• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

প্রস্তুতি ছাড়াই তফসিলভুক্ত হওয়ার চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক

প্রকাশ:  ২৭ মে ২০১৮, ১৫:৫৪ | আপডেট : ২৭ মে ২০১৮, ১৬:৩৫
বিজনেস ডেস্ক

বাংলাদেশ ব্যাংকের তফসিলভুক্ত হওয়ার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে প্রবাসীদের কল্যাণে প্রতিষ্ঠিত প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। কিন্তু ব্যাংকটিতে যোগ্য ব্যাংকারের অভাব রয়েছে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ছাড়া কোনো জ্যেষ্ঠ ব্যাংকারও নেই ব্যাংকটিতে। এসব ঘাটতি নিয়েই ৪২৯ কোটি টাকার মূলধন নিয়ে ব্যাংকটি তফসিল ভুক্ত হতে চায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, গত দুই বছরে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের এমডি পদে দায়িত্ব পালন করেছেন ছয়জন। ঘন ঘন পরিবর্তনের এ ধারাবাহিকতায় বর্তমানে ব্যাংকটির এমডি হিসেবে আছেন কৃষি ব্যাংকের সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মাহ্তাব জাবিন। ব্যাংকটির ডিএমডি হিসেবে কর্মরত আছেন সরকারের যুগ্ম সচিব বদরে মুনির ফেরদৌস। এর আগে নেয়াখালী জেলা প্রশাসকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

সম্পর্কিত খবর

    ডিএমডির নিচে আছেন দুজন মহাব্যবস্থাপক (জিএম)। কয়েক মাসের মধ্যেই তারাও প্রস্তুতি নিচ্ছেন অবসরে যাওয়ার। পদ থাকলেও কর্মরত নেই কোনো ডিজিএম ও এজিএম। দুজন জ্যেষ্ঠ মুখ্য কর্মকর্তা (এসপিও) আর ১১ জন মুখ্য কর্মকর্তা (পিও) নিয়েই চলছে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট।

    সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১১ সালের ২০ এপ্রিল যাত্রা করা প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে সঠিক পথে পরিচালনা করা হয়নি। ব্যাংকটিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য নেয়া হয়নি সুনির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্যমাত্রাও। দক্ষ জনবলও নিয়োগ হয়নি। ফলে গড়ে ওঠেনি করপোরেট সংস্কৃতি। মূলত ব্যাংকটিতে নিয়োগ পাওয়া এমডিরা ছিলেন যাওয়া-আসার কাতারে। দীর্ঘমেয়াদে কোনো এমডি দায়িত্ব পালন না করায় প্রত্যাশা অনুযায়ী সামনে এগোতে পারেনি ব্যাংকটি।

    প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাহ্তাব জাবিন এ প্রসঙ্গে বলেন, শুধু এমডি দিয়ে কোনো ব্যাংক চলে না। মাত্র একজন ডিএমডি, দুজন জিএম হলেন প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের সর্বোচ্চ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। যোগ্য জনবল নিয়োগ দিতে হলে ভালো বেতন দিতে হবে। কিন্তু বিদ্যমান ব্যবসা আর আয় দিয়ে এটি সম্ভব নয়।

    বিশেষায়িত ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলেও ২০১৬ সাল থেকেই বাণিজ্যিক কার্যক্রমে আসার উদ্যোগ নেয় প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের তফসিলভুক্তির জন্য ব্যাংকটির প্রয়োজন ছিল ৪০০ কোটি টাকার মূলধন। দুই বছর ধরেই অর্থ মন্ত্রণালয় ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে মূলধন জোগান নিয়ে টানাপড়েন ছিল। শেষ পর্যন্ত ওয়েজ আর্নার্স বোর্ডের জোগান দেয়া অর্থেই ৪০০ কোটি টাকার মূলধন জোগাড় করেছে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। এর মধ্যে মাত্র ২০ কোটি টাকা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বর্তমানে ব্যাংকটির মূলধনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪২৯ কোটি টাকা।

    বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে তফসিলভুক্তির প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। চলতি মাসের মধ্যেই ব্যাংকটিকে চূড়ান্ত ছাড়পত্র দেয়া হতে পারে। তফসিলভুক্ত হলে ব্যাংকটি কৃষি ব্যাংক ও রাকাবের মতো বিশেষায়িত ব্যাংকের মর্যাদা পাবে। তবে বিশেষায়িত ব্যাংকের লাইসেন্স দিয়েই প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

    মাহ্তাব জাবিন এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে এগিয়ে নিতে হলে বাণিজ্যিক কার্যক্রমে যেতে হবে। এজন্য আমাদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পাওয়ার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আমরা প্রবাসীদের উপার্জিত অর্থ তাদের স্বজনদের কাছে পৌঁছে দেয়ার কার্যক্রম শুরু করব। এ লক্ষ্যে বেশকিছু উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। যোগ্য কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়াটিও এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। আশা করছি, ধীরে ধীরে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক সমৃদ্ধির দিকে এগোবে।

    ব্যাংকটির তথ্যমতে, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক সারা দেশে ৫৪টি শাখার মাধ্যমে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ঋণ দেয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ব্যাংকটির স্থায়ী ও অস্থায়ী মোট জনবল রয়েছে ২৬২ জন। এর মধ্যে স্থায়ী জনবল ১৫০ ও অস্থায়ী ১১২ জন।

    যাত্রার পর থেকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক বিদেশ গমনেচ্ছুদের জন্য ‘অভিবাসন ঋণ’ ও বিদেশ ফেরতদের জন্য ‘পুনর্বাসন ঋণ’ দিয়ে আসছে। ব্যাংকটির মূল ঋণ প্রডাক্ট এ দুটিই। তফসিলভুক্ত না হওয়ায় ব্যাংকটি গ্রাহকদের কাছ থেকে কোনো আমানত সংগ্রহ করতে পারে না। তবে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের প্রধান শাখা বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীর কাছ থেকে রেজিস্ট্রেশন ফি, স্মার্টকার্ড ফি ও ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ ফি গ্রহণ করে।

    প্রতিষ্ঠার পর গত ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ব্যাংকটি মোট ২৮ হাজার ৫২২ জন গ্রাহককে ২৯০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে আদায় হয়েছে ২১১ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। বর্তমানে ১৫ হাজার ৩৯৫ জন গ্রাহকের কাছে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ১২৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকার ঋণ রয়েছে। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭ কোটি টাকা, যা ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণের ৬ শতাংশ।

    ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণের প্রায় শতভাগই অভিবাসন ঋণ। বিদেশ গমনেচ্ছুদের মধ্যে এ ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। গত সাত বছরে বিদেশ ফেরত মাত্র ১৬০ জন গ্রাহককে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা পুনর্বাসন ঋণ দিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক।

    সীমিত পরিসরে কার্যক্রম পরিচালনা করলেও মুনাফায় আছে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ব্যাংকটি ৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে। চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকটির এ মুনাফা বেড়ে প্রায় ১০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। সূত্র: বর্ণিক বার্তা

    ওএফ

    প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক,তফসিলভুক্ত
    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close