• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

রাজশাহীতে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষিকার গুরুতর অভিযোগ

প্রকাশ:  ২৫ মার্চ ২০১৯, ১৮:৪৩
রাজশাহী প্রতিনিধি

রাজশাহীর মহানগর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম ইনিস্টিটিউটের সেই অধ্যক্ষ জহুরুল আলম রিপনের বিরুদ্ধে এবার ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ এনেছেন প্রতিষ্ঠানটির এক শিক্ষিকা। তিনি সম্পর্কে ওই অধ্যক্ষের খালাতো ভাইয়ের স্ত্রী । ২০১৫ সালের ৫ এপ্রিলের এ ঘটনার পর ওই শিক্ষিকাকে চাকরিচ্যুত করেন অধ্যক্ষ।

প্রায় তিনবছর পর ঘটনার বিচার চেয়ে রোববার (২৪ মার্চ) কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন শিক্ষিকা। একই সাথে চাকরিতে পুর্নবহালের আবেদন জানিয়েছেন তিনি।

ভুক্তভোগী শিক্ষিকা কম্পিউটার প্রদর্শক কাম মেকানিক পদে কর্মরত ছিলেন। তার ইনডেক্স নম্বর ৩০৭৩২২৯। তিনি অধ্যক্ষ রিপনের খালাতো এক ভাইয়ের স্ত্রী। আর এ কারণেই এতোদিন মুখ খোলেননি তিনি। ওই শিক্ষিকার অভিযোগ, অধ্যক্ষ কেবল তার-ই নন; অনেক কোমলমতি ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করেছেন।

অভিযোগের অনুলিপি রাজশাহী-৬ আসনের সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমকেও দেয়া হয়। তিনি অভিযোগটি গুরুতর উল্লেখ করে দ্রুত তদন্ত করে আইনত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

লিখিত অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৫ সালের ৫ এপ্রিল অধ্যক্ষ তার নিজ বাড়িতে তাকে ল্যাপটপ আনতে পাঠিয়েছিলেন। সরল বিশ্বাসে গিয়ে দেখেন, বাড়ির সদর দরজায় তালা দেয়া। ওই সময় অধ্যক্ষকে পেছনে দাঁড়ানো দেখেন তিনি। এ সময় কৌশলে অধ্যক্ষ তাকে তার শোবার ঘরে নিয়ে যান। পরে তাকে কুপ্রস্তাব দেন, নানান প্রলোভনও দেন। কিন্তু তাতে রাজি হননি তিনি। ফাঁকা বাড়িতে তাকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। তবে কোনরকমে সেখান থেকে পালিয়ে আসেন তিনি।

ওই শিক্ষিকার ভাষ্য, অধ্যক্ষের বাড়ি থেকে ফিরেই তিনি তৎকালীন প্রভাষক মোকসেদ আলীকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। লোকলজ্জায় বিষয়টি অন্য সহকর্মীদের না জানিয়ে তিনি বাড়ি ফিরে যান। ঘটনার কিছুদিন পর অধ্যক্ষ তাকে কলেজে ডেকে উল্টো প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে বলেন। একই সাথে কলেজে একটি কম্পিউটার প্রদানের শর্ত দেন। কিন্তু কোন শর্তই তিনি মানতে রাজি হননি। শেষ পর্যন্ত তাকে জোর করে পদত্যাগপত্রে সই করিয়ে নেন অধ্যক্ষ।

এর আগে ২০১৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি নিজ অফিস কক্ষেই এক ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে অধ্যক্ষ রিপন। বিষয়টি জানাজানি হলে পরদিন থেকেই শাস্তি দাবিতে বিক্ষোভে নামে এলাকাবাসী। এরপর একে একে অধ্যক্ষের কুকর্ম ফাঁস হতে শুরু করে। ঘটনার চারদিনের মাথায় ওই ছাত্রীসহ আরও দুই ছাত্রী এবং এক শিক্ষিকা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর নিপীড়নের লিখিত অভিযোগ দেন।

এছাড়া আর্থিক অনিয়ম ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগে নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকরাও। অভিযোগ তদন্ত হলেও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। পরে অপহরণ ও ধষর্ণচেষ্টার অভিযোগে একমাস পর ৮ মার্চ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে ওই প্রতিষ্ঠানেরই এক ছাত্রী। ওই দিনই জেলার পবা উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এর পাঁচ দিনের মাথায় ১৩ মার্চ প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটির সভায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ছাত্রী অপহরণ ও ধষর্ণচেষ্টায় তাকে অভিযুক্ত করে গত বছরের ৪ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। যদিও জামিনে মুক্ত রয়েছেন অধ্যক্ষ। এখন আবার ওই অধ্যক্ষ কলেজে ফিরছেন-এমন খবরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে ছাত্রী ও অভিভাবকদের মাঝে। ন্যায় বিচার নিয়েও শঙ্কিত নিপীড়নের শিকার ছাত্রী ও তার পরিবার। তাছাড়া তার অপকর্মের সাক্ষ্য দেয়ায় চাকরি নিয়ে শঙ্কায় শিক্ষক-কর্মচারীরা।

শিক্ষিকার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন অধ্যক্ষ জহুরুল আলম রিপন। তার দাবি, তাকে ফাঁসাতে উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে এই অভিযোগ আনা হয়েছে। ওই শিক্ষিকা ব্যক্তিগত কারণে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন বলেও দাবি করেন তিনি।

কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ নেওয়াজ বলেন, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে এক শিক্ষিকার লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

পিবিডি/আর-এইচ

রাজশাহী

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close