• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

হাবিপ্রবিতে ছাত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক, শিক্ষকের দাবি ষড়যন্ত্র

প্রকাশ:  ২৮ জুলাই ২০১৮, ১০:৩৭ | আপডেট : ৩১ জুলাই ২০১৮, ১৭:৪২
দিনাজপুর প্রতিনিধি

দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি)এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্ত্রীর প্রতি কথিত অত্যাচার-নির্যাতনের অভিযোগ এবং ছাত্রীর প্রতি মানসিক নির্যাতনের অভিযোগটি উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে বলে অভিযুক্ত শিক্ষকের দাবি ।

স্ত্রীর অভিযোগটি অত্যাচার-নির্যাতনের প্রতিবাদের প্রসঙ্গে হলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটিকে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনায় গঠিত যৌন হয়রানি অভিযোগ গ্রহণকারী কমিটিতে প্রেরণ করেন বলে জানা যায়। তবে অভিযুক্ত শিক্ষক অসঙ্গতিপূর্ণ কমিটির তদন্ত স্থগিতের আবেদন করলে তদন্ত স্থগিত করে বলা হয়, 'আপনার বিরুদ্ধে যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে তা আপনার স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে গঠিত অথচ হাইকোর্টের নির্দেশনায় গঠিত কমিটির গঠনকাল ০৩.০৮.১৭ ইং, যা এই অভিযোগের অনেক পূর্বে গঠিত দাবী অভিযুক্ত শিক্ষকের।

অভিযুক্ত শিক্ষকের কাছে জানা যায়, কোন তদন্ত কমিটি ঐ শিক্ষকের কোন বক্তব্য ছাড়াই তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়; যার পরিপ্রেক্ষিতে ১১.০৭.১৮ তারিখে ছাত্রী মোছাঃ শারমিন আকতারের সাথে যৌন সম্পর্ক তৈরির চেষ্টার অভিযোগ এনে কৈফিয়ত তলব করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু ঐ ছাত্রীর মানসিক নির্যাতনের অভিযোগটি তদন্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২১.০৯.১৭ ইং তারিখেই অভিযোগটি নিস্পত্তি করেছে বলে জানা গেছে।

ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জানা যায়, ঐ শিক্ষকের বিরুদ্ধে মাস্টার্সের ঐ ছাত্রী মোছাঃ শারমিন আক্তার যথা সময়ে গবেষণা প্রস্তাবনা জমা দিতে না পারায় তার সাথে রুঢ় আচরণ করলে ক্ষুব্ধ হয়ে এবং একই বিভাগের ড. আজিজুল হকের তত্বাবধানে কাজ করার আশ্বাস পেলে ১৮.০৭.১৭ ইং তারিখে বিভাগীয় প্রধানের কাছে তত্বাবধায়ক পরিবর্তনের আবেদন নিয়ে যান। তবে ব্যক্তিগত রেষারেষির জেরে তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান শুকলা রানী দাস ঐ ছাত্রীকে রেজিস্ট্রার বরাবর মানসিক নির্যাতনের আবেদন দেয়ার পরামর্শ দেন বলে ঐ শিক্ষক দাবী করেন।

পরবর্তীতে ঐ ছাত্রী ২০.০৭.১৭ ইং তারিখে রেজিস্ট্রার বরাবর মানসিক নির্যাতনের আবেদন দিলেও একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিকৃতভাবে সেটি 'যৌন হয়রানীর চেষ্টার অভিযোগ' উলে­খ করে খবর প্রকাশিত হয়। বিশ্বস্ত সুত্রে জানা গেছে, এই ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ আগে অভিযুক্ত শিক্ষককে বর্তমান প্রশাসনের সাথে থাকার কারনে এবং সাবেক প্রশাসনের কিছু সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রশাসনের একজন প্রভাবশালী শিক্ষকসহ বিভিন্ন সময়ে একাধিক শিক্ষক তাদের নিজেদের কক্ষে ডেকে নিয়ে হুমকি দেন। পত্রিকার বিকৃত প্রতিবেদনসহ পরবর্তি সময়ে যত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় সেগুলো তৈরিতে তাদেরই ইন্ধন আছে বলে জানিয়েছেন অভিযুক্ত শিক্ষক।

সম্প্রতি জানা যায়, শুকলা রানী ছাত্রীর মানসিক নির্যাতনের অভিযোগের মাধ্যমে ঐ শিক্ষককে পরাস্ত করতে না পেরে বর্তমান বিভাগীয় প্রধান ড. আবু সাঈদকে শিক্ষা ছুটিতে থাকাকালীন ঐ শিক্ষক বিভাগীয় প্রধান হতে চেয়েছেন বলে প্ররোচিত করেন।এখানেই শুধু ক্ষান্ত নয়, এই শুকলা রানী এবং ড. আজিজুল হক তাদের বাড়ীর একই গৃহ কর্মীর দ্বারা যোগসাজস করে অভিযুক্ত শিক্ষকের নামে মিথ্যা ও বানোয়াট কথা বার্তাও ছড়ানোর চেষ্টা করে। এদিকে অভিযুক্ত শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ড. সাঈদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ পত্র দাখিল করেছেন।

অভিযোগপত্রে উল­খে আছে ড. সাঈদ ঐ শিক্ষকের পারিবারিক মনোমালিন্যের সুযোগ নিয়ে তার স্ত্রী ও শশুর-শাশুড়ীকে উক্ত পত্রিকার মিথ্যা প্রতিবেদনের শিরোনামের ভিত্তিতে অভিযোগ দিতে উস্কানি দেন। অভিযুক্ত শিক্ষকের স্ত্রী উক্ত শিরোনাম উল্লে­খ পূর্বক তার উপর অত্যাচার-নির্যাতনের প্রতিবাদ করে ১৬.০১.১৮ ইং তারিখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে একটি আবেদন করেন।

স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীর অভিযোগটি অত্যাচার-নির্যাতনের প্রতিবাদের প্রসঙ্গে হওয়া সত্তেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটিকে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনায় গঠিত যৌন হয়রানী অভিযোগ গ্রহণকারী কমিটিতে প্রেরণ করে বলে জানা যায়। এদিকে ১৫.০৫.১৮ ইং তারিখের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রেজিস্ট্রার উলে­খ করেন, 'হাবিপ্রবিতে কোন শিক্ষার্থী কর্তৃক যৌন নির্যাতনের কোন অভিযোগ আসেনি এবং ঐ শিক্ষকের বিরুদ্ধে করা ছাত্রীর অভিযোগটিও ছিল মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ। এছাড়াও ঐ শিক্ষকের স্ত্রীর অভিযোগটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক গঠিত একটি তদন্ত কমিটি তদন্ত করছে'।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য ও কাজের গড়মিল থাকায়, গঠিত তদন্ত কমিটি অভিযুক্ত শিক্ষকের স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে গঠিত বলার পরও, এবং মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনায় গঠিত কমিটির গঠনকাল ০৩.০৮.১৭ ইং, যা অভিযোগ দেয়ার অনেক পূর্বে হওয়ায় অযৌক্তিকভাবে একটি মিমাংসিত বিষয়ে কৈফিয়ত তলব করা হয়েছে বলে দাবী করেছেন অভিযুক্ত শিক্ষক।

বিভাগের শিক্ষকদের সাথে ব্যক্তিগত রেষারেষির কারণ সম্পর্কে অভিযুক্ত শিক্ষক বলেন, 'শুকলা রাণী দাস শিক্ষার্থীদের নিয়ে দেশ ভ্রমণের ছুটি শেষে অনুষদীয় ডীনকে না জানিয়ে ঐ শিক্ষককে মৌখিকভাবে জানিয়ে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে বলেন।' অনুষদীয় ডীন প্রয়োজনে শুকলা রাণীকে বিভাগে না পেয়ে কৈফিয়ত তলব করবেন বলে ক্ষিপ্ত হন, বিষয়টি শুকলা রাণীকে ফোনে জানালে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যক্তিগত রেষারেষির সূত্রপাত হয়। অন্যদিকে ড. আজিজুল হক তার প্রজেক্টে কাজ করার জন্য ওই ছাত্রীকে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক প্রাথমিকভাবে রাজি না হওযায় এবং বিভাগে গবেষণা যন্ত্রাংশ ক্রয়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয প্রস্তাবনা চাইলে ড. আজিজুল হক শুধু তার প্রয়োজনীয যন্ত্রাংশ ক্রয়ের প্রস্তাব করেন যাতে ওই শিক্ষক বিভাগের সাধারণ যন্ত্রাংশ ক্রয়ের উদ্দেশ্যে প্রতিবাদ করলে ড. আজিজুল হকের সাথে অভিযুক্ত শিক্ষকের ব্যক্তিগত রেষারেষি শুরু হয।

কৈফিযত তলবের জবাব দেওযার বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয কর্তৃপক্ষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে বলেন, নিষ্পত্তিকৃত বিষয় এবং মিথ্যা ও বানোযাট অভিযোগ থেকে তাকে মুক্ত করে কর্তৃপক্ষ ন্যায্য বিচার করবেন বলে তিনি আশা করেন।

বর্তমান বিভাগীয় প্রধান ড. আবু সাঈদ জানান, আমার বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ ড. রমজান আলী মনগরা ভাবে তৈরী করে প্রতিবেদকের নিকট সরবরাহ করেছে । আমি যেহতেু হাবিপ্রবি প্রশাসনের সাথে আছি তাই আমাকে নিয়ে ষড়যন্ত্রের পায়তার করছে । নিজের কুকর্ম ঢাকার জন্য ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে প্রমাণিত হয়েছে যে অভিযোগকারী ছাত্রীর অভিযোগ সত্য। তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে তদন্ত রির্পোট পেশ করা হয়েছে ।

ড. আজিজুল ইসলাম জানায়, আমার সম্পর্কে ড. রমজান আলী অসত্য তথ্য সরবরাহ করেছে। নিজের পাপ মোছনের জন্য নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে দিয়ে নিজে পর পাওয়ার চেষ্টা করছে ।

শুকলা রানী দাস জানায়, আমার বিভাগের তিনজন শিক্ষক সম্পর্কে ড. রমজান আলী শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনগরা মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। ড. রমজান আলীর সাথে আমার ব্যাক্তিগত কোন রেষারেষি নেই। তিনি একজন শিক্ষক আমিও একজন শিক্ষক আমাদের মধ্যে কেন রেষারেষি থাকবে । তার কুকীর্তির জন্য সে নিজেই দায়ী । যা দৃশ্যমান ।

/পি.এস

দিনাজপুর,হাবিপ্রবি,ছাত্রী,যৌন,শিক্ষক

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close