• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বেহেস্ত নসীব প্রার্থনাকারী সেই মাদ্রাসা অধ্যক্ষ কারাগারে

প্রকাশ:  ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭, ২০:২৭ | আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭, ২০:৪৯
তপু আহম্মেদ, টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইলের গোপালপুরে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বেহেস্ত নসীব প্রার্থনাকারী দারুল উলুম কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ড. ফায়জুল আমীর সরকারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

গত শনিবার সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদের তালুকদার বাদী হয়ে গোপালপুর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৬ ধারায় মামলা দায়ের করেছেন।

সম্পর্কিত খবর

    আটক অধ্যক্ষকে রোববার সকালে টাঙ্গাইলে কোর্টে চালান করা হয়। পরে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে জেল কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

    গোপালপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাসান আল মামুন জানান, টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদের তালুকদার বাদী হয়ে শনিবার থানায় মামলা দায়ের করেন। আটক অধ্যক্ষকে রোববার সকালে টাঙ্গাইলে কোর্টে চালান করা হয়।

    এই কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বাড়ি কুমিল্লা জেলার ভাঙ্গুরা বাজার (পুরাতন মুরাদনগর) থানা এলাাকায়। তিনি এর আগে জামালপুরের সরিষাবাড়ীর আরামনগর কালিম মাদ্রাসায় ১৯৯৯ সালে থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন।

    তিনি আরো জানান, বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর নিচ্ছি সে জামায়াত-শিবির কিংবা রাষ্ট্রবিরোধী জঙ্গি সংশ্লিষ্ট কর্মকান্ডে জড়িত কিনা।

    ওসি আরো জানিয়েছেন, অধ্যক্ষ ড. ফায়জুল আমীর সরকারকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি মুখ ফসকে ভুলে এসব কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন।

    টাঙ্গাইল কোর্ট ইন্সপেক্টর আনোয়ারুল হক জানান, আমলী আলাদত গোপালপুর অ লের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্টেট গোলাম কিবরিয়া রোববার অধ্যক্ষ ড. ফায়জুল আমীর সরকারের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে জেল কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

    স্থানীয়রা জানান, এই ঘটনায় গোপালপুরসহ পুরো টাঙ্গাইল জেলায় ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে।

    মামলা সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান শনিবার সকাল আটটায় গোপালপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুস্পমাল্য অর্পনের পূর্বে একাত্তরে শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়ার আয়োজন করা হয়।

    উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত এ দোয়া অনুষ্ঠানে মোনাজাতে নের্তৃত্ব দেন গোপালপুর কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ড. ফায়জুল আমীন সরকার।

    অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান ইউনুস ইসলাম তালুকদার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলরুবা শারমীন, ওসি হাসান আল মামুন, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মরিয়ম আক্তার মুক্তা, পৌর মেয়র রকিবুল হক ছানা, জেলা পরিষদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদের তালুকদার, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির টাঙ্গাইল জেলা শাখার আহবায়ক এডভোকেট কেএম আব্দুস সালাম, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুস সোবহান তুলাসহ আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী, সকল সরকারি কর্মকর্তা এবং মিডিয়া কর্মীরা।

    দোয়া অনুষ্ঠানে অধ্যক্ষ ড. ফায়জুল আমীন সরকার বলেন, হে আল্লাহ তুমি পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারি, যাদের ফাঁসি হয়েছে তাদের বেহেস্ত নসীব করো। হে আল্লাহ তুমি বিচারের পর তাদেরকে বেহেস্ত নসীব করো। দোয়া অনুষ্ঠানে তার এ ধরনের বক্তবে উপস্থিত সকলেই হতবাক হয়ে যান।

    উত্তেজনা দেখা দিলে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ সকলকে শান্ত করেন।

    উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলরুবা শারমীন জানান, দোয়া অনুষ্ঠানে এ ধরনের দুর্ভাগ্যজনক বক্তব্য শুনে তিনি নিজের কানকে প্রথমে বিশ্বাস করতে চাননি। একই কথা আবার রিপিট করলে তিনি মনোযোগ দিয়ে তা শোনেন। আশেপাশে যারা ছিলেন তাদের নিকট থেকে তিনি শতভাগ নিশ্চিত হন।

    গোপালপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনুস ইসলাম তালুকদার জানান, একুশে গ্রেনেড হামলা মামলার প্রধান তিন আাসামীর বাড়ি গোপালপুরে। গোপালপুরের দুই জঙ্গী সম্প্রতি ক্রস ফায়ারে মারা গেছে। কিছুদিন আগে দর্জি নিখিলকে কুপিয়ে হত্যা করে জঙ্গিরা।

    অধ্যক্ষ ড. ফায়জুলের মতো মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী মানুষ, যারা জামায়াত শিবিরের সঙ্গে যুক্ত তাদের মুখ থেকে এমন কথা বের হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। আমরা তার কঠিন শাস্তি চাই।

    গোপালপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আব্দুস সোবহান তুলা এই কামিল মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি।

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close