• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

আমজাদ হোসেনের জামালপুরে সিনেমাহল বিলুপ্তির পথে

প্রকাশ:  ০৫ জানুয়ারি ২০১৯, ২১:৫৫ | আপডেট : ০৫ জানুয়ারি ২০১৯, ২২:০১
মেহেদী হাসান
জামালপুরে সিনেমাহল বিলুপ্তির পথে

শিল্প সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী জেলা জামালপুরে আনন্দ বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম সিনেমা হলের অস্তিত্ব শেষ হতে চলছে। বিনোদন প্রেমী এ জেলার মানুষ সিনেমা পাগল হলেও ব্যবসায়িক বিবেচনায় একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সিনেমাহলগুলো।

এক সময় এ জেলায় ২২টি সিনেমাহল ছিল। সিনেমার শো আরম্ভ ও শেষ হওয়ার সময় দলবেধে দর্শকদের যাওয়া আসার দৃশ্য ছিল চিরচেনা। হল প্রাঙ্গনে দর্শকদের উপচে পড়া ভীড়ে প্রত্যেকটা হলই থাকতো হাউসফুল। রিকসা টেম্পুতে মাইক সিনেমার বড় বড় পোস্টার লাগিয়ে শহরের অলি গলিতে প্রচারনা চালাতো দর্শক টানতে। হলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে এখন সবই অতীত।

চলচ্চিত্রের ব্যবসা মন্দা, মালিকানা দ্বন্দ, মার্কেট ও আবাসন ব্যবসার কারণে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সিনেমা হলগুলো।

পাকিস্তান আমলে জামালপুর শহরের তমালতলায় এন্তেজা নামে প্রথম সিনেমা হল প্রতিষ্ঠিত হয়। হলটি আশির দশকের শুরুতে অগ্নিকান্ডে বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৪ সালে আবাসন ব্যবসায়ীদের প্রলোভনে বন্ধ হয়ে যায় সুরভি সিনেমা হল। সিনেমা হলটি বিশাল জায়গাটি আবাসন ব্যবসায়ীরা কিনে প্লট আকারে বিক্রি করে দেন। ২০১০ সালের দিকে মালিকানা দ্বন্দে বন্ধ হয়ে হয়ে যায় জামালপুর শহরের আবেদন চক মার্কেটে অবস্থিত এক সময়ের বৃহত্তর ময়মনসিংহের আধুনিকতম হল কথাকলি। চলচ্চিত্রের ব্যবসা মন্দায় ২০১৪ সালের দিকে বন্ধ হয়ে যায় নিরালা সিনেমা হল। এছাড়াও বন্ধ হয়ে যায় সরিষাবাড়ীর চম্পাকলি, মেলান্দহের কোয়েলী, আশা, রঙ্গনী। নান্দিনার ময়নামতি ও অন্তরা, ইসলামপুরের মৌসুমী ও ভাই ভাই, দেওয়ানগঞ্জের জিলবাংলা হল, বকসীগঞ্জের একতা ও মাদারগঞ্জের স্বজন সিনেমা হল।

ব্যবসায়ীক মন্দার কারণে দেওয়ানগঞ্জের অন্তরাল, বকসীগঞ্জের ঝংকার, ইসলামপুরের সনি,সরিষাবাড়ীর আলতা মাঝে মাঝেই বন্ধ হয়ে যায়।

জামালপুর শহরের ৪টি হল বন্ধের পর হলের অস্তিত্ব জানান দিয়ে চালু ছিল শহরের ষ্টেশন রোডের মনোয়ার সিনেমা হল। এটি ছিল জামালপুর শহরের একমাত্র সিনেমা হল। ২ ডিসেম্বর বন্ধ ঘোষনা করে মনোয়ার সিনেমা হল কর্তৃপক্ষ। ভারতের কোলকাতা থেকে আমদানীকৃত ভিলেন ছবিটি সর্বশেষ প্রর্দশিত হচ্ছিল হলটিতে। ছবিটি দু’দিন শো হওয়ার পরই বন্ধ ঘোষনা হয় মনোয়ার। ২০১৪ সালে হলটি বন্ধ হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। যৌথ প্রযোজনা ও জাজ মাল্টি মিডিয়ার নির্মিত ছবিগুলো প্রদর্শন করলে হলমুখী হয় এখানকার দর্শকরা। এসব ছবি প্রদর্শন করে ভাল ব্যবসা করায় হলটি ঘুরে দাঁড়ায়।

এরপর জাজের মেশিন বসানো হয় মনোয়ারে।

মনোয়ার সিনেমা হলের পরিচালক আলমগীর হোসেন বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে ক্রমাগত লস দিয়ে যাচ্ছি। দর্শক টানার মতো চলচ্চিত্র নির্মান হচ্ছেনা। যৌথ প্রযোজনার সিনেমাগুলো ভালই ব্যবসা করেছি। লসের মুখে সিনেমা হল বন্ধ করে অ্যাপার্টমেন্ট করে ভাড়া দিবো ভেবেছিলাম। সিনেমা হল বন্ধ ঘোষনার পর নানা মহল থেকে ফোন আসতে শুরু করে চালু করার। প্রশাসন থেকে ফোন করে হলটি চালু রাখার অনুরোধ করেছেন।

সাংস্কৃতিক কর্মী কবি সাজ্জাদ আনসারী পূর্বপশ্চিমবিডি.নিউজকে জানান, জামালপুরের শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিকাশে চলচ্চিত্রেরও অবদান রয়েছে। জামালপুর শহরে আনোয়ার হোসেনের মতো শক্তিমান অভিনেতা ও আমজাদ হোসেনের মতো গুনি চলচ্চিত্র পরিচালকের জন্ম হয়েছে। সেই জেলা শহরে একটি সিনেমা হলও অবশিষ্ট থাকলো না সেটা খুবই দুঃখ্যজনক। সংস্কৃতির ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখানকার বন্ধ হয়ে যাওয়া হলগুলো চালু করতে সরকারী সহযোগীতাসহ সকল মহলের এগিয়ে আসা উচিত।

জামালপুর পৌরসভার মেয়র মির্জা সাখাওয়াতুল আলম মনি বলেন, জামালপুর শহরে চালু থাকা একমাত্র সিনেমা হল মনোয়ার বন্ধ ঘোষনা করেছে হল কর্তৃপক্ষ। হলটি চালুর ব্যপারে মলিক পক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে। তারা বলেছেন, সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে, নির্বাচনের পর চালু করা হবে বলে জানিয়েছে।

সকল প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া হলগুলোসহ মনোয়ার সিনেমা চালুর দাবী জানিয়েছে জামালপুরের দর্শকরা।

পিবিডি/ হাসনাত

সিনেমাহল,জামালপুর,আমজাদ হোসেন

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close