• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

বিদেশী শাড়ীর দৌরাত্ম্যে ভালো নেই টাঙ্গাইলের তাঁতীরা

প্রকাশ:  ২৪ মার্চ ২০১৯, ১৭:২২
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

উৎসবের নারীদের পোষাক মানেই শাড়ী। আর সে শাড়ীর অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ী।

টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ীর সুনাম দেশের গন্ডি পেরিয়ে দেশের বাইরেও পৌঁছে গেছে। কিন্ত বর্তমানে বিদেশী শাড়ীর দৌরাত্ব্যে কঠিন সময় পার করছে টাঙ্গাইলের তাঁতীরা। বিশেষ করে ভারতীয় শাড়ীর বাজারে সহজলভ্যতা ও থ্রি পিসের প্রতি মহিলাদের আগ্রহ টাঙ্গাইল তাঁত শাড়ীর বাজার কিছুটা পড়তির দিকে। ফলে হতাশায় ছায়া পুরো তাঁত শিল্পের সাথে সংশিষ্টদের।

সরেজমিনে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ধুলটিয়া, বাজিতপুর, সুরুজ, বার্থা, বামনকুশিয়া, তারটিয়া, ও দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল, চন্ডি, নলুয়া, দেওজান, নলশোঁধা, বিষ্ণুপুর, মঙ্গলহোড়, কালিহাতী উপজেলার বল্লা-রামপুর গিয়ে ঘুরে দেখা গেল হতাশার চিত্র টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী তাঁত পল্লীগুলোতে। উচ্চমুল্য দিয়ে সুতা ক্রয় ও প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম বেশি হলেও ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত শাড়ী উৎপাদন কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা। সংসারে বাড়তি আয় যোগ করতে কাজ করছেন পরিবারের মহিলারাও। তবে বেঁচাকেনা তেমন না হওয়ায় দুশ্চিন্তা আর হতাশা পিছু ছাড়ছেনা তাঁত মালিকদের।

একদিকে দেশীয় মার্কেট গুলোতে ভারতীয় শাড়ীর অবাধ প্রবেশ, সুতার দাম বৃদ্ধি, পাওয়ার লুম তাঁত মেশিনের দাপট, থ্রি পিস এর প্রতি নারীদের আগ্রহ, সরকারি কোন পদক্ষেপ না থাকা প্রভৃতি কারনেই তাঁত শিল্প তার জৌলুস হারিয়ে ফেলেছে বলে তাঁতীদের অভিমত।

বর্তমানে তাঁত পল্লীতে তৈরি হচ্ছে মনোমুগ্ধকর হাইব্রিড, সুতি ও সিল্ক জামদানি, বালুচুরি, ধানসিঁড়ি, আনারকলি, শফট সিল্ক, রেশম, তশর, কাতান, একতারি, দোতারি, প্রভৃতি টাঙ্গাইল শাড়ী তৈরী হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শাড়ী ব্যবসায়ীরা।

কথা হয় সিরাজগঞ্জ এর শাহজাদপুর থেকে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল ইউনিয়নের চন্ডীতে কাজ করতে আসা তাঁত শ্রমিক শাহীন আলমের সাথে। তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘ দিন ধরে তাঁত শিল্পে কাজ করছি। এখন অনেক তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বর্তমানে আমাদের কর্মসংস্থান কম। তাঁত শাড়ীর দামও কমে গেছে। সরকারের কাছে দাবী, বিদেশী শাড়ী যেন আর না আসে।আমাদের পক্ষে এই শিল্পে কাজ করে জীবন ধারন করাই কষ্টকর হয়ে পড়ছে।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার করটিয়া ইউনিয়নের ধুলুটিয়া গ্রামের তাঁত মালিক সুরুজ মিঞা জানান, বর্তমানে শাড়ীতে পয়সা কম, তার পরেও ব্যবসাটা ধইরা রাখছি। সুতার দাম আর কর্মচারীর মুজুরিতে মিলে হিসাব করে দেখা যায় শাড়ীর লাভ কম। একটা শাড়ী তৈরী করতে ২ থেকে ৩ দিন সময় লাগে। একটা শাড়ী তৈরী করতে ২ হাজার থেকে ২২ শো টাকা খরচ হলে আড়াই হাজার টাকা বিক্রি করা যায়। শাড়ী প্রতি লাভ থাকে ২ থেকে ৩ শত টাকা মাত্র।

মনে মন্টুর শাড়ী ঘর স্বতাধিকারী মনে মন্টু বসাক বলেন, অনেক গরীর তাঁতী আছে তাদের তাঁতীদের তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে। ক্ষতি দিয়ে কাপড় বিক্রি করে পুঁজি শেষ করে ফেলেছে। সরকারী সহযোগিতা পেলে এই সব তাঁতীরা দাঁড়াতে পারতো। দেশের বাইরে থেকে যে শাড়ী আসে, তার ট্যাক্স দ্বিগুন করে দিলে আমার মনে হয় টাঙ্গাইলের শাড়ীর যে ঐতিহ্য সেটা টিকে থাকতো। সামনে ঈদ আমরা শাড়ী তৈরীতে পুঁজি বিনিয়োগ করতে সাহস পাচ্ছি না। যদি পুঁজি ফেরত না আসে। বাপ-দাদার এই ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়ছে।

বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড বেসিক সেন্টার টাঙ্গাইলের লিয়াজোঁ অফিসার মোঃ রবিউল ইসলাম বলেন, আমরা জানি টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ীর বাজার কিছুটা নিম্নমূখী। শুধু বিদেশী শাড়ী নয়, মানুষের পোশাক, বিশেষ করে থ্রি পিস ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় শাড়ীর উপর তার প্রভাব পড়েছে। তবে সরকার এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। সম্প্রতি একটি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। যার মাধ্যমে তাঁত মালিকদের স্বল্প সুদে ঋন দেয়া যাবে। আশা করি এতে, তাঁত মালিকরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। এ ছাড়া আমরা বিভিন্ন ধরনের সাহায্য সহযোগিতা দিতে সব সময় প্রস্তুত আছি।

পিবিডি/আর-এইচ

টাঙ্গাইল

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close