• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

পাসপোর্ট জালিয়াত চক্রের হোতা মোজাম্মেল হকসহ ২৬জন গ্রেফতার

প্রকাশ:  ০৭ মার্চ ২০১৮, ১৬:৪১
আহমাদুল কবির

মালয়েশিয়ায় পাসপোর্ট জালিয়াত চক্রের হোতা ৫০ বছর বয়সের বাংলাদেশি মাষ্টার মাইন্ড চট্টগ্রামের মোজাম্মেল হক।তার সাথে আরও ১৮ বাংলাদেশিসহ মোট ২৬ জনকে গ্রেফতার করেছে মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন বিভাগ।ইমিগ্রেশনের দাবি এটি মালয়েশিয়ার সবচেয়ে বড় পাসপোর্ট জালিয়াতির সিন্ডিকেট।

মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, সোমবার ৫মার্চ ক্লাং নামক স্থান থেকে তাদের আটক করা হয়েছে।ইমিগ্রেশন বিভাগের মহা-পরিচালক দাতুকে সেরি মোস্তাফার আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘সোমবার রাতে ক্লাং উপত্যকায় ১৮ জন বাংলাদেশিকে পাসপোর্ট জালিয়াতির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন মহিলাও রয়েছে। তাদের সাথে ২ জন পাকিস্তানি, ৪ জন ইন্দোনেশিয়ান মহিলা, একজন ফিলিপাইন মহিলা এবং একজন স্থানীয় নাগরিককেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

সম্পর্কিত খবর

    মোস্তার আলী বলেন, গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে দুটি গাড়ি, সহশ্রাধিক জাল পাসপোর্ট, ইমিগ্রেশন রাবার স্ট্যাম্প, বিদেশি ভিসা স্টিকার, চারটি কম্পিউটার, একটি প্রিন্টার এবং চারটি প্যানড্রাইব উদ্ধার করা হয়েছে। ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্ট সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দাতুক সেরি মোস্তাফার আলী সাংবাদিকদের জানান, দীর্ঘদিন ধরে চক্রটি বাংলাদেশের জাল পাসপোর্ট তৈরির পাশাপাশি মালয়েশিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশের পাসপোর্ট ও ভিসা জাল করে আসছে এ চক্রটি।

    কুয়ালালামপুরের শ্রী পেটেলিংয়ে ভাড়া বাসাতে তার পরিবার নিয়ে বসবাস করতো ৫০ বছর বয়সী মাস্টারমাইন্ডের এই বাংলাদেশি। তিনি যে বাসায় থাকতেন তার পাশের বাসাতে থাকতো পরিবার। সেখানেও পাসপোর্ট তৈরির সরঞ্জাম পাওয়া যায়। পরে তার পরিবারের সদস্যদের আটক করা হয় বলে জানিয়েছে ইমিগ্রেশন বিভাগ।

    ৫০ বছর বয়স্ক মোজাম্মেল তার জালিয়াতি লুকানোর জন্য সে নামে মাত্র আরও বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করেছে বলে জানান মোস্তাফার। সে ২০০৫ সালে ভ্রমণ ভিসায় পরিবার নিয়ে মালয়েশিয়ায় বেড়াতে এসে এবং জালিয়াতির মাধ্যমে এখানেই থেকে যায়।মোস্তাফার আলী বলেন, ‘পাসপোর্ট তৈরির আগে সে মালয়েশিয়ায় সাধারণ বীমা, টেক্সটাইল, রেস্তোরাঁয় চুক্তিমূলক কাজ এবং তার অপরাধ ঢাকার জন্য সামাজিক কাজকর্ম চালু করে।’

    প্রাথমিক তদন্তে জানা যায় যে, সিন্ডিকেটটি নকল বাংলাদেশি শিক্ষা সার্টিফিকেট তৈরি করে বিভিন্ন কাজে যোগদানের জন্য বাংলাদেশিদের সহযোগিতা করে বলে জানান দেশটির ইমিগ্রেশন মহাপরিচালক।মোস্তাফার আলী আরও বলেন,‘এই সিন্ডিকেট বাংলাদেশি বা অন্যদেশের নাগরিকদের মালয়েশিয়ায় নিয়ে এসে জাল ভিসা তৈরি করে কানাডা, সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ড, কোরিয়া, জাপানসহ আরও কয়েকটি দেশে তাদের পাঠানোর ব্যবস্থা করে।’

    গত দুই মাস কড়া নজরদারির পর সোমবার এ অভিযান চালানো হয় এবং আমরা সফল হয়েছি। গত দুই বছর তারা খুব সক্রিয়ভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং লাখ লাখ রিঙ্গিত তারা আয় করেছে বলেও জানান তিনি।আমরা এখনও তদন্ত অব্যাহত রেখেছি এই জন্য যে, এঘটনার সাথে আর কারা কারা জড়িত আছে এবং অন্য যেসব ব্যবস্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলো কিভাবে পরিচালিত হচ্ছে? আমরা পর্যায়ক্রমে সব খুঁজে বের করবো।

    খোজ নিয়ে জানা গেছে,গত ২৬ জানুয়ারি মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে দালালি করতে গিয়ে মাষ্টার মাইন্ড পাসপোর্ট জালিয়াত চক্রের হোতা মোহাম্মদ মোজাম্মেল হককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে দূতাবাস।দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে,মোজাম্মেল ওই দিন মোজাম্মেল নিজেকে ভূমি জেরনির পরিচালক পরিচয় দেয়। কিন্তু সিস্টেমে থাকা কোম্পানির প্রোফাইলে মোজাম্মেল নামক কোনো পরিচালকের নাম পাওয়া যায়নি। এতে আরো সন্দেহ হয়।

    তখন কোম্পানির পরিচালক কে জিজ্ঞেস করলে জানা যায় যে, বাংলাদেশ থেকে ১৫০ জন কর্মী এনে দিবে এর বিনিময়ে তাকে পরিচালক করার প্রক্রিয়া চলছে।’ তার আগে সে ঐ কোম্পানির পরিচালক পরিচয় দেয়। ওই কোম্পানির পরিচালক জানান, সে আরো বলেছে যে সে বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সির ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল এর পরিচালক। কিন্তু ক্যাথারসিস জানিয়েছে সে তাদের কেউ না। মূলত সে দূতাবাস থেকে এটেশটেশন করিয়ে দিবে একথা বলে ঐ কোম্পানি থেকে ২০ হাজার রিংগিত নিয়েছিল বলে জানা যায়।

    দূতাবাস সূত্রে জানান গেছে যে, ভূমি জেরনি সার্ভিস কোম্পানি বাংলাদেশ থেকে ১৫০ জন ক্লিনার পদে লোক আনার অনুমতি পেয়েছে এবং ১৮ জানুযারি অনলাইনে দূতাবাসের পোর্টালে এসেছে এখন দূতাবাস ঐ কোম্পানিতে আসলেই কাজ আছে কিনা, ১৫০ জন লোক লাগবে কিনা, থাকার কি ব্যবস্থা, বেতন ভাতা ঠিকমত দেয় কিনা এসব যাচাই করে অনুমতি দিবে। তার আগেই বাইপাস করে বা প্রেসার দিয়ে কাজ করানোর চেষ্টা কওে মোজাম্মেল। এর আগে মোজাম্মল দূতাবাসের ২য় সচিব শ্রম ফরিদ আহমেদকে ফোনে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি এর নাম করে চাপ সৃষ্টি করে এবং ২০ হাজার টাকা ঘুষ নেয়ার কথা বলে।

    এমনকি দুই গাড়ি পুলিশ দিয়ে তাকে দূতাবাস থেকে তুলে নেয়া এবং বাসায় লোক পাঠিয়ে হেনস্থা করার হুমকিও দেয়। এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসা করাতে সে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। একপর্যায়ে জি টু জি প্লাস মেকানিজম ও সিস্টেম নিয়েও কটাক্ষ করে। ঘুষের বিষয়ে উপস্থিত ভূমি জেরনির পরিচালক জানায়, ফরিদ কখনই ঘুষ চায় নি। তারা কাউকে ঘুষ দেয়নি। ওই দিনই পুলিশের হাতে মোজাম্মেলকে তোলে ৩ দিন পর সে বের হয়ে কিছু মিডিয়া কর্মীর প্ররোচনায় কুয়ালালামপুররস্থ বুকিত বিনতাং এলাকায় রসনা বিলাস নামক রেষ্টুরেন্টে এক সংবাদ সম্মেলন করে। এর পরই তাকে পর্যবেক্ষনে নিয়ে আসে স্থানিয় গোয়েন্দা সংস্থা। শুরু হয় তার বিরুদ্ধে তদন্ত। দীর্ঘ দুই মাস পর্যবেক্ষনের পর ৫ মার্চ জালিয়াত চক্রের মাষ্টার মাইন্ড মোজাম্মেল হক সহ তার সহযোগি বাংলাদেশি সহ ২৬ জনকে গ্রেফতার করে সে দেশের ইমিগ্রেশন পুলিশ।

    উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে ওই মোজাম্মেল হক নকল পাসপোর্ট করার মেশিনসহ ধরা পড়েছিল মালয়েশিয়া পুলিশের হাতে।

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close