ধর্ষিতা কন্যার সুচিকিৎসা-নিরাপত্তা পেতে দ্বারে দ্বারে পকিস্তানি নারী
ধর্ষিতা কন্যা হুমেরার সুচিকিৎসা আর নিরাপত্তা পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন পকিস্তানী নারী নিলুফা বেগম। শনিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে উত্তর গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা ভাসুর আব্দুল ওয়াদুদ এর মেয়ে মর্জিনার সহায়তায় হুমেরাকে নিয়ে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে আসেন তিনি।
বর্তমানে হুমেরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। সে পাকিস্তানের নিউ করাচি হাদিকা তুলিব ফান্ড স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী।
সম্পর্কিত খবর
নিলুফা বেগম জানান, গত ২০ বছর পূর্বে বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার উত্তর গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা গামেন্টর্স ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবীর এর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এরপর বেশ কয়েক বছর তাদের কাটে সংসার জীবন। এ সময় তাদের সংসারে কন্যা হুমেরার জন্ম হয়। হঠাৎ গত ১৫ বছর পূর্বে তিনি জানতে পারেন তারা স্বামী হুমায়ুন আততায়ীর গুলিতে নিহত হয়েছেন। তবে এ সংবাদটি পরবর্তীতে মিথ্যা ও তার স্বামী জীবিত এবং পাকিস্তানেই আছেন বলেও জানতে পারেন।
তবে গত বছর তিনি সংবাদ পান বাংলাদেশে বসবাসকারী তার শ্বাশুড়ি খুব অসুস্থ। এ কারণে ছয়মাসের ভিসা ও কন্যা হুমেরাকে সাথে নিয়ে স্বামীর বাড়িতে বেড়াতে আসেন। ওঠেন উত্তর গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা ভাসুর আব্দুল ওয়াদুদ এর বাড়িতে। তবে সেখানে উঠার পর থেকেই আরেক ভাসুর আবুল হোসেনের বখাটে ছেলে আল-আমিন ওই কিশোরীকে উত্ত্যক্ত করতে থাকে।
বেশ কয়েকবার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেও সে। ওই ঘটনার পরপরই পারিবারিকভাবে বিষয়টির ফয়সালা দেন তারা। তবে তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে আসার খবর পেয়ে বখাটে আল আমীন ক্ষুব্দ হয়ে ওঠে। গত ১৬ এপ্রিল রাতে একদল সন্ত্রাসীর সহযোগিতায় তাকে কাকার বাড়ি থেকে জোরপূর্বক অপহরণ করে। পরে আটকে রেখে একাধিকবার ধর্ষণ করে। এরপরও কন্যাকে ফিরে পেতে নানাভাবে চেষ্টা চালান নিলুফা বেগম।
এমতাবস্থায় গত ১৭ এপ্রিল আল-আমিনসহ তিনজনকে আসামি করে পাকিস্তানি নাগরিক নিলুফার বেগম গোপালপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পরপরই অভিযান চালিয়ে ঘটনার প্রধান আসামির মা আনোয়ারা বেগমকে (৪৭) গ্রেফতার করা হয়।
পরে ধর্ষকের মায়ের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার ভোর রাতে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার মহিষাকান্দি মোড়ের এক বাসা থেকে বন্দিবস্থায় ধর্ষিতা হুমেরাকে উদ্ধার করা হয়। তবে ধর্ষণের আলামত সংগ্রহের পরীক্ষা বা হাসপাতালে ভর্তি সংক্রান্ত কোনো তথ্য তিনি জানেন না বলেও জানান নিলুফা বেগম।
অপরদিকে ধর্ষণের পাঁচদিন পেরিয়ে গেলেও ধর্ষক গ্রেফতার না হওয়ায় বিচার প্রাপ্তির শঙ্কায় রয়েছেন তারা। এছাড়াও ভিসার মেয়াদ প্রায় শেষ হয়ে আসলেও ধর্ষিতা কন্যা হুমেরার সুচিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা না হওয়ায় পুনরায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। তবে হাসপাতালেও তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন এই পাকিস্তানি নারী।
ধর্ষিতা হুমেরার সুচিকিৎসা প্রাপ্তির সহায়তাকারী ও ভাসুর আব্দুল ওয়াদুদ এর মেয়ে মর্জিনা জানান, তার চাচাতো বোন ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি ও তার চাচাতো ভাই আল-আমিনকে না পেয়ে মা আনোয়ারা বেগমকে পুলিশের গ্রেফতার করাসহ ধর্ষিতার পরিবারকে সহায়তা করায় তার বাবা ওয়াদুদসহ সকলকে হত্যার হুমকি প্রদান করছে ধর্ষক আল-আমিনের পরিবার।
গোপালপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাসান আল মামুন জানান, ধর্ষক আল-আমিনকে এখনও গ্রেফতার করা না গেলেও তাকে ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এছাড়াও ২৫০ শষ্যা বিশিষ্ট টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি পাকিস্তানি পরিবারের নিরাপত্তায় পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
হাসপাতালে ধর্ষিতা হুমেরার ভর্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে তত্ত্বাবধায় ডাঃ নারায়ন চন্দ্র সাহা বলেন, ধর্ষণের আলামতে নেয়া সোয়াব পরীক্ষার ফলাফল এখনও তারা পাননি। এছাড়াও নানা শারীরিক সমস্যা জনিত কারণে ভর্তিরত হুমেরার সুচিকিৎসায় সকল ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
উল্লেখ, গত ১৬ এপ্রিল রাতে একদল সন্ত্রাসীর সহযোগিতায় তাকে কাকার বাড়ি থেকে কৌশলে অপহরণ করে। পরে আটকে রেখে একাধিকবার ধর্ষণ করে। এমতাবস্থায় গত ১৭ এপ্রিল আল আমীনসহ তিনজনকে আসামি করে পাকিস্তানি নাগরিক নিলুফার বেগম গোপালপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন।
১৯ এপ্রিল ভোরে ধর্ষক আল-আমিনের মা আনোয়ারা বেগম (৪৭)কে গ্রেফতার করাসহ জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার মহিষাকান্দি মোড়ের এক বাসা থেকে বন্দিবস্থায় ধর্ষিতা হুমেরাকে উদ্ধার করা হয়।
/অ-ভি