছের বিচরণ ক্ষেত্র এ সকল নদ নদী আজ পানির অভাবে মাছ শুন্য। বেকার হয়েছে পড়েছে নদী এলাকার অনেক মৎস্যজীবিরা। জীবিকার তাগিদে পেশা বদল করেছে অনেকে।

ঝিনাইদহ পরিবেশ ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান জানান, নদীগুলো দখল মুক্ত করতে তারা মাঝে মাঝে মিছিল মিটিং করছি, স্মারকলিপি দিয়েছি। প্রশাসনও বারবার বলছে আমরা নদীগুলোর সীমানা নির্ধারণ করে আমরা নদীগুলো দখলমুক্ত করবো। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। ঝিনাইদহের নদ নদীগুলো যা রয়েছে ততটুকু যদি এখনো রক্ষা করা না যায় তাহলে একসময় ঝিনাইদহে আর কোন নদীর অস্তিত্ব থাকবে না। তিনি বলেন, নদীর মধ্যে মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে এবং বজ্য দিয়েও ভরাট করা হচ্ছে। এর ফলে নদীগুলোর অস্তিত্ব বিলিন হয়ে যাচ্ছে। নদীর সাথে সংযুক্ত খালেও নেই পানি। এর ফলে প্রভাব পড়েছে কৃষি জমিতেও।

চিত্রা বাঁচাও আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী, মানবাধিকার ও উন্নয়ন কর্মী শিবুপদ বিশ্বাস জানান, চিত্রাকে বাচাতে বিভিন্ন সময় আন্দোলন সংগ্রাম করা হয়েছে। চিত্রার অনেক স্থানে দখল করেছে প্রভাবশালীরা। প্রশাসন বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। কিন্তু এখনো এগুলো উচ্ছেদ করা হয়নি। তিনি বলেন, জরুরি ভিত্তিতে চিত্রা নদী দখলমুক্ত করা দরকার।সেই সাথে নদী খনন করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে।

ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সরোয়ার জাহান সুজন জানান, ঝিনাইদহ নদীগুলো দখলমুক্ত করতে পুরোটাই প্রশাসনের হাতে। তারা যদি নদী গুলোর দিকে নজর দেয় তাহলে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা যাবে। তিনি বলেন, নদীর প্রবাহ ধরে রাখতে শুস্ক মৌসুমে নদীর পাশাপাশি খাল খননেও নেওয়া হবে পদক্ষেপ। তিনি বলেণ, জেলার নবগঙ্গা, কুমার ও চিত্রা নদী খনন করা হবে। এ ব্যাপারে আমরা সার্ভেও শুরু করেছি। এছাড়াও ঝিনাইদহের ৬টি উপজেলার ৭টি খাল খনন করা হবে।

ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জানান, নদীগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করে অবৈধ দখলদারদের চিহ্নিত করা হয়েছে। এদের দ্রুতই উচ্ছেদ করা হবে। তিনি আরো বলেন, এর আগে নদীগুলোতে যারা পাটা দিয়ে নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ বন্ধ করেছিল তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, অভিযোগ পেয়েছি নদীগুলোতে দুষন চলছে। আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।

শুধু আশ্বাস নয়, ঝিনাইদহের নদীগুলো দখলমুক্ত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে কর্তৃপক্ষ এমন দাবি স্থানীয়দের। দ্রুত খনন কাজ না করা হলে হারিয়ে যাবে ঝিনাইদহের ১২টি নদী। পানি সংকটে ব্যহত হবে কৃষি উৎপাদন। কমে যাবে দেশি মাছের উৎপাদন। আর এর প্রভাব পড়বে পরিবেশ।

/পিবিডি/পি.এস

ঝিনাইদহ,নদী,মাছ চাষ

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close