• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

বাস্তবায়ন হয়নি এক যুগেও

শহীদ জব্বারের নামে গ্রামের নামকরণ জব্বার নগর

প্রকাশ:  ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৭:২৩
গফরগাঁও প্রতিনিধি

‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ এই দাবীতে যে ৫/৬ জন সাহসী তরুণ জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার। ১৯১৯ খ্রীষ্টাব্দে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাঁচুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার।

১৯৫২’র একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনে শহীদ হন তিনি। ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার সহ ভাষা শহীদদের মহান আত্মত্যাগের কারণে আজ আমরা মাতৃভাষায় কথা বলতে পারি। একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তজার্তিক মর্যাদায় ভাষা দিবস হিসাবে পালিত হয়। তাদের শহীদ স্মৃতি উত্তরকালে বাঙ্গালীর জাতীয় চেতনা ও দেশাত্ববোধ জাগ্রতকরণে দিশারি হিসেবে ভূমিকা পালন করে।

সম্পর্কিত খবর

    এই মহান ভাষা শহীদের স্মৃতি রক্ষার্থে সরকারিভাবে তার নিজ গ্রামের নাম পরিবর্তন করে জব্বার নগর করার সিন্ধান্ত হলেও এক যুগেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এ কারনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শহীদের পরিবারসহ এলাকাবাসী।

    জানা গেছে, ২০০৭ সালের ২৫ মার্চ তারিখে স্থানীয় সরকার বিভাগের সভায় ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বারের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের লক্ষে তার গ্রামের নাম (জন্মস্থান) পাচুঁয়ার পরিবর্তে জব্বার নগর করার সিন্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

    একই বছরের ৪ এপ্রিল তারিখে স্থানীয় সরকার বিভাগের পক্ষ থেকে গ্রামের নাম পাচুঁয়ার পরিবর্তে জব্বার নগর নামকরনের বিষয়ে প্রস্তাব প্রেরনের জন্য ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসককে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়।

    কিন্তু ১২ বছর পরও সেই নির্দেশ বাস্তবায়ন হয়নি। গ্রামবাসী জানায়, ২০০৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বারের নামে গ্রন্থাগার ও স্মৃতি যাদুঘরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসে তৎকালীন তত্বাবধায়ক সরকারের স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আনোয়ারুল ইকবাল গ্রামের নাম জব্বার নগর বলে ঘোষণা দেন।

    ঐ গ্রামের বাসিন্দা আবু সাঈদ জানান, এখনও জব্বার নগর হিসাবে পরিচিতি না পাওয়ায় তারা পূর্বের নামই ব্যবহার করেন। নাগরিকত্বসহ ইউপি থেকে দেওয়া নানা কাগজপত্রে গ্রামটিকে পাঁচুয়া হিসাবেই লেখা হচ্ছে।

    স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সাহাবুল আলম জানান, তারা কোন গেজেট পাননি। এ কারনেই গ্রামের নাম পাঁচুয়া লিখছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মাহবুব উর রহমান জানান, ভাষা শহীদের গ্রামের নাম পরিবর্তন সংক্রান্ত কোন কাগজপত্র তার কার্যালয়ে নেই।

    এদিকে ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বারের পৈতৃক ভিটা এখন তার প্রতিবেশীদের বেদখলে। ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বারের পুত্র মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলাম বাদল জানান, তার পিতার স্মৃতি বিজড়িত পৈতৃক ভিটা স্থানীয় কিছু ব্যক্তি জোরপূর্বক দখল করে রেখেছে। জব্বার নগরের বাসিন্দা আতাহার হোসেন খোকা অবিলম্বে গ্রামের নামকরণ ‘জব্বারনগর’ এর সরকারি গেজেট এবং এবং এই গ্রামে ভাষাশহীদের নামে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবী জানান।

    ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার স্মৃতি কমপ্লেক্স থেকে গফরগাঁও- ভালুকা সড়কের ভারইল বাজার পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ এলজিইডির সড়কটি খানাকন্দকে ভরা। ২০০৮ সালে ১৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে পাচুঁয়া গ্রামে ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বারের বাড়ি সংলগ্ন স্থানে এলজিইডির তত্ত্বাবধানে ৬২ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার স্মৃতি যাদুঘর ও গ্রন্থাগার উদ্বোধন করেন ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন, ডঃ হালিমা খাতুন, বেগম রওশন আরা বাচ্চু।

    সেই থেকে এলাকাবাসীর মাঝে আশার আলো দেখা দিলেও তা আজ নিরাশায় পরিণত হয়েছে। যাদুঘরের অট্রালিকা তৈরি হলেও যাদুঘরে ভাষাশহীদের কোন স্মৃতি চিহ্ন নেই, নেই কোন স্মৃতি স্মারক। পাঠাগারে ৪ হাজার ১’শ ৩৪ টি বই থাকলেও ভাষা শহীদ জব্বারসহ ভাষা শহীদদের জীবনাদর্শ সর্ম্পকিত তেমন বই নেই এই পাঠাগারে।

    সময়োপযোগী ও চাহিদা সম্পন্ন বই না থাকায় পাঠকরা বঞ্চিত হচ্ছে । নতুন প্রজন্ম ভুলতে বসেছে ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বারের বীরত্বগাঁথা ইতিহাস।

    ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বনানী বিশ্বাস বলেন, আমরা ভাষা শহীদের নামে তার নিজ গ্রামে যাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেছি । জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে তার বসত বাড়িতে শহীদ মিনার নির্মান করা হয়েছে । ভাষা আন্দোলনের বই যেন পর্যাপ্ত থাকে সে দিকে লক্ষ্য রাখা হবে।

    পিবিডি/আর-এইচ

    সারাদেশ

    অনুসন্ধান করুন
    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close