ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন মণিরামপুরের চাষিরা
মণিরামপুরে ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ভূট্টা চাষিরা। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাঠজুড়ে দেখা গেছে বিস্তীর্ণ ভূট্টার ক্ষেত। গতবারের তুলনায় এবার দেড়গুণ বেশি জমিতে ভূট্টা চাষ করেছেন চাষিরা। রোগবালাই তেমন না থাকায় এবং লাভজনক হওয়ায় এই চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ভালো ফলন পাবার আশা তাদের।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এবছর উপজেলার এক হাজারের বেশি চাষি ১১৫ হেক্টর জমিতে ভূট্টার চাষ করেছেন। সবচেয়ে বেশি ভূট্টার চাষ হয়েছে মণিরামপুর সদর ইউনিয়নের দেবিদাসপুর, পৌরসভার জুড়ানপুর, রোহিতা, খেদাপাড়া, কাশিমনগর ও হরিহরনগর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে। গত বছর উপজেলার ৫০ হেক্টর জমিতে এই চাষ হয়েছিল। তার আগে চাষ হয়েছিল মাত্র ২০ হেক্টর জমিতে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি মৌসুমে এক হাজার ৩৫ মেট্রিকটন ভূট্টা ফলনের আশা করছে কৃষি অফিস।
সম্পর্কিত খবর
উপজেলার দেবিদাসপুর গ্রামের ভূট্টা চাষি কামরুজ্জামান। গত ৪-৫ বছর ধরে তিনি ভূট্টার চাষ করছেন। এবারও চাষ করেছেন দুই বিঘা জমিতে। রোববার কথা হয় কামরুজ্জামানের সাথে।
কামরুজ্জামান বলেন, আগে ধান চাষ করতাম বেশি। দেখেছি, আমার আশপাশের কয়েকজন জমিওয়ালা ভূট্টার চাষ করছেন। ধান চাষ করে আমি যতটুকু লাভবান না হয়েছি, তার চেয়ে প্রায় দুইগুণ বেশি লাভ করতে দেখেছি ভূট্টা চাষিদের। ফলে আমিও এই চাষে ঝুঁকে পড়ি।
তিনি বলেন, ভূট্টা চাষের শুরু থেকে ১৫৫ দিনের মধ্যে ফসল তোলার উপযোগী হয়। ভূট্টায় সেচ কম লাগে, ফলন বেশি, তাছাড়া রোগবালাইও তেমন না। একবিঘা জমিতে সাধারণত ৪০ মণ ভূট্টা হয়। সেক্ষেত্রে প্রায় ২৪-২৫ হাজার টাকার ভূট্টা বিক্রি করা যায়। যেখানে খরচ মাত্র ১০-১১ হাজার টাকা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস বীজ ও সার দিয়ে তাকে এই কাজে কিছুটা সহযোগিতা করে বলে জানান চাষি কামরুজ্জামান।
কামরুজ্জামানের মত দেবীদাসপুর গ্রামের অব্দুল বারিক, নজরুল সরদার, রফিকুল ইসলাম, রবিউল খাঁ, রফিকুল সরদারসহ অনেক চাষিই ভূট্টা চাষে লাভবান হচ্ছেন বলে জানা গেছে।
বয়লার ও মাছের খাদ্য তৈরিতে মূল উপাদান হিসেবে ভূট্টা ব্যবহৃত হয়। দেশে ক্রমশ বয়লার ও মাছ চাষ বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে ভূট্টার চাহিদাও বাড়ছে। তাছাড়া বিস্কুট ফ্যাক্টরিতে ও গমের সাথে ভূট্টা মিশিয়ে আটা তৈরিতেও ভূট্টা ব্যবহৃত হয়। ক্রমবর্ধমান এসব চাহিদা মেটাতে ভূট্টার চাষ বাড়ছে বলে মনে করেন কৃষিবীদরা।
মণিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হীরক কুমার সরকার বলেন, আমাদের দেশে চাহিদার তুলনায় ভূট্টার আবাদ কম। বাজারে ভূট্টার ব্যাপক চাহিদা। তাছাড় ভূট্টায় সাধারণত রোগবালাই নেই। একারণে চাষিদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় না। কৃষকরা আগ্রহ দেখানোতে ক্রমশ মণিরামপুরে ভূট্টার চাষ বাড়ছে। ভূট্টা চাষিরা প্রয়োজনীয় পরামর্শসহ বিনামূল্যে বীজ ও সার পাচ্ছেন বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
পিবিডি/পি.এস