• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

ডিমওয়ালা মা ইলিশ ফ্রিজে রেখে রমরমা ব্যবসা

প্রকাশ:  ০২ নভেম্বর ২০১৮, ১৫:৩৯
ঝালকাঠি প্রতিনিধি

মা-ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে উপকূলের নদ-নদী ও বঙ্গোপসাগরে পুনরায় ইলিশ ধরা শুরু হয়েছে। গত ৪ দিনই শহরের বড় বাজারের মোকামে প্রচুর পরিমাণ ইলিশের আমদানি হয়েছে। এতে গত ২২ দিন অলস সময় পার করার পর মোকামের মৎস্য শ্রমিকদের মধ্যে কর্মব্যস্ততা ফিরে এসেছে।

মঙ্গলবার, বুধবার ও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার মণ ইলিশের আমদানি হয়েছে এ বাজারে। টানা ২২ দিন বন্ধ থাকার পর প্রত্যাশার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ইলিশের আমদানিতে কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার শ্রমিক ও ইলিশ ব্যবসায়ী। ইলিশের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দামও তুলনামূলক কম।

তবে নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পরপরই বিপুল পরিমাণ ইলিশের আমদানি হওয়ায় অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতা নিয়ে। এছাড়া ধরা পড়া কিছু কিছু ইলিশের পেট ছিল ডিমে ঠাসা। এ অবস্থার মধ্যেই মৎস্য বিভাগ দাবি করছে, ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি সফল হয়েছে। তবে জেলে ও মৎস্যজীবীদের এই অভিযানের সফলতা নিয়ে দ্বিমত আছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ইলিশ ব্যবসায়ী জানান, নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ইলিশ ধরে বিভিন্ন কৌশলে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। যা বিক্রির জন্য মোকামে আনা হয়েছে। এদিকে সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ইলিশে সয়লাব শহরের বড় বাজার, পূর্বচাঁদকাঠি বাজারসহ জেলার বিভিন্ন বাজারে । ছোট ছোট ট্রলারে ও নৌকায় মাছ আসতে শুরু করে। প্রতিটি ট্রলার ও নৌকা ছিল ইলিশে বোঝাই।

বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টায় বড় বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, প্রত্যাশার চেয়ে কয়েকগুন বেশি ইলিশের আমদানিতে কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার শ্রমিক ও ইলিশ ব্যবসায়ীরা। দাম কম হওয়ায় খুচরা ক্রেতারাও হুমরি খেয়ে পড়েছেন ইলিশ কিনতে। আমদানি হওয়া ইলিশের মধ্যে ডিমওয়ালা এবং সদ্য ডিম ত্যাগ করা দু’টিই রয়েছে। তবে ডিমওয়া মা ইলিশের সংখ্যাই বেশি। এর মধ্যে আগে মজুদ করা ইলিশও রয়েছে বলে ক্রেতারা অভিযোগ করেছেন।

জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ডিমওয়ালা ইলিশের প্রজনন নিরাপদ করতে গত ৬ অক্টোবর দিবাগত রাত ১২টার পর দেশের সকল নদ-নদীতে সব ধরনের মাছ ধরার ওপর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে নদ-নদীতে মাছ শিকার রোধে মৎস্য বিভাগ এবং প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে ১২১ টি ভ্রাম্যমাণ আদালত এবং ২১২ টি অভিযান পরিচালিত হয়। এ সময় ৪১ জন জেলের প্রত্যেককে ১ বছর করে দণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। জরিমানা আদায় করা হয় ৮৬ হাজার ৫শ টাকা। জব্দ করা হয় প্রায় ৮৪৩ কেজি ইলিশ ও ৪লাখ ৩৯ হাজার মিটার জাল। জালগুলো আটকের পরপরই জনসম্মুখে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৬৬ লাখ টাকা।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বাবুল কৃষ্ণ ওঝা বলেন, এবারের অভিযান ব্যাপকভাবে সফল হয়েছে। আমরা ভবিষ্যতে এর প্রতিফলন দেখতে পাব। বিগত বছরের চেয়ে এ বছর অনেক বেশি ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য সাগর থেকে নদীতে এসেছে। জেলেরা নিষেধাজ্ঞা মান্য করেছে। কিছু মৌসূমী জেলে নদীতে নেমেছিলো মা ইলিশ শিকারে তাদের আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দন্ড দেয়া হয়েছে। সে কারণে প্রচুর ইলিশ আমদানি হয়েছে।

আগে মজুত করে রাখা ইলিশও বিক্রি হচ্ছে- ক্রেতাদের এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডিম ছাড়ার পর মা ইলিশ দুর্বল হয়ে পড়ায় সহজেই জেলেদের জালে ধরা পড়ে। যে কারণে নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর পর জেলেরা অন্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি ইলিশ পেয়েছেন। আর মোকামে আমদানি হওয়া ইলিশ স্থানীয় নদ-নদীতে রোববার রাত থেকে ধরা হয়েছে। মজুত করা ইলিশ বিক্রির অভিযোগ সঠিক নয়।

ইলিশের পেটে ডিম থাকার বিষয়ে বাবুল কৃষ্ণ ওঝা বলেন, কিছু ইলিশের পেটে ডিম থাকবে এটাই স্বাভাবিক । তবে এবার ৫০ ভাগের বেশি মা ইলিশ ডিম ছাড়তে পেড়েছে।

ঝালকাঠি শহরের বড় বাজারের মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানান, ৩দিনে প্রায় ৫ হাজার মণ ইলিশের আমদানি হয়েছে। এসব ইলিশ এসেছে আশপাশের নদ-নদী থেকে। কয়েক দিনের বৃষ্টি ও বাতাসের কারণে নদীর ওপর দিকে উঠে আসায় প্রচুর পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়েছে।

দামের বিষয়ে তারা বলেন, এক কেজি থেকে এর বেশি সাইজের প্রতি মণ ইলিশ ৩৫ থেকে ৩৭ হাজার, এলসি সাইজের (৭০০-৮০০ গ্রাম) ইলিশ প্রতি মণ ২০ থেকে ২২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৫০০-৬০০ প্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকা। আর ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম (ভ্যালকা) সাইজের প্রতি মণ ১৪ থেকে ১৬ হাজার এবং ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম সাইজের (গোটলা) প্রতি মণ ইলিশ পাইকারী ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ব্যবসায়ী বাচ্চু মিয়া বলেন, এখন কেবল নদীর মাছ আসছে। আর ২/১ দিন পরেই সাগরের মাছ আসবে। তখন দাম আরও কমবে।

ওএফ

ইলিশ

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close