‘আলোর ফেরিওয়ালা’ মণিরামপুরে প্রতারিত হচ্ছে গ্রাহক!
ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়ে সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার কার্যকর করতে মণিরামপুরে ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ নামে পল্লী বিদ্যুৎ টিম কাজ করছে। দালালদের খপ্পরের হাত থেকে জনগণের ভোগান্তি কমাতে গত ৬ জানুয়ারি হতে মণিরামপুরের বিভিন্ন এলাকায় কাজ করছে ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ দুইটি টিম। তবে ভোগান্তি কম হওয়াতো দূরের কথা ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ টিমের বিরুদ্ধে উঠেছে গ্রাহককে প্রতারিত করে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ।
অভিযোগ রয়েছে,‘আলোর ফেরিওয়ালা’ টিম বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দিলেও সংযোগ পাওয়া গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার সাথে সাথে গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া অর্থের রশিদ দেওয়ার কথা থাকলেও তা মানছেন না টিমের সদস্যরা। আর এই ক্ষেত্রে গ্রাহকরা প্রতিবাদ করলে তাদেরকে সাত-পাঁচ বুঝিয়ে দিচ্ছে টিম।
সম্পর্কিত খবর
সরেজমিন জানা যায়, উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের শামছুদ্দিনের বাড়িতে ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ টিম পৌঁছেছে গত রোববার (২০ জানুয়ারি) দুপুরে। দ্রুত তার বাড়িতে মিটার লাগিয়ে সংযোগ দেয় টিম। এসময় তারা শামছুদ্দিনের কাছ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা গ্রহণ করলেও তার বিপরীতে তাকে রশিদ দিয়েছে মাত্র ৯৬৫ টাকার।
একইভাবে ওই গ্রামের অমল মন্ডলের বাড়িতে সংযোগ দিয়ে এক হাজার ১৫০ টাকা নিয়েছে টিম। তাকে দিয়েছে ৫৬৫ টাকার রশিদ। একই সময়ে পাশ^বর্তী মাহমুদকাটি গ্রামের জামাল হোসেনের বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে টিমের সদস্যরা তিন হাজার ৫০০ টাকা নিয়েছে। কিন্তু তাকে দেওয়া হয়েছে ৫১৫ টাকার রশিদ।
যশোর-২ মণিরামপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অফিস সূত্র বলছে, যাদের বাড়িতে ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ যাবেন। যদি ওই বাড়িতে ঘর ওয়ারিং করা থাকে, সেক্ষেত্রে সংযোগ দিয়ে এক কিলোওয়ার্ট শক্তির বিপরীতে টিম মাত্র ৫৬৫ টাকা গ্রহণ করতে পারবেন। যদি দুই কিলোওয়ার্ট শক্তি হয় বা পাকা বাড়ি হয় সেক্ষেত্রে আরও চারশ’ টাকা গ্রাহককে বেশি দিতে হবে। আর যদি ওয়ারিং করে সংযোগ দেওয়া হয় তাহলে সাথে ওয়ারিং এর সরাঞ্জামের মূল্য যোগ হবে। তবে এসব টাকা অবশ্যই ভাওচারের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হবে।
অমলের ভাই কোমল মন্ডল বলেন, ‘সংযোগ দেওয়ার সময় আমি বাড়িতে ছিলাম। আমাদের ঘর আগ থেকে ওয়ারিং করা ছিল। ওরা শুধু মিটার বসিয়ে সংযোগ দিয়ে ১ হাজার ১৫০ টাকা নিয়েছে। আর ভাওচার দিয়েছে ৫৬৫ টাকার। বাকি টাকার কথা জিজ্ঞেস করলে বলেছে অফিস খচর লাগবে।’ কোমলের অভিযোগ,‘ আলোর ফেরিওয়ার কথা শুনে প্রথমে আনন্দিত হইছি। ভাবিছি,এবার হয়তো আর দালালদের টাকা দিতে হবে না। সঠিকভাবে কম খরছে বিদ্যুৎ সংযোগ পাব। কিন্তু এখন দেখছি, এই টিমের কাজও সেই দালালদের মতই।’
জামাল হোসেন অভিযোগ করে বলেন,‘ আমি গরিব মানুষ, ভ্যান চালিয়ে খাই। আমার বাড়ি বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করেছি। রোববার ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ দেখে আনন্দিত হয়ে তাদেরকে বাড়িতে নিয়ে যাই। আমার মাটির ছোট্টা একটা ঘর। তারা ঘর ওয়ারিং করে সংযোগ দিয়ে প্রতারণা করে আমার কাছ থেকে তিন হাজার ৫০০ টাকা নিয়েছে। রশিদ দিয়েছে মাত্র ৫১৫ টাকার।’ এদিকে গ্রাহকদের অভিযোগ পেয়ে সোমবার বিকেলে সরেজমিন ঘটনার তদন্তে যান যশোর-২ মণিরামপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির রাজগঞ্জ শাখার সহকারি জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম) ফাকরুল ইসলাম। তিনি অভিযোগের সতত্যা পেয়েছেন বলে ঘটনাস্থল থেকে জানিয়েছেন।
যশোর-২ মণিরামপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার আব্দুর রশিদ মৃধা বলেন,‘ গ্রাহকদের হয়রানি কমাতে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ টিম কাজে নেমেছে। গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কোন সুযোগ নাই। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এদিকে সোমবার বিকেলে গ্রাহক অমলের ভাই কোমল মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আমাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত যে ৫৮৫ টাকা রোববারে নিয়েছিল ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ টিম। স্যারেরা আমাদের বাড়ি এসে সেই টাকা ফেরত দিয়ে গেছে।’
পিবিডি/ওএফ