• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

রাজশাহীতে হাজতি ও কয়েদিদের নিয়ে প্রতারণা

প্রকাশ:  ২০ এপ্রিল ২০১৯, ০১:৩৫
রাজশাহী প্রতিনিধি

রাজশাহী জেলা কারাগারে হাজতি ও কয়েদিদের নামে প্রতারক চক্রের রমরমা অর্থ বাণিজ্য চলছে। কারাগারের অভ্যন্তরে বন্দিদের মধ্যকার কোন্দলের কারণে জরিমানা এবং গুরুতর অসুস্থতার চিকিৎসার কথা বলে বিভিন্ন কৌশলে স্বজনদের নিকট থেকে বিকাশের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয়া হছে।

প্রতারক চক্রটি জেল সুপার ও জেলারের নাম ব্যবহার করে কয়েকটি গ্রামীণ সিমের মাধ্যমে সুকৌশলে এসব কাজ করছে। এ ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, আইনজীবী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। বিষয়টি নিয়ে খোদ কারাগার কর্তৃপক্ষও বিব্রত অবস্তায় পড়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বেশ কিছুদিন থেকে কারাগারে বন্দি এক ব্যাংক কর্মকর্তার আত্মীয়কে মোবাইলে ফোন করে প্রতারক চক্রটি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বন্দি মামুনুর সরকার জেডের ফুফাতো ভাই এ্যাড. হাবিবুর রহমান হাসিবুলকে ফোন দেয় ওই চক্রের এক সদস্য। তাকে শামসুল নামের প্রতারক চক্রের ওই সদস্য বলে, বন্দী মামুনুর সরকার জেড কারারক্ষীর সাথে বিবাদে জড়িয়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটিয়েছে। এতে বন্দি মামুনুর সরকার জেডকে কিছুক্ষণ পরেই সিরাজগঞ্জ কারাগারে নেয়া হবে। জেডের কোন আত্মীয় থাকলে ০১৭৮৭৫২১৪৪৪ মোবাইল নম্বারে ফোন করতে বলেন।

এরপর এ্যাড. হাসিবুল জেডের বড়ভাই সাংবাদিক সরকার দুলাল মাহবুবকে জানান। সরকার দুলাল মাহবুব প্রতারক চক্রের ওই নম্বরে ফোন করলে ওপার থেকে বলেন ‘জেল সুপার বলছি। নামাজে যাব কি জানতে চান তাড়াতাড়ি বলেন’। জেড সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন জেড কারাগারের ভিতরে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়েছে। সন্ধ্যায় পরে জেডকে শাস্তিমূলক বদলির জন্য সিরাজগঞ্জ কারাগারে পাঠানো হচ্ছে । সরকার দুলাল মাহবুব বিষয়টি মার্সি করতে বলেন। তখন শামসুল নামের ওই প্রতারক বলে, ‘এই কারাগারে রাখতে চাইলে জেল কোড মতে আপনাকে জরিমানা দিতে হবে’। পাশাপাশি বলে ‘আপনাকে আপনার ভাইয়ের দন্ডের জন্য সাত হাজার ৮শ’ টাকা দিতে হবে।

অনুসন্ধ্যানে জানা যায়, সম্প্রতি নগরী থেকে মাদক রাখার অভিযোগে শিমুল নামের একজনকে আটক করে। কয়েক পর বন্দী শিমুলের স্ত্রী জেল সুপারের নাম করে বলেন, শিমুল কারাগারে মারা গেছে। কারাগারের কোড অনুপাতে ১৫ হাজার টাকা দিতে হবে। নইলে লাশ বেওয়ারিশ বলে দাফন করা হবে। এভাবে হাজতি ও কয়েদিদের আত্মীয়স্বজনের সাথে প্রতারণা করা হছে।

জেলা কারাগারে সম্প্রতি কয়েদি ও হাজতিদের নাম ব্যবহার করে জেল সুপার ও জেলারের নাম ভাঙিয়ে প্রতারক চক্রটির সক্রিয়তা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। যার কারণে প্রতিদিন কারাগারের অভ্যন্তরে সকালে ও বিকালে সব বন্দিকে এই বিষয় নিয়ে সতর্ক করা হচ্ছে যে কোনো ধরনের সংবাদ নিশ্চিত হওয়ার জন্য জেল সুপারের সরকারি মোবাইল নম্বর এবং জেলারের সরকারি নম্বরে নিশ্চিত হয়ে এবং সরেজমিন এসে কথা বলার জন্য বন্দিদের আত্মীয়দেরকে অনুরোধ করা হয়েছে।

রাজশাহী কারাগারের জেলার হালিমা খাতুন বলেন, রাজশাহী বিভাগের যে কোনো জেলার বন্দিরা অসুস্থ হলে চিকিৎসার জন্য ডিআইজির অনুমোদনে রাজশাহীতে আসেন। রাজশাহী জেল থেকে অন্যত্র বন্দিদের পাঠাতে হলে আদালত ও ডিআইজির অনুমোদন লাগে। পাশাপাশি কারাগারের মধ্যে নিয়মবহির্ভূত কার্যক্রম করলে আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কারাগারে রেখেই সেলে আটক, স্ট্যান্ডিং হ্যান্ডকাফ, আড়বেড়ি, ডান্ডাবেড়ি, কয়েদি বন্দির রেয়াদ কর্তন করা হয়। জেলের মধ্যে নিয়মবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের জন্য কোনো জরিমানা নেই। এ বিষয়ে আমরা নানাভাবে সচেতন করছি। তিনি আরো বলেন, ‘‘প্রতারক চক্র খুবই সক্রিয়। জেল সুপার ও জেলারের নাম ব্যবহার করে প্রতারক চক্র বিভিন্ন নম্বর দিয়ে বন্দিদের আত্মীয়ের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে।

পিবিডি/এআইএস

রাজশাহী

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close