• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

রাজশাহীতে ২০১৭ সালে ২৬১ নারী ও ১৯৫শিশু নির্যাতনের শিকার

প্রকাশ:  ০১ জানুয়ারি ২০১৮, ০০:৩৪
রাজশাহী প্রতিনিধি

২০১৭ সালে রাজশাহী জেলার মহানগর ও নয়টি থানায় মোট ৪৫৬ টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে ২৬১ টি ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে ১৯৫ টি। স্থানীয় ও জাতীয় সংবাদপত্র সমূহ এবং এসিডির নিজস্ব প্রাপ্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে এই জরিপ পরিচালিত হয়েছে।

বছরের আলোচিত কয়েকটি ঘটনাসমূহ

সম্পর্কিত খবর

    বছরের প্রথম দিন বাগমারার খালগ্রাম বিষ্ণুপুর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক ইমাম উদ্দিন (৫০) কর্তৃক প্রতিবেশীর আট বছরের শিশুকন্যাকে ধর্ষণ।

    ৪ জানুয়ারি রাতে পারিবারিক কলহের জেরে নগরীর শিরোইল মাস্টারপাড়া এলাকার আব্দুল হান্নানের স্ত্রী শিউলী রায় (৫০)’র আত্মহত্যার চেষ্টা।

    ৭ জানুয়ারি বিকেলে যৌতুক সংক্রান্ত কলহের জেরে কাটাখালী শাহাপুর এলাকার আব্দুল মজিদের ছেলে মিঠুন আলী ও তার পরিবারের সদস্যদের দ্বারা স্ত্রী সুমি খাতুনকে (২৪) নির্যাতন ও শ্বাষরোধে হত্যা।

    ১৪ জানুয়ারি দুর্গাপুরের কয়া মাজমপুর গ্রামে বাড়িতে আগুন দিয়ে লাবণ্য প্রভাকে (৭০) হত্যা। মোহনপুরের বড়াইল উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষিকা কর্তৃক শিক্ষার্থী কে নির্যাতন, গোদাগাড়ী ও পবায় দুই শিশুকে অপহরণ, দুর্গাপুরে প্রতিবন্ধির স্ত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা এবং নগরীতে পারিবারিক কলহের জেরে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে নির্যাতনের পর চুল কেটে নেয়া।

    ২ ফেব্রুয়ারি সকালে বাগমারা উপজেলার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী খাদিজা আক্তারকে স্কুল যাওয়ার পথে লাথি মেরে ফেলে দিয়ে মোটর সাইকেল চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টা করে শ্রীপুর ইউপির তোফায়েল আহম্মেদ (২০) ও নয়ন হোসেন (২১)।

    চাহিদা মতো যৌতুকের টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় গত ৬ ফেব্রুয়ারি মোহনপুর উপজেলার ঘাসিগ্রাম পাইকপাড়ার বেলাল হোসেন ও তার বাবা-মা, ভাই মিলে স্ত্রী শাহানাজ বেগমকে (২৩) বেধড়ক মারপিট করে। এতে গুরুতর আহত ভিকটিমের পেটের বাচ্চা নষ্ট হয়।

    মোবাইল ফোন চুরির অপবাদে পুঠিয়ার তারাপুর বাজারে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি আরিফুল ইসলামকে (১২) গাছে বেঁধে মারপিট করে এরশাদ আলী ও শুভ ইসলাম।

    ৮ মার্চ দুপুরে দুর্গাপুর উপজেলার আন্দুয়া গ্রামে ছাগল চুরির অপরাধে জার্জিস হোসেন ও রতন নামের দশম শ্রেণি পড়ুয়া দুই কিশোরকে স্থানীয় ইউপিসদস্য ও জনপ্রতিনিধি কর্তৃক বেধেঁ নির্যাতন।

    ২৮ মার্চ রাতে নগরীর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অধ্যয়নরত মালদ্বীপের শিক্ষার্থী রাওথা আতিফের (২০) ফ্যানের সাথে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঝুঁলে আত্মহত্যা ইত্যাদি ছিল বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য।

    যৌতুকের টাকা আনতে অপারগতা প্রকাশ করায় গত ৩ এপ্রিল রাতে বাগমারার হাট গাঙ্গোপাড়ার কলেক শিক্ষকহাফিজুর রহমানবাবলু (৩৫) কর্তৃক স্ত্রী রোজিনা বেগমকে (২৪) ধারালো অস্ত্র দিয়েআঘাতের পর শ্বাস রোধে হত্যার চেষ্টা।

    ৪ এপ্রিল গভীর রাতে নগরীর কুমারপাড়ার শাজাহানআলীর ছেলে শাকিল কর্তৃক গৃহকর্মীকে (২৭) ধষর্ণে ব্যর্থ হয়ে হত্যার চেষ্টা

    ৬ এপ্রিল বাঘার বাজু বাঘা ইউপির চেয়ারম্যান জান্নাত আলী ও সদস্য আলাউদ্দিন কর্তৃক এক নারী ইউপি সদস্যকে ধর্ষণ, মাদক ব্যবসার টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে ভারতীয় নাগরিক সাদ্দাম ও আজাদ হোসেন কর্তৃক গত ১৩ এপ্রিল গোদাগাড়ীর চর আষাড়িয়াদহ ইউপির চর বয়ারমারী গ্রামের আবদুস সালামের পুত্র সিয়ামকে (৬) অপহরণ করে ভারতে গমন।

    ২১ এপ্রিল নগরীর ভোলাবাড়ি এলাকার ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থীকে দু’জন মহিলা কর্তৃক অপহরণের পর নগরীর ভদ্রায় লোক দিয়ে ধর্ষণ।

    ১৯ জুন সকালে তানোর উপজেলার পাঁচন্দর ইউপি রবনকেশর ফকিরপাড়ার মেহেদী হাসান অন্তসত্ত্বা স্ত্রী রুকাইয়া খাতুন বিউটিকে (২০) পারিবারিক কলহ ও যৌতুকের কারণে বালিশ চাঁপা দিয়ে হত্যাকরে। ৯ জুন সকালে দুর্গাপুর হাটকান পাড়ার আরিফুল হক নামক শিক্ষক ৯ বছরের শিশুকে বলাৎকারের চেষ্টাকরে।

    ৭ জুলাই রাতে গোদাগাড়ীর মুরারীপুরে মোস্তফা আলীর ছেলে মাসুম রেজা (২৬) যৌতুকের জন্য স্ত্রী মোসাঃ এলিনা খাতুনকে (২১) বেধড়ক মারপিট করে হত্যা করে। ২০ জুলাই নগরীর মতিয়া বিলমা জার পাড়ার জমশেদ আলীর স্ত্রী হীরা বেগমকে (৩৬) পরকীয়ার জেরে এসিড নিক্ষেপ করে জনৈক নারী। পরে ভিকটিম মারাযায়।

    ১ আগষ্ট রাজশাহীর বাঘা থানার আড়ানী ইউপি রহরিপুর গ্রামে প্রতিবেশীর বাসা থেকে আসার সময় ৬ষ্ঠ শ্রেনীর এক ছাত্রীকে বাউসা ইউপির মোহাম্মদ আলীর ছেে লজাকির হোসেন (২০) ও রমজান আলীর ছেলে জাকির হোসেন (২২) কর্তৃক ধষনে শিকার হয় ।

    নগরীর নওদাপাড়ায় গ্রিন গার্ডেনের গেষ্ট হাউসে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষার্থীকে এভারগ্রীন পলিটেকনিকের পরিচালক শামসুল আলম বাদশা ও ইজি টাস কম্পিউটার দোকানের মালিক আবু ফায়েজ নাহিদ কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হয়।

    ৫ আগস্ট নগরীর অক্টোয় মোড় এলাকায় মামুনুর রশিদ শান্ত কর্তৃক আড়াই বছরের শিশু ধর্ষনের শিকার ২২ আগষ্ট পুঠিয়ায় চতুর্থ শ্রেনীর ছাত্রীকে ধর্ষণ।

    ৪ অক্টোবর পুঠিয়া উপজেলার শিলমারিয়া ইউপির বটতলা-কার্তিক পাড়ার জনৈক ব্যক্তির স্ত্রীকে (৩০) সাত জন মিলে ধর্ষণ।

    ৬ অক্টোবর তানোরে বেড়াতে এসে প্রেমিক কর্তৃক জনৈক তরুণীকে (১৭) ধর্ষণ, ১৫ অক্টোবর নগরীর খড়খড়িতে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে হাসুয়া দিয়ে এক শিশু ও দুই নারীকে হত্যা চেষ্টা। ২০ অক্টোবর ভাতিজিকে যৌন হয়রানীর প্রতিবাদ করায় নগরীর শ্যামপুর এলাকায় বখাটে কর্তৃক জয়নব বেগমের দুই হাত ভেঙ্গে দেয়। ২৩ অক্টোবর মোহনপুরে বখাটে কর্তৃক ৯ম শ্রেণি পড়ুয়া শিশুকে অপহরণ ইত্যাদি ছিল উল্লেখ যোগ্য।

    ৬ ডিসেম্বর নগরীর লক্ষীপুর ইন্সটিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিতে নিরাপত্তার দাবীতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলায় ১০ জন নারী শিক্ষার্থী আহত হয়।

    ১১ ডিসেম্বর নগরীতে প্রগতি লাইফইন্সুরেন্স’র রিজিওনাল অফিসে কর্মী জয়নাল আবেদিন ও একরাম কর্তৃক এক কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণ।

    ২২ ডিসেম্বর নগরীর তালাইমারী নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মাহিম (৯) কে দূবৃর্ত্ত কর্তৃক হত্যা চেষ্টা। ২৬ ডিসেম্বর গোদাগাড়ীতে মালেকা বেগমকে (৬৫) হত্যা করে আখ খেতে যায় দূবৃর্ত্তরা।

    জেলায় গত বছর ২৬১টি নারী নির্যাতনের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে মহানগরীর চারটি থানায় সংগঠিত হয়েছে ১০৩ টি । মহানগরীর বাহিরের থানা সমূহে সংঘটিত হয়েছে ১৫৮ টি নির্যাতনের ঘটনা। এর মধ্যে বাগমারা ৩২ টি, দূর্গাপুর ২৬ টি, গোদাগাড়ী ২২ টি, বাঘা ২০ টি, তানোর ১৭ টি, মোহনপুর ১৫ টি, চারঘাট ১৩ টি, পুঠিয়া ৮ টি, পবা ৫ টিকরেনারীনির্যাতনেরঘটনা ঘটে । এরমধ্যে হত্যা ১৪টি, হত্যার চেষ্টা ১০টি , রহস্যজনকমৃত্যু ৪ টি, ধর্ষণ২৪টি, ধর্ষণের চেষ্টা১০টি, অপহরণ ৩ টি, এসিড নিক্ষেপ ১টি, যৌনহয়রানী ১৯টি, পারিবারিক বিরোধ, জমি নিয়ে সংঘর্ষে সহ অন্যান্য ঘটনা ঘটে ১৩০টি। আতœহত্যা ৩৯ টি, আত্মহত্যার চেষ্টা ৭টি ।

    জেলায় গত বছর শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে ১৯৫টি। এর মধ্যে মহানগরীতে সংগঠিত হয়েছে ৫৫টি এবং মহানগরীর বাহিরের নয়টি থানায় সংঘটিত হয়েছে ১৪০টি। এর মধ্যে বাঘা ২৮ টি, তানোর ২২ টি, মোহনপুর ২১ টি,গোদাগাড়ী ১৬ টি, পুঠিয়া ১৫টি, দূর্গাপুর ১৪টি, বাগমারা ১২, চারঘাট ৭ ও পবা ৫ টিকরে শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এ বছরে শিশু হত্যা ৫টি, হত্যার চেষ্টা ৫টি, ধর্ষণ ২২টি, ধর্ষণের চেষ্টা ১২টি, পাচার ১ টি, অপহরণ ২০, আত্মহত্যা ৩৫টি, আতœহত্যার চেষ্টা ৫ টি, যৌনহয়রানী ৩৩টি ও অন্যান্য ঘটনায় ৫৭টি শিশু নির্যাতনের শিকার হয়।

    সারাদেশ

    অনুসন্ধান করুন
    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close