• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

চিকিৎসক সংকটে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

প্রকাশ:  ১০ মার্চ ২০১৯, ১৮:২৭
ফেনী প্রতিনিধি

ফেনীর পরশুরাম উপজেলায় ৫০ শয্যার সরকারি একমাত্র হাসপাতালটি চিকিৎসক সংকটের কারণে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতালের ডাক্তার, কর্মকর্তা, কর্মচারী শূন্যতার কারণে স্বাস্থ্যসেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। এছাড়াও হাসপাতালের এক্স-রে মেশিনটি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে বছরের পর বছর ধরে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অফিস জানায়, প্রতিদিন গড়ে হাসপাতালে বর্হি-বিভাগে ৪শ’ থেকে ৫শ’ রোগি চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। এছাড়াও ইনডোরে গড়ে প্রায় ৫০/৬০ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। কিন্তু পর্যাপ্ত চিকিৎসক সংকটসহ নানা সমস্যার কারণে রোগিরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

সম্পর্কিত খবর

    ৫০ শয্যার পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মঞ্জরীকৃত পদের সংখ্য ২৫টি, কিন্তু বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ১০টি পদে। তার মধ্যে জুনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি) ডাক্তার বুশরা নূর আল চৌধুরী ২০১৪ সালের ২৫ আগস্ট পরশুরামে যোগদানের পর থেকে ঢাকার মুগধা মেডিকেল কলেজে সংযুক্ত রয়েছেন।

    ডাক্তার বুশরা নূর আল চৌধুরী সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন ২০১৪ সালের ৭ আগস্ট তারিখে। পরশুরাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদানের ১৮ দিন পরই তিনি ঢাকায় চলে যান, তারপর থেকে পরশুরামে তার পদটি শুন্য রয়েছে। অপরজন ডেন্টাল সার্জন ডাক্তার কামরুন নাহার ২০১৭ সালের ৩ মে থেকে ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সংযুক্ত রয়েছেন।

    এছাড়াও পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (এনেসথেসিয়া), জুনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (আর্থোপেডিক), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চর্ম ও যৌন)। এছাড়াও শূন্য রয়েছে হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার (ইওসি), মেডিকেল অফিসার, আইএমও, প্যাথলজি, এন্যান্থেটিষ্ঠ, মেডিকেল অফিসার (এমএমসি) পদ।

    অপরদিকে সুবার বাজার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, নোয়াবাজার উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্র, নোয়াবাজার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, বক্সমাহমুদ বাজার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র দীর্ঘদিন ধরে মেডিকেল অফিসারের পদ শুন্য পড়ে আছে। সরকার নিয়োগ দেয়ার পর পরই তারা তদবীর করে চিকিৎসকরা অন্যত্র বদলি হয়ে চলে যায়। ফলে উপজেলা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের নাগরিকরা পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

    ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে অবকাঠামো গত কিছু উন্নয়ন হলেও চিকিৎসা সেবা বলতে তেমন কিছুই নেই। হাতে গোনা যে ১০জন চিকিৎসক কর্মরত আছেন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ থাকেন ছুটিতে, এছাড়াও দেরিতে কর্মস্থলে উপস্থিত হওয়া, চিকিৎসকদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ নানা বিষয় বিরোধ চরম আকার ধারণ করেছে। এছাড়াও হাসপাতালে কর্মরত দুই একজনের বিরুদ্ধে পরশুরামের প্রাইভেট হাসপাতালের প্রতি বেশি মনোযোগী বলে রোগীরা অভিযোগ করেছেন।

    পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস সহকারী মো. ইসমাইল জানান, হাসপাতালে চিকিৎসক শুন্যতার বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবহিত রয়েছেন।

    তিনি জানান, জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে আনসার সদস্য নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন, তাছাড়াও ৫জন সুইপাররের মধ্যে রয়েছে মাত্র ৩ জন। হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার ও কনসালটেন্টের ২৫টি পদ রয়েছে তার মধ্যে কর্মরত আছে ১০জন। নির্ধারিত বেডের বাইরেও প্রতিদিন গড়ে প্রায় দ্বিগুনের চেয়ে বেশি রোগী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়। অথচ তাদের চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত ডাক্তার না থাকায় রোগীরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পর্যাপ্ত জনবল, ডাক্তার শূন্যতার কারণে পরশুরাম উপজেলার রোগীরা চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। গরীব রোগীরা ফেনীতে গিয়ে চিকিৎসা করতে অনেকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

    উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস জানায়, ২০০৯ সালের ১৩ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে ৫০শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। তবে পূর্বে যন্ত্রপাতি ও ডাক্তার নার্স দিয়ে তার কার্যক্রম এখন পর্যন্ত চলছে।

    পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. আবদুল খালেক জানান, হাসপাতালে ডাক্তারের শূন্য পদের বিষয়টি উর্ধদতন কর্তৃপক্ষ অবহিত রয়েছেন। চিকিৎসার মান বৃদ্ধি করতে হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসকরা সার্বক্ষণিক সচেষ্ট রয়েছেন। বর্তমানে এই হাসপাতালে প্রত্যেক মাসেই নরমাল ও সিজারের মাধ্যমে ডেলিভারি করানো হচ্ছে, গতমাসে ৬৫জন নারী নরমাল ডেলিভারি সুবিধা দেয়া হয়েছে, এছাড়াও ৬ জনকে সিজার করানো হয়েছে।

    তিনি আরও জানান, বর্তমানে চিকিৎসকরা ডিজিটাল পদ্ধতিতে হাজিরা দিচ্ছেন তাই কর্মস্থলে উপস্থিতির ক্ষেত্রে আন্তরিক রয়েছেন।

    /অ-ভি

    সারাদেশ

    অনুসন্ধান করুন
    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close