• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

আসছে বৈশাখ, ব্যস্ত সময় পার করছে পাল পরিবারগুলি

প্রকাশ:  ১১ এপ্রিল ২০১৯, ১৯:০২
দিনাজপুর প্রতিনিধি

আসছে বৈশাখ তাই ঘুম নেই লক্ষ্মী রানী পালের (৪০) চোখে। রাত দিন সমানতালে রং করে চলেছেন মাটির তৈরী গনেশ প্রতীমার। আসছে বৈশাখকে ঘিরে তাঁর এই আয়োজন। বিভিন্ন দোকান থেকে গনেশ প্রতীমা সরবরাহ করার জন্য আগে থেকেই অর্ডার নেওয়া হয়েছে ।

এছাড়া মাটির তৈরী বিভিন্ন খেলনা তৈরী করছে লক্ষ্মী রানী পাল । পহেলা বৈশাখে দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে বৈশাখী মেলা বসে । সেইসব মেলায় বিক্রির জন্য আগে থেকেই মটির তৈরী খেলনা রং লাগিরেয় শেষ করতে হবে । তাই ব্যস্ততা অনেক বেশি ।

স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি, দেবর, ভাসুর, এমনকি বাড়ীর ছোট ছেলে মেয়েরাও মাটির খেলনা তৈরী করতে পারে । পালবাড়ীর সকলেই গড়ছেন মাটির গাছ, পাখি, ফুল, ফুলের টব, ব্যাংক, ফলমূল আর কত কী? এসব রং করার দায়িত্ব পেয়েছেন লক্ষ্মী রানী পালের । ষ্প্রে মেশিন আর রং তুলির হাতে নিয়ে মনের মাধুরী মিশিয়ে রং ছড়াচ্ছেন তিনি মাটির তৈরী গনেশ প্রতীমা আরও অনেক খেলনাগুলোতে।

দিনাজপুর শহর থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দুরে বিরল উপজেলার বিজোরা ইউনিয়নের গনির মোড়স্থ শ্রীকৃষ্ণপুর পাল গ্রাম অবস্থিত । এ গ্রামের মাত্র ৪টি পরিবার প্রতিমা তৈরী কাজ করে আর ১০টি পরিবার মাটির তৈরীর কুমারের কাজ করেন। মাটি এ কাজের প্রধান উপকরণ। পাশের গ্রাম থেকে পাল পাড়ার কুমার পরিবারগুলি পলিমাটি সংগ্রহ করে গড়েন ওই পরিবারগুলো মাটির তৈজষপত্র, হাঁড়ি, কলসি, পিঠা তৈরীর সরঞ্জামসহ কত কিছু। এর পাশাপাশি কেউ কেউ গড়েন খেলনা।

বৈশাখী আয়োজনে পালপাড়ায় দম ফেলার সময় নেই উল্লেখ করে পলিন পাল বলেন জানান, আমাদের পরিবারের সদস্যরা মুলত প্রতীমা তৈরী করে থাকি । এ ছাড়াও খেলনা সামগ্রীর অনেক চাহিদা। ঈদ, দুর্গাপূজা, মহররম গ্রামীণ মেলায় এসব পণ্যের ব্যাপক চাহিদা। পূঁজির অভাবে আমরা চাহিদা অনুযায়ী খেলনা তৈরি করতে পারিনা।

সরেজমিনে গেলে কথা হয় পুতুল পালের সঙ্গে। তিনি জানান, হাতে সময় নেই। সামনে পহেলা বৈশাখ, তাই ফুরসত কম। পুতুলের পাশের কাঞ্চন মডেল কলেজের কলেজের ছাত্রী সন্ধ্যা পাল। ব্যস্ততার কারণে কিছুদিন ধরে কলেজে যাওয়া হচ্ছেনা তাঁর। বললেন, পরিবারকে সহযোগিতা করছি। তাছাড়া সবাই বলে, আমার হাতে রং করা নাকি খুব সুন্দর হয়। আমি নাকি রংয়ের শিল্পী, এই বলে হাসলেন তিনি।

মিলন পাল জানান, বৈশাখী মেলা উপলক্ষে দিনাজপুরের বিভিন্ন স্থান থেকে অর্ডার পেয়েছি। ভাসন্ত পুজার উপলক্ষ্যে প্রতীমা তৈরী করে ডেলিভারী দিয়েছে এছাড়াও কালী প্রতীমার অর্ডার পেয়েছি । এই বৈশাখে প্রায় ৩ লাখ টাকার প্রতীমা ও বিভিন্ন খেলনা বিক্রি হবে ।

এজন্য কুমার পাড়ার মানুষের ঘুম নেই। আমরা দুমাস ধরে কাজ করছি। মাটি দিয়ে খেলনা তৈরী, পোড়ানো, রং করা এসব অনেক কষ্টের কাজ। দু একদিনের মধ্যেই ট্রাক আসবে। ওই ট্রাকে চেপে চলে যাবে খেলনাগুলো দিনাজপুর পঞ্চগড় ঠাকুরগাওসহ বিভিন্ন জেলায় ।

পাল পাড়ার অরুন পাল বলেন খেলনা তৈরি করছিলেন। সুন্দর সুন্দর মুখাবয়ব, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ জাতীয় নেতাদের প্রতিকৃতি, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামের আব মূর্তি। আরও কত কী?

অজয় পাল বললেন, পুঁজি সংকটে আমাদের অনেকেই পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন। কিন্ত যদি এখানে ব্যাংকগুলো জামানতহীন ঋণ দেয়, তাহলে আমাদের তৈরী এসব খেলনা কেবল দেশে নয়, বিদেশেও বাজার পাবে।

তিনি জানান, পালপাড়ার কুমারেরা ভালো কাজ করতে চায়। এবার বৈশাখে আমরা পাঁচ লাখ টাকার খেলনা বিক্রি করবো। প্রতিটি খেলনার পাইকারী দাম নিচে ১০ টাকা থেকে শুরু করে ২০০ টাকা পর্যন্ত। এজন্য অবশ্য পূঁজির জোগান দিয়েছে গ্রামীণ ব্যাংকসহ কিছু কিছু স্বেচ্ছসেবী সংস্থা।

দিনাজপুর পুজা উৎযাপন পরিষদ জেলা কমিটির সভাপতি স্বরুপ বকসী বাচ্চু বলেন , বৈশাখ বাঙ্গালীদের সংস্কৃতি এই সংস্কৃতিতে হিন্দু ধমালম্ভিরা গনেশ পুজাসহ ভাসন্তী পুজা পালন করে থাকে ।

পহেলা বৈশাখে বিভিন্ন দোকানে হালখাতা ও পুন্যার আয়োজন করে থাকে । যেহেতু হিন্দু ধর্মালম্ভিরা গনেশ প্রতীমাকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে রেখে পুজা করে থাকে । এই প্রতীমা পাল পরিবারের নিকট থেকে সংগ্রহ করে থাকে । তাই এই সময় টা পাল পরিবারগুলি বেশি ব্যস্ত থাকে ।

তিনি আরোও বলেন পালপাড়ার কুমাররা ভালো ভালো কাজ করছেন। তাদের জন্য অবশ্যই পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। আমরা এনিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে কথা বলবো। পাল পরিবারগুলি বংশপরস্পরায় এসব কাজ করে চলেছেন।

পিবিডি/আর-এইচ

দিনাজপুর

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close