• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

বালিয়াটী জমিদার বাড়ি পর্যটন বিকাশে প্রধান বাধা যোগাযোগ ব্যবস্থা

প্রকাশ:  ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৫:৩৫
হাসান ফয়জী, মানিকগঞ্জ

বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ আয়তনের বালিয়াটী জমিদার বাড়ির পর্যটন বিকাশে প্রধান বাধা যোগাযোগ ব্যবস্থা। ঢাকা থেকে সাটুরিয়া পর্যন্ত সড়ক ব্যবস্থা ভাল থাকলেও মানিকগঞ্জ থেকে সাটুরিয়া-বালিয়াটী জমিদার বাড়ির প্রায় ১৫ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা নাজুক। অপরদিকে ঢাকা থেকে সাটুরিয়াগামী ভালমানের বাস না থাকায় পর্যটন বিকাশে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে বালয়াটী জমিদার বাড়ী।

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলায় বালিয়াটী গ্রামে ৫.৮৮ একর জমির উপর অবস্থিত জমিদার বাড়ি। এ জমিদার বাড়িটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আয়তনের জমিদার বাড়ি। ঢাকার খুব কাছে অবস্থিত হওয়ার পরও যোগাযোগ ব্যবস্থা, ভালমানের বাস সার্ভিস, ভাল খাবার হোটেল এবং রাতে থাকার কোন ব্যবস্থা না থাকায় এটি পর্যটনের বিকাশে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

বালিয়াটী জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের খ্রিষ্টীয় উনিশ শতকের দিকে অপূর্ব নির্দশন হিসেবে স্থাপন করেন বালিয়াটীর তৎকালিন জমিদার গোবিন্দ রাম সাহা। তিনি ছিলেন খ্রিষ্টীয় আঠার শতকের বড় মাপের একজন লবণ ব্যবসায়ী।

বালিয়াটী জমিদার বাড়িটি বর্তমানে প্রত্নত্ব অধিদপ্তরের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। বালিয়াটী জমিদার বাড়িতে সাতটি খন্ডে বিভক্ত বিভিন্ন স্থাপনা যাতে প্রায় দু শতাধিক কোঠা। বাড়ির উত্তরে দিকে রয়েছে ছয়ঘাটলা যুক্ত একটি পুকুর। জমিদার বাড়িটির চারদিকে সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। দক্ষিণ প্রাচীরে পাশাপাশি একই ধরনের চারটি খিলান দরজা। প্রতিটা বড় গেটের উপর রয়েছে একটি করে সিংহ। প্রতিটি ভবরে সামনে রয়েছে কাঠের সিড়ি, লোহার বিম, ঢালাই লোহার পেচানো সিঁড়ি, জানালায় রয়েছে রঙ্গিন কাঁচ। রংমহলের ভিতরে রয়েছে বিশাল আকৃতির বেলজিয়াম আয়না, কারুকার্যখচিত দেয়াল ও আকর্ষণীয় ঝাড়বাতি। কথিত রয়েছে এসব স্থাপনা তৎকালিন সময়ে লন্ডন থেকে কারিগর এনে তৈরি করেন।

এ ব্যাপারে বালিয়াটী জমিদার বাড়ীর কেয়ারটেকার ইব্রাহিম জানান, শীত মৌসুমের শুরু থেকেই দেশি বিদেশি পর্যটকদের ভীড় বাড়ে। বিশেষ করে শুক্রবার ও শনিবার থাকে উল্লেখযোগ্য বেশী চাপ থাকে। জমিদার বাড়ীর নিকটেই, মিনি পার্ক, ঈশ্বর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় ও রামকৃষ্ণ সংলগ্ন বালিয়াটী উত্তর মাঠ থাকাতে ওখানে পর্যটকরা ষ্টেজ করে দুপরে খাবার দাবার ও বিভিন্ন ইভেন্টের আয়োজন করে। খুব অল্প খরচে তারা এ ব্যবস্থা করার কারণে এ জমিদার বাড়ী সবার পছন্দের হয়ে উঠেছে।

বালিয়াটী জমিদার বাড়ীর টিকেট মাষ্টার মোঃ মিজানুর রহমান জানান, ছোটদের জন্য ৫ টাকা, বড়দের ২০ টাকা, সার্কযুক্ত দেশের জন্য ১০০ টাকা এবং এর বাইরের নাগরিকদের জন্য ২০০ টাকা টিকেট মূল্য ধরা হয়েছে। প্রতিদিন শতশত পর্যটকরা এখানে ভিড় করে। বিশেষ করে শুক্রবার ও শনিবার কয়েক হাজার পর্যটকরা ছুটে আসে এখানে। প্রতিবছর শীত মৌসুমে দুই থেকে আড়াই লক্ষাধিক টাকা এবং দুই ঈদ, পহেলা বৈশাখসহ সব উৎসবে প্রায় দুই লক্ষ টাকা করে টিকির বিক্রি করা যায়।

তবে বালিয়াটী জমিদার বাড়িতে লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব আদায় হলেও এতে প্রধান বাধা হচ্ছে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল না থাকায়। গাবতলি থেকে সাটুরিয়া বাজার পর্যন্ত সড়ক ব্যবস্থা ভাল থাকলেও সাটুরিয়া- বালিয়াটী জমিদার বাড়ীর ৩ কিলোমিটার সড়ক অবস্থা খুবই নাজুক। এ সড়কটি খানাখন্দে ভরে চলাচলের সম্পুর্ণ অযোগ্য হয়ে পড়েছে। অপরদিকে গাবতুলি থেকে সাটুরিয়া সড়কে ভাল যানবাহন নেই। ফলে মাত্র দেড় ঘন্টার সড়কে এসবি লিংক ও জনসেবা নামক বাসে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা সময় লাগে।

আাবার মানিকগঞ্জ থেকে বালিায়াটী জমিদার বাড়ী পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়লেও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। ফলে বালিয়াটী জমিদার বাড়ীতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।

বালিয়াটী জমিদার বাড়ীর এলাকার অরবিন্ধ চন্দ্র দাস বলেন, আমাদের এ জমিদার বাড়ীকে কেন্দ্র করে অনেক দোকান ঘরে উঠলেও ভালমানের খাবার হোটেল ও থাকার কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে এখানে পর্যটকরা এসে খাবার ও থাকা নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।

এ ব্যাপারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম খান, রবিন বলেন, আমরা ১৫ জন সহপাঠী নিয়ে এ জমিদার বাড়ীতে আসলাম। সব ভাল লেগেছে কিন্তু দুপুরে খেতে গিয়ে এখানে ভাল কোন খাবার হোটেল পেলাম না। বালিয়াটী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. রুহুল আমিন বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন কয়েক কোটি টাকার সংস্কার কাজ হয়েছে এখানে। এ জমিদার বাড়ির এলাকায় আইন শৃংখলা অবস্থা খুবই ভাল। তবে এখানে ভালমানের খাবার হোটেল ও থাকার ব্যবস্থার জন্য উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের নিকট আমি লিখিত ভাবে জানাব।

এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক এস, এম ফেরদৌস বলেন, কিছুদিন আগে পর্যটন সচিব মহোদয় বলিয়াটী জমিদার বাড়ী পরিদর্শনে এসেছিলেন। তখন এ জমিদার বাড়ী থেকে বালিয়াটী ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত ওয়ার্কওয়ে ও সিবিটি সেন্টার নির্মাণের জন্য ৭০ লক্ষ টাকা বরাদ্ধ দিয়েছেন। এটি এই অর্থবছরের মধ্যেই নির্মাণ কাজ শুরু হবে। আর দ্রুত এখানে খাবার হোটেলেও ও থাকার ব্যবস্থার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

/পি.এস

মানিকগঞ্জ,পর্যটন,যোগাযোগ,জমিদার

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close