• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

মানবতার ফেরিওয়ালা ওসি মনিরুল ইসলাম

প্রকাশ:  ২৪ মার্চ ২০১৯, ১৭:১৭
নাটোর প্রতিনিধি

পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি মহৎ কাজ করেন নাটোরের সিংড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুল ইসলাম। সিংড়ায় যোগদানের পর থেকে তিনি অসহায় বৃদ্ধা মাকে সন্তানের কাছে, শিশু সন্তানকে মায়ের কোলে, শিকল পরা গৃহবধূকে উদ্ধার করা সহ বিভিন্ন কাজ করে ইতোমধ্যেই সিংড়াবাসীর মনে নিজের জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছেন।

ওসি মনিরুল ইসলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার তারাপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯২ সালে পুলিশ বাহিনীতে উপ-পরিদর্শক (এস আই) হিসেবে যোগদান করেন। এস আই হিসেবে সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী ও ডিএমপিতে কর্মরত ছিলেন। অফিসার ইনচার্জ হিসেবে পাবনা, রাজশাহী, নীলফামারী, বগুড়া ও নাটোর জেলার বিভিন্ন থানায় অত্যন্ত দক্ষতা ও সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন।

ছেলেদের অবহেলার শিকার ৮৫ বছর বয়সী মসিরন বেওয়া প্রায় ২০ বছর যাবৎ সিংড়া পৌর শহরের দমদমা কবরস্থানের পাশে চকলেট ও বিড়ির দোকান দিয়ে আসছিলেন।

অসহায় জীবন-যাপনের বিষয়টি ওসি মনিরুল ইসলাম অবগত হয়ে মাকে তাঁর ছেলে আবু সাইদের জিম্মায় নিয়ে ভরণ পোষণের জন্য নির্দেশ দেন।

উপজেলার কুষাবাড়ী গ্রামের মৃত হুসেন প্রামাণিকের স্ত্রী রহিমা বেওয়ার মুখে লাথি মেরে ফেলে দেয় ছেলে বেল্লাল হোসেন। গ্রাম্য প্রধানদের সামনেই করা হয় মারপিট। বৃদ্ধার ছেলে বেল্লালকে থানায় ডেকে তার মাকে হাতে তুলে দেন ও মায়ের সব দায়িত্ব বুঝে দেন ওসি মনিরুল ইসলাম।

একইভাবে উপজেলার বেলোয়া গ্রামের মৃত মছির উদ্দিন প্রামাণিকের স্ত্রী ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা মর্জিনা বেওয়া দীর্ঘ দিন ধরে ছেলেদের অবহেলার শিকার হয়ে আসছিলেন। পরে বিষয়টি ওসি জানতে পেরে অবহেলিত বৃদ্ধাকে তার ছেলে মহাব্বত প্রামাণিকের কাছে দায়িত্ব বুঝে ওসি মনিরুল ইসলাম।

যৌতুক লোভী স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন মমতাজ বেগম (২২) নামের এক গৃহবধু। স্বামীর মধ্যযূগীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। গণমাধ্যম কর্মীদের কাছ থেকে খবর পাওয়ার পর রাত ১টায় হাসপাতালে নির্যাতিতা মমতাজ বেগমের কাছে ছুটে যান সিংড়া থানার ওসি মনিরুল ইসলাম। মমতাজ বেগমের কাছে ঘটনা শুনে দেড় বছরের সন্তানকে রাত ৩টায় তার কোলে ফিরিয়ে দেন তিনি।

উপজেলার ডাহিয়া ইউনিয়নের গাড়াবাড়ি গ্রামে রেবেকা নামে এক গৃহবধূকে মাঝে মধ্যেই তার স্বামী শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতেন। গণমাধ্যম কর্মীদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাৎক্ষনাৎ গভীর রাতে তিনি সঙ্গীয় ফোর্সসহ রওনা দেন উপজেলার দূর্গম এলাকায় এবং তাকে উদ্ধার করে তার পিতার বাড়িতে পৌছে দেয়।

মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমানের বিধবা মেয়ে দেলচানের মুখে হাসি ফুটিয়েছিলেন ওসি মনিরুল ইসলাম। দেলচানের ১ বিঘা জমি আবাদ করলে পার্শবর্তী গুরুদাসপুর উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের হরদমা গ্রামের সোহরাব তার ধান জোরপূর্বক কেটে নেয়। দীর্ঘদিন থেকে ঘুরে কোন সমাধান হয়নি। ওসি বিষয়টি জানতে পেরে দেলচানের সমুদয় টাকা আদায় করে তাঁর হাতে তুলে দেন।

মজিরন বেওয়া, বয়স শত বছরের উপরে। উপজেলার পুঠিমারি গ্রামে। বসতবাড়ির জায়গাটুকু জোরপূর্বক লেখে নেন নাতি লালু। এখন জমিটুকু নেয়ার জন্য বারবার চাপ দিচ্ছে। কিন্তু তাকে ঠিকমত দেখভাল করেনা। অভিযোগের পরিপেক্ষিতে মুচলেকা নেয়ার পর ওসি মনিরুল ইসলাম বৃদ্ধা মজিরন বেওয়াকে তার নাতি লালুর হাতে তুলে দিলেন।

মোছাঃ শাহিদা বেওয়া, বয়স প্রায় ৭০ বছর। বাড়ি নাটোরের সিংড়া উপজেলার খরমকুড়ি গ্রামে। মাঝে মাঝেই ছেলেদের নির্যাতনের শিকার হতে হন তাকে। সম্প্রতি ছেলে সাইদুল ও স্বপন তাকে মারধর করে। ওসি মনিরুল ইসলাম ঘটনা শুনে তার ছেলেদের আটক করে আনে। তারা মুচলেকা দেয় যে, আর কখনো মাকে মারধর করবেনা। ছেলেদের হাতে বৃদ্ধা শাহিদা বেওয়াকে তুলে দেন সিংড়া থানা পুলিশ।

দুই ছেলের অবহেলার শিকার রেখা বেগম ফিরে পেয়েছে নিজ ভিটাবাড়ি। রেখা বেগম উপজেলার পারসাঐল গ্রামের মৃত আখের আলীর স্ত্রী। সম্প্রতি আপোষ নামা করে ছেলেদের জিম্মায় দেন সিংড়া থানার ওসি মনিরুল ইসলাম।

সিংড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, মানবতার পাশে দাঁড়ানো সকলের কর্তব্য, সবাই যদি স্ব স্ব অবস্থান থেকে মানবতার জন্য এগিয়ে আসে তাহলে এ বিশ্ব হবে ভালবাসায় পরিপূর্ণ। সবাইকে তিনি মানবতার জন্য এগিয়ে আসতে আহবান জানান সেই সাথে ভবিষ্যতে তিনি এ রকম কাজ আরও করার জন্য প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

পিবিডি/আর-এইচ

নাটোর

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close