• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

জমে উঠেছে দিনাজপুর বীরগঞ্জ পৌরসভা উপ-নির্বাচন

প্রকাশ:  ১১ এপ্রিল ২০১৯, ১১:১৫
দিনাজপুর প্রতিনিধি

জমে উঠেছে মেয়র পদে দিনাজপুর বীরগঞ্জ পৌরসভা উপ- নির্বাচন। আগামী ১৫ এপ্রিল ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ২৮ মার্চ প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই বদলে গেছে এ বীরগঞ্জ পৌরসভার ভোটের মাঠের চিত্র। নির্বাচনকে ঘিরে সরগরম হয়ে উঠেছে প্রত্যন্ত জনপদ থেকে শুরু করে ব্যস্ততম শহরের অলিগলি। চলছে উঠান বৈঠক, পথসভা ও গণসংযোগ। প্রার্থীদের কর্মী-সমার্থকরা দলবেঁধে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাইছেন। নেয়া হয়েছে নজিরবীহিন নিরাত্তা ব্যবস্থা।

নির্বাচন ঘিরে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছাড়া অন্য কোন প্রার্থীদের অভিযোগ না থাকলেও প্রশাসন নিয়েছে কড়া নিরাপত্তা। এতে প্রার্থীরা নির্বিগ্নে তাদের নির্বাচনি প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন।

অপরদিকে দলের সিদ্ধান্ত না মেনে মেয়র পদে নির্বাচন করায় বীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির নির্বাহী সদস্য মো. রেজাওয়ানুল ইসলাম রিজুকে দল থেকে বহিস্কার করেছে বিএনপি। তবে আওয়ামীলীগ তাদের বিদ্রোহী দুই প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। আর সংসদ ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে আওয়ামীলীগের মধ্যে যে গ্রুপিং বিরাজ করতে তার প্রভাব পড়তে পারে এই নির্বাচনে।

ভোটারদের নানা প্রতিশ্রুতি দেওয়ার কোনো কমতি নেই প্রার্থীদের। উন্নয়ন ও সহযোগিতার প্রতিশ্রুতিসহ সাধারণ ভোটারের মন জয় করতে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দূর্নীতি ও মাদকমুক্ত বীরগঞ্জ পৌরসভা গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাইছেন প্রার্থী ও তাদের কর্মী- সমর্থকরা। বিভিন্ন উন্নয়ন ও সমাজের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে নিজেকে নিয়োজিত করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন প্রার্থীরা।

নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ও বীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোঃ নুর ইসলাম নুর বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর একজন ক্ষুদ্র কর্মী হিসেবে তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দীর্ঘদিন থেকে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেছি। জনগণ আমাকে ভালোবেসে বীরগঞ্জ পৌরসভা উপ- নির্বাচিত করে মেয়রের আসনে বসাবেন। আমি নির্বাচিত হয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার আশীর্বাদে ব্যাপক উন্নয়ন করব। এই উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতেই জনগণের তীব্র দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই আমি নৌকা মার্কা পেয়ে মেয়র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। তিনি বলেন, নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে তার জনপ্রিয়তা ততই বাড়ছে। নেতাকর্মী সমর্থকরা দিন- রাত ভোটারদের কাছে গিয়ে ভোট চাইছেন। তিনি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। নির্বাচিত হলে তিনি বীরগঞ্জ পৌরসভার ঐতিহ্য রক্ষণাবেক্ষণ করে নান্দনিক পৌরসভায় রূপান্তর, খাল রক্ষাসহ বিভিন্ন অসমাপ্ত উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত করাসহ সমাজের অবহেলিত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে নিজেকে নিয়োজিত করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এ সময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বীরগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোশাররফ হোসেন বাবুল মোবাইল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। তিনি এর আগে দুইবার জামায়াতের প্রার্থীল কাছে পরাজিত হয়েছে। বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার পরও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গহণ করেনি আওয়ামীলীগ। তিনি তাকে বহিস্কার করার দাবী জানান। তিনি বলেন নির্বাচন ঘিরে সুন্দর পরিবেশ বিরাজ করছে।

তবে বিদ্রোহী প্রার্থী বীরগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোশাররফ হোসেন বাবুল বলেন, আমাকে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোঃ হানিফ একটি চিঠি দিয়েছেন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য। যা সম্পন্ন অবৈধ।আমি নির্বাচনে শতভাগ বিজয়ের আশাবাদী। তিনি বলেন এখন পর্যন্ত সুষ্ঠ পরিবেশে নির্বাচনী প্রচার প্রচারনা চালাচ্ছি। কোন প্রতিবন্ধকতার সৃর্স্টি হয়নি।

দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বীরগঞ্জ পৌরসভার উপ নির্বাচনে জগ প্রতীকের প্রার্থী বিএনপি নেতা সাবেক ভিপি মোঃ রেজাওয়ানুল ইসলাম রিজু বলেন, সাধারণ ভোটার আমার পাশে আছে। আমি বিপুল ভোটে জয়ী হব। এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, সুন্দর পরিবেশ বিরাজ করছে। এই পরিবেশ পেলে ভোটাররা ভোট দেয়ার জন্য কেন্দ্রে আসবে। আর ভোটাররা আসলে আমার বিজয় নিশ্চিত। কোন বাঁধা আছে কিনা? বা আওয়ামীলীগ কোন প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে কিনা? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এর আগে এতো সুন্দর পরিবেশ দেখিনি। কোন প্রতিবন্ধকতা দেখতে পায়নি। স্বরণকালের সর্বচ্চো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আমি সন্তোষ্ট।

এদিকে আওয়ামীলীগের আপরেক বিদ্রোহী প্রার্থী বীরগঞ্জ পৌর বঙ্গবন্ধু সৈনিকলীগের আহ্বায়ক মোঃ দেলোয়ার হোসেন আবু নারিকেল গাছ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। তিনি বলেন পৌরসভায় ৯ টি কেন্দ্র। ইতমধ্যে নির্বাচন সুষ্ঠ করতে ৯ টি কেন্দ্রে ৯ জন ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। যা আগে কখন দেখিনি। এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে ভোটাররা নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে আসবেন।

তবে পৌর এলাকার বিভিন্ন মহল্লা ও ওয়ার্ডে ঘুরে বিএনপি- জামায়াত নেতাদের সঙ্গে ও ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। এই পৌরসভাটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে জামায়াতের প্রার্থী মেয়র পদে নির্বাচিত হয়ে আসছে। এবার জামায়াতের প্রার্থী নেই। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত এই পৌরসভাটি ধরে রাখতে তাদের ভোটারদের গোপনে ভোট দিতে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করছে। যদিও তারা এই নির্বাচনের বিরুদ্ধে। আর যদি শেষ পর্যন্ত তাই হয় তাহলে আওয়ামীলীগের দলীয় কন্দল ও একাধীক প্রার্থীল কারণে নৌকার পরাজয় কঠিন কিছু হবেনা।

আপরদিকে সংসদ ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে আওয়ামীলীগের মধ্যে যে গ্রুপিং বিরাজ করতে তার প্রভাব পড়তে পারে এই নির্বাচনে। সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিতরা বিরোধিতা না করলেও তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সক্রিয় ছিলনা। অপরদিকে উপজেলা নির্বাচনে তৃণমূলের ভোটে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি জাকারিয়া জাকা বিপুল ভোটে জয়লাভ করলেও তাকে বাদ দিয়ে ডিকবাজী দেয়া নেতা হিসাবে পরিচিত আমিনুল ইসলামকে মনোনয়ন দেয়া হয়। এ নিয়ে রয়েছে ঠান্ডা যুদ্ধ। এই নির্বাচনে আওয়ামীলীগের দুই জন বিদ্রোহী প্রার্থী। সে কারণে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে আওয়ামীলীগের নেতা কর্র্মীরা নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন।

উল্লেখ্য,জামায়াত নেতা বীরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মোঃ হানিফ পদত্যাগ করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করায় পৌরসভার মেয়র পদটি শূন্য হয়। আগামী ১৫ এপ্রিল মেয়র পদে ভোট গ্রহণ করা হবে।

পিবিডি/এআইএস

দিনাজপুর

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close