দিনাজপুরের নদীগুলিতে পানি নেই, ভাল নেই জেলে পরিবার
দিনাজপুর জেলায় ছোট বড় প্রায় ১৯টি নদ-নদী আছে । তার মধ্যে বেশির ভাগ নদীতেই পানি নেই তাই নদীগুলিতে মাছ নেই । তাই সে সকল পরিবার নদীর মাছ ধরে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে সেই সকল জেলে পরিবারগুলিতে চলছে দুর্দিন জীবনযাত্রা । কেউ কেউ বাপ দাদার পৈত্রিক পেশা বাদ নিয়ে অন্য পেশা জড়িত হচ্ছে ।
দিনাজপুর শহর যে নদীর তীবে অবস্থিত সেই পূর্ণভবা নদী এখন মৃত প্রায় এ ছাড়া গর্ভেশ্বরী, কাকড়া নদী, ইছামতি, আত্রাই নদী, ডেপা নদী, ছোট যমুনা নদীসহ অধিকাংশ নদীই মৃত প্রায়। নাব্যতা হারিয়ে চর জেগে উঠেছে। ইছামতি নদীতে এখন বোরো ধানে চাষ হচ্ছে মনেই হবে না এক সময়ের খড়ধারা ইছামতি নদী ছিল । ইছামতির নদীর পাড়ের মানুষেরা নদী দখল করে এখন ফসলের মাঠে পরিনিত হয়েছে ।
সম্পর্কিত খবর
দিনাজপুরের নদীগুলিতে এখন কৃষকেরা ইরি-বোরো আবাদ করছে। ছোট ছোট জলাশয় বিলে মাটি ভরাট করে ফসলি জমিতে পরিণত করা হয়েছে, কৃষি জমিতে মাটি খনন করে আবাদী জমি বিনষ্টের পাশাপাশি নষ্ট করছে বিভিন্ন বিল। কিছু কিছু পুকুর ডোবা খাল বিলে পানি থাকলেও মেশিন লাগিয়ে পানি সেচ এবং বিষ দিয়ে দেশীয় মাছের বংশ ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে প্রায়।
দিনাজপুরের প্রধান নদী পূর্ণভবা, আত্রাই, ডেপা ও ছোট যমুনা, ইছামতি নদীর নাব্যতা হারিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে এখন দখল উৎসবে পরিনত হয়েছে । দীর্ঘদিন ধরে নদী খনন ও ড্রেজিং না করার কারণে পূর্ণভবা, আত্রাই, ডেপা ও ছোট যমুনা গর্ভেশ্বরী, ইছামতি নদী এখন নালায় এবং মরায় পরিণত হয়েছে। যার কারণে দিনাজপুর জেলায় কমপক্ষে দেড় হাজার জেলে পরিবার বেকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাদের নৌকা এখন নদীঘাটের বালু চরে আটকা পড়ে রয়েছে। একারণেই বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে অনেকেই ভিন্ন পেশায় জড়িয়ে পড়েছে।
তারা এখন ওই পেশা ছেড়ে দিয়ে বিভিন্ন এনজিও সংস্থা ও দাদন ব্যবসায়ীদের নিকট চরা সুদে ঋণ নিয়ে বাড়িতে খোরাকি দিয়ে পাড়ি জমিয়েছে ভিন্ন জেলায়। অনেকে রিক্সা-ভ্যান আবার কেউ কেউ রাজমিন্ত্রী, কাঠমিস্ত্রীর জোগালী হিসেবে কাজ করছেন। নদীতে নৌকা চালিয়ে এবং মাছ ধরে যে রোজগার করতো তারা ভিন্ন জেলায় হাড়কাপানো পরিশ্রম করেও পূর্বে মতো রোজগাড় করতে পারছেন না তারা।
আত্রাই নদীর পাড়ের জেলে রবিউল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন মাছ ধরা এবং নৌ-শ্রমিকের কাজ করে এসে আজ হঠাৎ করে রিক্সা-ভ্যান চালাতে পারছি না। তারপরও সংসার চালানোর দায়ে এ সব পেশায় পরিশ্রম করতে হচ্ছে।
পূর্নভবা নদীর ধারে বাঙ্গিবেচা এলাকার জেলে অজয় কুমার জানান, নদীতে জল নেই তাই আমরা অলস সময় কাটাচ্ছি। সংসার চলছেনা ঋণগ্রস্থ্য হয়ে পড়ছি।
দিনাজপুর সদরের ৮নং শংকরপুর ইউনিয়নের সাবেক মতিউর রহমান মেম্বার জানান, নদীগুলোর নাব্যতা ফিরে আনতে হলে নদী খনন ও ড্রেজিং করা একান্ত প্রয়োজন। এতে করে পরিবেশের ভারসাম্য ফিরে আসবে। পাশা পাশি নৌ-শ্রমিক ও জেলে সম্প্রদায় নতুন করে আবার তাদের হারানো পেশা ফিরে পাবে। নাব্যতা সংকটের কারণে আজ আমার ইউনিয়নের কমপক্ষে ২শত ৪০ জেলে পরিবার বেকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, দিনাজপুরের চারটি নদীকে খনন করার জন্য নৌ পরিবহন মন্ত্রানালয় কাজ করে যাচ্ছে । খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে দিনাজপুরের চারটি নদীকে খননের কাজ শুরু হবে । দিনাজপুরের পূর্ণভবা নদীসহ যে সকল নদী দখর করা হয়েছে । তা খুব শীঘ্রই নদী দখল মুক্ত করার জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ নির্বাহী হাকিম কাজ শুরু করবে । এতে করে দিনাজপুরের নদী গুলির নব্যতা ফিরে পাবে । তার জেলে পরিবারের জীবন জীবিকার পথ গতি ফিরে পাবে ।
পিবিডি/আর-এইচ