• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

বঙ্গবন্ধুর গৃহবন্দি পরিবারকে যেভাবে উদ্ধার করেছিলেন কর্নেল তারা

প্রকাশ:  ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭, ১২:২০ | আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭, ১২:৫০
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

জীবনকে বাজি রেখে ধানমন্ডিতে গৃহবন্দি অবস্থা থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যদের উদ্ধার করেছিলেন ভারতের বর্ষীয়ান সেনা কর্মকর্তা কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) অশোক কুমার তারা।

ইতিহাসে তিনি নতুন কিছু নন বা তাকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার মতো নয়। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেসা, তার তখনকার ২৪ বছর বয়সী মেয়ে, বর্তমানের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সন্তানসহ পরিবারের সকলকে পাকিস্তানি সেনাদের হাত থেকে উদ্ধার করেছিলেন। সেদিনের সেই স্মৃতি নিয়ে তিনি কথা বলেছেন ভারতের বার্তা সংস্থা এএনআইয়ের সঙ্গে। নয়া দিল্লিভিত্তিক এই সংবাদ সংস্থাটির ভারতে রয়েছে ৫০টি ব্যুরো। কর্নেল অশোক বলেছেন, তখন তার বয়স ২৯ বছর।

সম্পর্কিত খবর

    তিনি মেজর পদে দায়িত্ব পালন করছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের গৃহবন্দি করে রেখেছে পাকিস্তানি সেনারা। তাদের বন্দুক তাক করা। কেউ সেদিকে অগ্রসর হলেই গুলি করে মেরে ফেলা হবে। বন্দুকের ট্রিগারে তাদের আঙ্গুল। এমনই এক পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের উদ্ধারের দায়িত্ব পড়ে তার ওপর। তিনি জীবন-মৃত্যুকে বাজি রেখে সেই অভিযানে নেমে পড়েন।

    কর্নেল অশোক বলেন, ওই অপারেশনে বন্দুকের ট্রিগারে হাত রেখে খুশি মনে থাকা পাকিস্তানি সেনাদের মুখোমুখি হতে হয়েছিল আমাকে। তারা ছিল ভারি অস্ত্রে সজ্জিত। তাদের কাছে পৌঁছার চেষ্টা করতেই একজন সাংবাদিককে হত্যা করা হলো। এমন সময় সেখানে আমি শুধু একা, নিরস্ত্র। পাকিস্তানি এসব সেনাদের বিরুদ্ধে আমি মানসিক কৌশল প্রয়োগ করে জয়ী হওয়ার জোরালো সিদ্ধান্ত নিলাম।

    এ ছাড়া বাড়তি শক্তি প্রয়োগ করলে তাতে অনেক বেশি সময় লাগতে পারে। আমি জানতাম সুযোগ খুবই সীমিত। তবু সামনে এগিয়ে গেলাম। এটা যেন ‘দ্য ব্যাটল অব গাটস অ্যান্ড উইটস’। কর্নেল অশোক বলেন, যে বাড়িতে শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল সেখানে পৌঁছে গেলাম আমি। আমাকে হত্যার হুমকি দেয়া হলো। এমনকি তাদের কমান্ডার অধীনস্তদের অস্ত্রে গুলি লোড করার নির্দেশ দিল। তারা গুলি করার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেল। কিন্তু আমি আমার অবস্থানে অটুট রইলাম। বার বার তাদের আত্মসমর্পণ করতে বললাম।

    যাহোক, তাদের নিরাপদে চলে যাওয়ার সুযোগ দেয়ার নিশ্চয়তা দিলাম আমি, যাতে তারা তাদের সদর দপ্তরে চলে যেতে পারে। তারপর সেখান থেকে তারা পাকিস্তানে তাদের পরিবারের কাছে যেতে পারে, যেখানে তাদের জন্য অপেক্ষায় ছিল তাদের পরিবারের সদস্যরা। এভাবে শেষ পর্যন্ত আমি তাদের আত্মসমর্পণ করাতে সক্ষম হলাম এবং গৃহবন্দি থাকা বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে উদ্ধার করি।

    এটা ছিল জীবন অথবা মৃত্যুকে বেছে নেয়ার মতো একটি অবস্থা। উল্লেখ্য, কর্নেল তারা ১৯৯৪ সালে অবসরে গিয়েছেন। কয়েক বছর আগে ব্যাটল অব গঙ্গাসাগরের বা গঙ্গাসাগরের যুদ্ধের জন্য তাকে দেয়া হয়েছে বীরচক্র পদক। এ যুদ্ধের প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, এটা ছিল ওটা ছিল আগরতলার (ত্রিপুরা) বিপরীতে তখনকার পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমানের বাংলাদেশ) একটি রেল স্টেশন। সেখানে রেললাইন ধরে অভিযান চালানো হয়েছিল। গড়ে তোলা হয়েছিল ‘হ্যান্ড টু হ্যান্ড’ এবং ‘বাংকার টু বাংকার’ লড়াই। ওই লড়াই চলেছিল প্রায় দু’ঘণ্টা। এ যুদ্ধে আমাকে ব্যবহার করতে হয়েছিল হাতবোমা। ছুড়েছি হ্যান্ড গ্রেনেড। একটি বাংকার থেকে একটি মেশিন গান নিয়ে শত্রুদের ধ্বংস করতে ব্যবহার করি।

    এ জন্য আমাকে দেয়া হয়েছে বীরচক্র। কর্নেল তারা তার এই যুদ্ধের স্বীকৃতি পেয়েছেন ২০১২ সালে। ওই সময় তাকে ‘ফ্রেন্ড অব বাংলাদেশ’ পদক দেয়ার কথা ঘোষণা করা হয়। এ বছর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে নয়া দিল্লিতে ১৯৭১ সালের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর এক অনুষ্ঠানে দেখা গেছে কর্নেল তারা-কে।

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close