সুনামগঞ্জে হাসপাতালতে জনবল ও ভবনসংকট, চরম দূর্ভোগ
সুনামগঞ্জে হাসপাতালগুলোতে জনবল, ভবন সংকট, চরম দূর্ভোগের কারনে নেই ভাল মানের স্বাস্থ্যসেবা আছে। ফলে চিকিৎসা নিতে আসা জনসাধারনের মাঝে জরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। কোন কোন হাসপাতালে ভবন আছে জনবল নেই। রোগী একটু বেশি হলেই হাসপাতাল গুলোর ওয়ার্ডের নীচে (মেঝেতে) রাখা হয়। আর জনবল সংকটের কারনে চিকিৎসা সেবাও পাচ্ছেনা হাজার হাজার জনসাধারন। আর হাসপাতালগুলোতে কর্মরতরা চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছে। ফলে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা সর্বস্থরের লোকজন চিকিৎসা সেবা না পেয়ে নিজ নিজ এলাকার হাতুরে ডাক্তারের শরনাপন্ন হচ্ছে। এতে করে অপচিকিৎসা ও অর্থের অপচয়ের শিকার হচ্ছে সবাই।
জানাযায়, সুনামগঞ্জের ৩টি ৩৫শয্যার হাসপাতাল ৫০শয্যায় উন্নীত হবার পর ভবন হয়েছে। কিন্তু জনবলের অভাবে সেগুলোতে ৫০শয্যার সেবা চালু করা যাচ্ছে না। জেলার দিরাইয়ের জগদলে ২০শয্যার আরেকটি হাসপাতালের ভবন হয়েছে ৬বছর আগে, কিন্তু জনবল অনুমোদন না হওয়ায় অব্যবহৃত ভবনগুলো নষ্ট হতে চলেছে। মধ্যনগরে ২০শয্যার হাসপাতালের জনবল নিয়োগ হয়েছে, ভবন না হওয়ায় ডাক্তার-কর্মচারীরা জেলার তাহিরপুর ও ধর্মপাশা হাসপাতালে সেবা দেন। দক্ষিণ সুনামগঞ্জে জনবল অনুমোদন হয়েছে, হাসপাতাল ভবন হয় নি। এজন্যও হাসপাতালও চালু হয় নি। তাহিরপুর উপজেলায় ৩০শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবন তৈরী হলেও উদ্বোধন হয়নি। জেলার ধর্মপাশা উপজেলার মধ্যনগরে ২০১০ সালের শেষের দিকে ২০শয্যার হাসপাতালের অনুমোদন হয়েছিল, ওখানকার জনবল নিয়োগের অনুমোদন হয়েছে। ডাক্তার-কর্মচারীও ইতিমধ্যে ওই হাসপাতালের এসেছেন কিন্তু তাদের কাজে লাগানো হয় তাহিরপুর এবং ধর্মপাশা উপজেলা সদর হাসপাতালে। ফলে মধ্যনগর এলাকার জনসাধারন এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দিরাইয়ের স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নের জন্য উপজেলার প্রত্যন্ত জনপদ জগদলে ২০শয্যার হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করা হয়। ২০১৫ সালের শুরুতেই এই হাসপাতাল ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনও হয়। কিন্তু গত ৪বছর ধরে এই হাসপাতাল কমপ্লেক্সে জনবল কাঠামোর অনুমোদন না হওয়ায় এলাকার মানুষের কোন উপকারে আসছে না। দিরাই উপজেলা সদর ৫০শয্যার হাসপাতালের ভবন উদ্বোধন করেছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং সুনামগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ৩ বছর পূর্বে। এখনো এই ভবন চালু হয় নি।
সম্পর্কিত খবর
জেলার দিরাই,তাহিরপুর,ধর্মপাশাসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীরা জানান, ভর্তি হবার পর থেকে বিছানা (সিট)পায় নি। ফলে, অসংখ্য রোগী শীতের মধ্যেও নীচে (মেঝে) অবস্থান করছেন। জনবল না থাকায় ভালভাবে চিকিৎসা পাচ্ছে না। জনবল নিয়োগ ও ভবন নির্মান এবং নতুন ভবনগুলো চালু করার দাবী জানান সবাই।
সিভিল সার্জন অফিসে সূত্রে জানা যায়, জেলার ছাতক ও ধর্মপাশায় ৫০ শয্যার হাসপাতাল ভবন সম্প্রতি উদ্বোধন হয়েছে। কিন্তু জনবল কাঠামোর অনুমোদন হয় নি। এছাড়াও জেলার ১১টি উপজেলার একাধিক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবন তৈরী হলেও জনবলের অভাবে এসব হাসপাতালেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না দুর্গম এলাকা থেকে আগত রোগীরা। তারপরও হাসপাতাল গুলোতে কর্মরতরা সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দিতে চেষ্টা করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক একাধিক উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা বলেন,জনবল কাঠামোর অনুমোদনের বার বার আবেদন করা হয়েছিল নতুন করে আবারও পাঠানো চিঠি পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে ৩১শয্যার হাসপাতাল গুলোতে সঠিক ভাবে সেবাই পাচ্ছে না মানুষজন। জেলার প্রতিটি হাসপাতালের প্রতিটি পদেই অর্ধেকেরও বেশি পদ শূন্য রয়েছে এই কারনে আমরাও চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছি।
সিভিল সার্জন ডাঃ আশুতোষ দাস বলেন,জেলার প্রতিটি হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান বাড়ানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। জনবল নিয়োগ দিলে চিকিৎসা সেবার মান উন্নতি হবে। দক্ষিণ সুনামগঞ্জে শীর্ঘই জমি অধিগ্রহণ করে ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। দিরাই এবং জগদলের জন্য জনবল অনুমোদনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। মধ্যনগরে ২০শয্যার হাসপাতালের জমি নির্ধারণ হয়েছে। এখন ভবনের দরপত্র আহŸান করা হবে। তাহিরপুর,ধর্মপাশা ও ছাতক হাসপাতালে নতুন ভবন হয়েছে এগুলোতে পর্যায়ক্রমে জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে।
পিবিডি/আরিফ