• বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৪ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

সুস্থ আছেন পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও সাগর

প্রকাশ:  ২৩ জানুয়ারি ২০১৯, ১১:৪৫ | আপডেট : ২৩ জানুয়ারি ২০১৯, ১১:৪৭
শাহজাহান আলী বিপাশ, ঝিনাইদহ

সুস্থ আছেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে একসাথে জন্ম নেওয়া ৩ বোন ও এক ভাই পদ্মা, মেঘনা, যমুনা আর সাগর। শত কষ্টের মাঝেও সারাক্ষণ বাড়িতে উৎসবের আমেজ। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা আর সাগরকে নিয়ে বিরাজ করছে এই উৎসব মুখর পরিবেশ। চলছে তাদের সেবা যত্ন। কোনো কিছুরই কমতি নেই। মা মিরা খাতুনের গর্ভে এক সঙ্গে জন্ম নেওয়া এই ৪ সন্তান লালন করা তাদের কাছে যেন কোনো বিষয়ই নয়।

দুই মাস বয়সী এই চার ভাই-বোন নানী দাদির কোলে যত্নে থাকলেও সমস্যায় আছে তাদের পিতামাতা। প্রতিদিন দুধ আর ঔষধ মিলিয়ে প্রয়োজন হাজার টাকার। যা শিশু চারটির নানা দিনমজুর অলিয়ার রহমানের পক্ষে জোগাড় করা কোনো ভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। শিশুদের বাবা মাহবুবুর রহমানও একটি বে-সরকারি কোম্পানীর সরবরাহকারীর কাজ করেন। তার আয়ে কোনো রকমে সংসার চলে। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা আর সাগর ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার গোবরডাঙ্গা গ্রামের মাহবুবুর রহমান সবুজের চার সন্তান। সবুজের স্ত্রী একই উপজেলার তেলকুপ গ্রামের অলিয়ার রহমানের একমাত্র কন্যা মিরা বেগম (২২)। তার গর্ভে ২০১৮ সালের ২৩ নভেম্বর তাদের জন্ম।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ তৈলকুপ গ্রামে গিয়ে দেখা যায় নানা অলিয়ার রহমানের বাড়িতে উৎসবের আমেজ। নানী বিনা বেগম শিশু যমুনা শরীরে তেল মালিস করছেন। খালা মিনা বেগম শিশু পদ্মাকে কোলে নিয়ে পায়চারী করে চলেছেন। মা মিরা বেগম শিশু মেঘনাকে কোলে নিয়ে বসে আছেন। আরেক নানী তাসলিমা বেগম শিশু সাগরকে কোলে নিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করছেন। ফ্লাক্সে গরম পানি নিয়ে এসেছেন অজপা বেগম। দুধ তৈরী করে সবাইকে খাওয়াতে হবে। বাড়িতে এ সময় উপস্থিত আছেন আরো ৫/৬ জন। যারা শিশুদের দেখতে এসেছেন।

এক সাথে ৪ সন্তানের জন্মদানকারী মা মিরা বেগম জানান, ২০১৭ সালের ১৮ জানুয়ারি তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর প্রথম সন্তান গর্ভে আসলে তারা স্বামী-স্ত্রী খুবই খুশি ছিলেন। মাঝে মধ্যেই দু’জন পরিকল্পনা করতেন কি নাম রাখবেন। ছেলে হলে কি বানাবেন, আর মেয়ে হলে কি হবে। এভাবে তিন মাস কেটে যাবার পর তার শরীর দ্রুত বাড়তে থাকায় একদিন চিকিৎসকের কাছে যান। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানান, মিরা বেগম একসঙ্গে তিনটি শিশুর জন্ম দেবে। চিকিৎসকের এই কথায় তারা হতবাক হয়ে পড়েন। কিছুদিন পর আবারো পরীক্ষা করে জানান, তিনটি নয় শিশু জন্ম নেবে চারটি। তখন আরো বাড়তি দুশ্চিন্তা আরো বেড়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে শিশুরা বাঁচবে কিনা, তার (মা) কোনো ক্ষতি হবে কিনা। এই চিন্তার মধ্যেই দিন কাটতে থাকে তাদের। এক সময় ২০১৮ সালের ২৩ নভেম্বর যশোরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে মিরা বেগমের চারটি শিশুর জন্ম হয়। প্রথম দিকে শিশুরা একটু বেশি হালকা থাকলেও বর্তমানে স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।

মিরা জানান, এখন তার সন্তানদের দেখাশুনা করার জন্য বাড়িতে সব সময় লোকজন ডাকতে হচ্ছে। শিশুদের নানী-খালারা এসে সময় দিচ্ছে। রাতে চারজন চারটি শিশু নিয়ে ঘুমান। তবে মা হিসেবে তাকে সবগুলোর দেখভাল করতে হয়।

মিরা বেগমের মা বিনা বেগম জানান, তার স্বামী অলিয়ার রহমান অন্যের জমিকে কৃষি শ্রমিকের কাজ করেন। এই কাজ করে কোনো রকমে সংসার চালান। মাঠে তাদেন চাষযোগ্য কোনো জমি নেই। এই বাচ্চাদের বর্তমানে প্রতিদিন ৭ শত টাকার কৌটার দুধ প্রয়োজন হয়। এছাড়া ঔষধসহ আরো প্রায়জন ৩ শত টাকার। সবমিলিয়ে প্রতদিন ১ হাজার টাকা দরকার হয়। তাছাড়া বাড়িতে সারাক্ষণ বাড়তি লোকজন থাকায় খরচ বেড়েছে। তাই চিন্তা বাচ্চাদের বাঁচিয়ে রাখবেন কিভাবে।

শিশুদের বাবা মাহবুবুর রহমান জানান, একসঙ্গে চার সন্তান জন্ম নেওয়া তিনি আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া কামনা করে। তবে তিনি চিন্তিত ৪টি সন্তানকে এক সাথে লালন পালন করতে অনেক খরচ। তিনি বলেন, মাসে মাত্র ৮ হাজার টাকা আয় করেন। কিন্তু খরচ ৩০ হাজার টাকা। বর্তমানে তার স্ত্রী ও বাচ্চারা শ্বশুরবাড়ি রয়েছেন। তিনি শিশুগুলোকে মানুষের মতো মানুষ করতে চান কিন্তু আর্থিক সমস্যাই এখন বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছেন।

পিবিডি/পি.এস

ঝিনাইদহ,সুস্থ্য

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close