• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

ভাষা সৈনিক ওসমান গনি’র দাফন সম্পন্ন

প্রকাশ:  ১৭ মার্চ ২০১৯, ১৯:০৯
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

ভাষা সৈনিক,বর্ষীয়াণ আইনজীবি ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ওসমান গনি (৯০) গত শনিবার (১৬’মার্চ) রাত ১০টার দিকে বার্ধক্যজনিত রোগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা বারডেম হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহে ---রাজিউন)।

রোববার (১৭’মার্চ) বাদ আসর শহরের রেহাইচর ঈদগাহ মাঠে জানাজার নামাজের পর সংলগ্ন গোরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। এর আগে শনিবার রাতে তার মৃত্যু সংবাদ চাঁপাইনবাবগঞ্জ এসে পৌঁছালে সর্বস্তরে শোকের ছায়া নেমে আসে। শহরের ইসলামপুর মহল্লার বাসিন্দা ও সদর উপজেলার নারায়নপুর গ্রামের মরহুম আইয়ুব আলী মাস্টারের বড় ছেলে ওসমান গনি মৃত্যুকালে স্ত্রী,চার পুত্র, তিন কন্যা সহ অনেক গুনগ্রাহি রেখে গেছেন।

তার বড় ছেলে আ্যাড.সোলাইমান বিশু ও দীর্ঘদিনের সহকর্মী চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রেসক্লাব সাবেক সভাপতি গোলাম মোস্তফা মন্টু জানান, ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন ভাষা আন্দোলনের সময় বিশিষ্ট ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিনের সহযোদ্ধা হয়ে ভাষা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন ওসমান গনি।

তিনি ছিলেন ভাষা আন্দোলনকালে আব্দুল মতিনের নেতৃত্বে গঠিত ৬ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির একজন সদস্য। আন্দোলনে আব্দুল মতিন গ্রেপ্তার হলে তিনি দায়িত গ্রহণ করেন। একপর্যায়ে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানাসহ হুলিয়া জারী হয় ও ছাত্রত্ব বাতিল হয়। তিনি ঢাকা ছাড়তে বাধ্য হন। তিনি লুকিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ফিরে আসেন। কিন্তু এখানেও পুলিশ তাঁকে খুঁজতে শুরু করলে তিনি ভারত চলে যান। পরে ভারত থেকে নিজ এলাকায় ফিরে এসে ছাত্র ও সাধারন জনগণকে সংগঠিত করে তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন বেগবান করেন।

পরে সরকার বাংলা ভাষাকে স্বীকৃতি দিলে তিনি আবরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগে ভর্তি হয়ে এম.এ ও এলএলবি ডিগ্রী অর্জন করেন। ওই সময় তিনি ফজলুল হক হলে ভিপি নির্বাচিত হন। তার রুমমেট ছিলেন সাবেক অর্থ মন্ত্রী মরহুম তাজউদ্দীন আহম্মেদ ও সাবেক প্রেসিডেন্ট মরহুম জিল্লুর রহমান। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধেরর অন্যতম সংগঠক ছিলেন।

১৯৩০ সালের ৩১ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণকারী ওসমান গনি পাঁকা নারায়নপুর প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু করে দাদন চক হাই মাদ্রাসা থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। পরে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে আই.এ পাস করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে অনার্স নিয়ে ভর্তি হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন।

পেশাগত জীবনের প্রথমদিকে তিনি নিজ এলাকায় শিক্ষকতা ও পরে ১৯৬৪ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আদালতে আইনজীবী হিসেবে যোগ দেন। তিনি একাধিকবার জেলা আইনজীবী সমিতি সভাপতি ছিলেন। তিনি বাম রাজনীতিতে বিশ্বাস করতেন। তিনি মওলানা ভাষানীর নেতৃত্বাধীন তৎকালীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ-ভাষানী) কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য ছিলেন। একই সাথে ন্যাপের অঙ্গ সংগঠন কমিউনিষ্ট পার্টির পূর্ব পাকিস্তান পলিট ব্যুরোর সদস্য ছিলেন। আমৃত্যু তিনি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে যুক্ত ছিলেন।

তাঁর মৃত্যুতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান,সংগঠন ও ব্যক্তি শোক প্রকাশ করেছেন। তার জীবদ্দশায় ভাষা সৈনিকের রাষ্ট্রীয় কোন স্বীকৃতি না মিললেও দেশব্যাপী সংশ্লিস্ট মহলে তিনি মহান ভাষা আন্দোলনের একজন সৈনিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন।

পিবিডি/আর-এইচ

ভাষা সৈনিক ওসমান গনি,চাঁপাইনবাবগঞ্জ

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close