• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

পদ্মাসেতু নিয়ে খালেদা জিয়ার আক্রোশ মানায় না

প্রকাশ:  ০৩ জানুয়ারি ২০১৮, ১৭:৪৪ | আপডেট : ০৩ জানুয়ারি ২০১৮, ১৭:৪৭
পীর হাবিবুর রহমান

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলের প্রধানই নন, সাংবিধানিকভাবে তিনবার ও ব্যালট বিপ্লবে ২ বারের প্রধানমন্ত্রী। তার রাজনৈতিক জীবন উত্থান পতনে ঘেরা। তার রাজনৈতিক জীবনে ১১ বছর ধরে যে দুঃসময় এসেছে তা আর কখনো আসেনি। তিনি বরাবর বলে আসছেন সরকার তার, তার পরিবার এবং দলের ওপর অবর্ণনীয় নির্বাচন করছে।

মানুষের ধারণার মধ্যে, বিশ্বাসের মধ্যে কি আছে; পর্যবেক্ষকরা কি ভাবছেন তার বক্তব্যের বিপরীতে সেটি তারাই জানেন। তিনি আদালতে দাঁড়িয়ে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে প্রধানমন্ত্রী বিস্ময়ভরা চোখে জবাবে বলেছেন, তিনি আমাকে কি ক্ষমা করবেন! ২১ গ্রেনেড হামলায় হত্যা করতে পারেননি, সেই ক্ষমা!

সম্পর্কিত খবর

    সরকারি দল যাই বলুক, মানুষ মনে করে বিএনিপর ওপর সরকারি দমন পীড়নের বেদনা তিনি ভুলে ক্ষমার ‍দৃষ্টিতে দেখেছেন। খালেদা জিয়াও নিজেও রাষ্ট্রপরিচালনার দর্শণ ‘ভিশন-২০৩০’ ঘোষণা করতে গিয়ে প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসার আকুতি ও ঘোষণা দিয়েছিলেন।

    সরকারি দলের নেতারা সেই দর্শনের তেমন সমালোচনা করতে পারেননি। বরং অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত অভিনন্দন জানিয়েছিলেন, প্রশংসা করেছিলেন। ইংরেজি নববর্ষ ২০১৮ সালের শুরুতেই সরকারি প্রশাসন বিএনপি নেত্রীকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৫ জানুয়ারির সমাবেশের অনুমতি দেয়নি। ছাত্রদলের সমাবেশে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউটে প্রথমে তালা পরে খুলে দিয়ে বরণ, মাঝখানে উত্তেজনা-হয়তো তাকে ক্ষুব্ধ করেছে। সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ তার বক্তব্যে ঘটেছে। সেদিনের বক্তব্যে সবচে জোরালোভাবে যে কথাটি দলের নেতাকর্মীদের জন্য, গণমাধ্যমের জন্য, সরকারের জন্য এমনকি দেশের মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা ছিল-সেটি হচ্ছে, চাইলেও নির্বাচনের বাইরে রাখা যাবে না, আমরা নির্বাচন করবোই। দলের জন্য তেজোদ্দীপ্ত বক্তব্য ছিল এটি।

    সরকারের সমালোচনাও গণতন্ত্র সম্মত ছিল। কিন্তু ‘পদ্মা সেতুতে কেউ উঠবেন না। ওরা জোড়াতালির পদ্মাসেতু তৈরি করছে, এতে জীবনের ঝুঁকি থেকে যায়।’ আর যাই হোক সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখে এই বক্তব্য শোভা পায় না। এ শুধু আক্রোশ নয়, প্রতিহিংসার অনলে পোড়া তীর্যক বাক্য। এরশাদ পতনের পর অনেক প্রকল্প বন্ধ করা হয়েছিল। এমনকি উপজেলা ব্যবস্থা পর্যন্ত বাতিল হয়েছিল। জনগণের কল্যাণে সরকারের নেয়া পদক্ষেপ, কর্মসূচী বা প্রকল্প দেশ ও জনগণের সম্পদ হয়ে উঠে। এটি আমাদের মতো সাধারণ মানুষের চেয়ে রাষ্ট্র পরিচালনায় অভিজ্ঞ বেগম খালেদা জিয়া আরো বেশি জানেন। সরকার আসবে, সরকার যাবে; সরকার সফল হতে পারে, সরকার ব্যর্থ হতে পারে, শাসক দল সমালোচনার তীরে ক্ষত বিক্ষত পারে। কিন্তু দেশের মানুষের বহুল প্রত্যাশিত পদ্মাসেতুর জন্য গণতন্ত্রের নেত্রী হিসাবে বেগম খালেদা জিয়া অভিনন্দন জানাবার কথা। সেখানে মানুষকে সেই পদ্মা সেতু ব্যবহারে বারণ করা মানুষতো গ্রহণ করবেই না বরং তাকে সমালোচনার ঝড়ে পতিত করেছে।

    মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, চায়ের টেবিল সর্বত্র একই বক্তব্য-একি বললেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী! পদ্মা সেতু রাষ্ট্রের সম্পদ, জনগণের কল্যাণে এ এক বড় চ্যালেঞ্জ। বিশ্বব্যাংক তাদের অর্থায়ন ফিরিয়েই নেয়নি, দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিল। দুর্নীতির অভিযোগ থেকে আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে বাংলাদেশ কলংক মোচন করেছে। সরকারের অনেক সমালোচনার বিষয় থাকতে পারে। কিন্তু তার যতগুলো সাফল্য বা অর্জন তার অন্যতম পদ্মাসেতু।

    এরশাদ যমুনা সেতু শুরু করেছিলেন। উত্তরের অর্থনীনৈতি উন্নয়ন দুয়ার খুলে দিয়েছে সেই বঙ্গবন্ধু সেতুতে খালেদা জিয়ার সরকারের অনেক বড় অবদান রয়েছে। শেখ হাসিনার সরকার সেটি সম্পন্ন করেছিলেন। এই সুফল গোটা দেশের জনগণ ভোগ করছে। টোল নিতে গিয়ে টোল আদায়কারীরা কখনো জিজ্ঞেস করেন না, আপনি আওয়ামী লীগ, বিএনিপ নাকি জাতীয় পার্টি? রাষ্ট্রের সম্পদ রাষ্ট্রের কল্যাণে ব্যয় হবে-সেটি রাষ্ট্রনায়করাই তো বেশি জানেন। জনগণের নেত্রী হয়ে বেগম খালেদা জিয়া জনগণের মনের ভাষা, জনগণের আকুতি ও স্বপ্নের পদ্মাসেতু দক্ষিণের মানুষের যোগাযোগ ও অর্থনীতির দুয়ার যে খুলে দেবে সেটি বুঝার কথা।

    বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার হাতে যদি সুনির্দিষ্ট সেতু নির্মাণের ক্রুটি বিচ্যুতির খতিয়ান থাকতো আর সেই সব সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সংবাদ সম্মেলন বা বক্ততায় যুক্তিসহ তুলে ধরতেন তাহলে খালেদা জিয়ার বক্তব্য সরকারকেও বিবেচনায় নিতে হতো। বির্তকের মুখে পড়তেন না তিনি।

    বেগম খালেদা জিয়ার মনে আছে কিনা, তার প্রথম শাসনামলে আজকের প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলের নেতা হিসাবে শেখ হাসিনা তার সরকারের ৫ জন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে তথ্য ও উপাত্তসহ সুনির্দিষ্ট দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিলেন। বিএনপি সরকার পরদিন গণমাধ্যমের লিড নিউজ দেখে ঝাঁকুনি খেয়েছিল। সংসদে তোফায়েল আহমেদ খালেদা জিয়ার পানি সম্পদ মন্ত্রী মেজর জেনা. (অব.) মজিদুল হকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে ঝড় তুলেছিলেন। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় সরকার বিরোধী প্রধান রাজনৈতিক দলের নেত্রী হিসাবে বেগম খালেদা জিয়া যদি আজ চালের দাম, পেয়াজের দাম, শিক্ষা ব্যবস্থার করুণ অবনতি, ব্যাংকিং খাতের চরম অব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন মন্ত্রী ও দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্য ও উপাত্তসহ অভিযোগ আনতেন তাহলে সরকারও ঝাঁকুনি খেত, জনমত পক্ষে যেত, মানুষও আলোড়িত হতো। আলোচনা-সমালোচনা বিএনপির রাজনৈতিক তহবিলে যেত।

    কিন্তু কথা নেই বার্তা নেই, জনগণের আশা আঙ্খাকার প্রতিফলন ঘটিয়ে শেখ হাসিনার সরকার পদ্মা সেতুর যে চ্যালেঞ্জ দৃশ্যমান করে সমালোচকদের মুখেও কুলুপ এঁটে দিয়েছেন, সেখানে বেগম খালেদা জিয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী হয়ে এটা কি বললেন? এই পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হলে মানুষ দূরে থাক, বিএনপির নেতারা দূরে থাক, বেগম খালেদাও পদ্মা সেতু দিয়ে দক্ষিণের সফর করবেন। রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে মানুষের আবেদন ও চাওয়া দায়িত্বশীল বক্তব্য জনগণের আবেগ, অনুভূতি ধারণ করে বক্তব্য দান ও কর্মসূচী প্রণয়ন।

    লেখক: প্রধান সম্পাদক, পূর্বপশ্চিমবিডি.নিউজ

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close