• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

তরুণীকে আটকে রেখে ‘ধর্ষণ’

এএসআই মাজহারুলকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে, দাবি পরিবারের

প্রকাশ:  ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৯:৪৯
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ডাকবাংলোতে এক তরুণীকে আটকে রেখে ‘ধর্ষণ’র ঘটনায় গ্রেফতার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মাজহারুল ইসলাম জড়িত নন বলে পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন। তাদের দাবি, মাজহারুলকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে।

এএসআই মাজহারুল ইসলামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার দশশিখা গ্রামে। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে মাজহারুল ইসলাম তৃতীয়। স্থানীয় হাজি কোরপ আলী মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরিতে যোগ দেন। পরে পদোন্নতি পেয়ে এএসআই হন।

ধর্ষণের শিকার ওই তরুণী গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে সাটুরিয়া থানায় দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেন। তার আগে দু’জনের বিরুদ্ধে মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন তিনি। তখন দুই কর্মকর্তাকেই থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়। মামলার পর দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়। ১২ ফেব্রুয়ারি দুপুরে মানিকগঞ্জের আদালত এএসআই মাজহারুল ইসলাম ও অপর আসামি উপরিদর্শক (এসআই) সেকেন্দার হোসেনের ছয়দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মাজহারুল ইসলামের বড় ভাই ইসমাইল হোসেন ও চাচা আজহার তালুকদার বলেন, মাজহারুলের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে তা সত্য প্রমাণিত হবে না। এটি ষড়যন্ত্র হতে পারে। ওই তরুণীর শারীরিক পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন তারা।

মাজহারুল ইসলামের ভাবি শাহনাজ পারভীন বলেন, ঘটনাটি আমরা জানতে পেরেছি। কিন্তু আমাদের বিশ্বাস হচ্ছে না তিনি এই কাজ করতে পারেন। এটি ষড়যন্ত্রও হতে পারে। তবে অভিযোগ যদি সত্য প্রমাণতি হয় তার সাজা তাকে ভোগ করতে হবে।

মানিকগঞ্জের পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এসআই সেকেন্দার হোসেন ঢাকার আশুলিয়া থানায় কর্মরত থাকার সময় এক নারীর কাছ থেকে এক লাখ টাকা ঋণ নিয়ে জমি কেনেন। কথা ছিল জমি বিক্রির লাভ তাকে দেওয়া হবে। কিন্তু টাকা না দিয়ে তিনি ঘুরাতে থাকেন। সাটুরিয়া থানায় বদলি হয়ে আসার পরও সেকেন্দারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ওই নারী।

গত ৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে প্রতিবেশী ভাগ্নিকে (ভুক্তভোগী তরুণী) নিয়ে সাটুরিয়া থানায় যান ওই নারী। এর পর সেকেন্দারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি টাকা দেবেন বলে তাদের সাটুরিয়া ডাকবাংলোতে নিয়ে যান। সন্ধ্যার পর সাটুরিয়া থানার এএসআই মাজহারুল ইসলামকে ডাকবাংলোতে নিয়ে যান সেকেন্দার। ডাকবাংলোর একটি কক্ষে টাকা পাওনাদার নারীকে আটকে রাখেন তারা। আর অন্য কক্ষে ওই নারীর সঙ্গে আসা তরুণীকে জোর করে ইয়াবা সেবন করান পুলিশের এই দুই কর্মকর্তা।

ওই দুই পুলিশ সদস্যও ইয়াবা সেবন করেন। পরে তারা তরুণীকে আটকে রেখে ধর্ষণ করেন। দুইদিন আটকে রেখে ধর্ষণ করার পর ৮ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সকালে ওই তরুণীকে ছেড়ে দেন।

এরপর ওই তরুণী পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। ৯ ফেব্রুয়ারি শনিবার রাতে বিষয়টি জানার পর মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার রিফাত রহমান শামীমের নির্দেশে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের থানা থেকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়। ১০ ফেব্রুয়ারি পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী তরুণী। এ ঘটনা তদন্তে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তারা হলেন মানিকগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাফিজুর রহমান ও জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হামিদুর রহমান সিদ্দিকী। তারা ধর্ষণের ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পান। এরপর ওই তরুণী ১১ ফেব্রুয়ারি ওই দুই পুলিশ সদস্যর বিরুদ্ধে সাটুরিয়া থানায় ধর্ষণের মামলা করেন। মামলা হওয়ার পর রাতেই মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে তরুণীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়।

তিনদিনের মধ্যে ডাক্তারি পরীক্ষার প্রতিবেদন দেওয়ার কথা থাকলেও শনিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) তা দেওয়া হবে বলে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মো. লুৎফর রহমান জানিয়েছেন।


পিবিডি/এসএম

ধর্ষণ,মানিকগঞ্জ,সিরাজগঞ্জ

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close