ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার প্রতিবাদ
মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় সম্মান না দিতে প্রধানমন্ত্রীকে মুক্তিযোদ্ধার চিঠি
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধায় দেশ সয়লাব হয়ে গেছে উল্লেখ করে মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় সম্মান না জানানোর অনুরোধ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দিয়েছেন একজন মুক্তিযোদ্ধা।
সম্পর্কিত খবর
তার নাম আজিজুল হক । তিনি জামালপুরের মেলান্দহ এলাকার বাসিন্দা।
রবিবার মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে চিঠিতে এই কথাটি উল্লেখ করেন আজিজুল।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুর পর তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করার বিধান করে। আজিজুলের আক্ষেপ, ভুয়া মুক্তিযেদ্ধারাও এই ‘গার্ড অব অনার’ পান। আর বিবেকের তাড়নায় এটা তিনি মেনে নিতে পারছেন না বলেই এই সম্মান বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এই মুক্তিযোদ্ধা।
প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া আবেদনপত্রে মুক্তিযোদ্ধা লেখেন, একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার রাষ্ট্রীয় মর্যাদা এবং একজন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার রাষ্ট্রীয় মর্যাদার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদাকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদার সাথে মেলানোকে আমি কোনোভাবে মেনে নিতে পারছি না।
সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার বিশ্লেষণের পর আমি নিজে থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমার মৃত্যুর পর ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার ন্যয় একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা না হয়।
নানা সময় মুক্তিযুদ্ধ না করেও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম উঠানোর অভিযোগ আছে। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষে অস্ত্র ধরা ব্যক্তিরও মুক্তিযোদ্ধা হয়ে রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা নেয়ার ঘটনা ঘটেছে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক শনিবার কুড়িগ্রামে এক অনুষ্ঠানে জানান, যাচাই বাছাইয়ে ধরা পড়ার পর সাড়ে ছয় হাজার ভুয়া মু্ক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করেছে সরকার।
মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল লেখেন, ‘প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের নামে’ দেশে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সয়লাব হয়েছে। এতে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদদের আত্মার প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের দেশে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার অনুপ্রবেশকে মেনে নেয়া যায় না উল্লেখ করে আজিজুল বলেন, এতে গর্বিত বাঙালির সাথেও ধৃষ্টতা প্রদর্শন করা হয়েছে।
২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ প্রতিদিনের এক নিবন্ধের সূত্র ধরে আবেদনে এই মুক্তিযোদ্ধা উল্লেখ করেন, ‘স্বাধীনতার ৮ বছর পর চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার মিজানুর রহমানের পিতা-মাতার বিয়ে হয়। তিনিও মুক্তিযোদ্ধা বনে গেছেন। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার মুখোশ খোলার পর মিজানুর রহমান তার মুক্তিযোদ্ধার খেতাব বর্জনের জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছেন।’
‘মিজান নিজেই লিখেছেন- কীভাবে তার নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় এসেছে, তা তিনি জানেন না। এতে প্রমাণিত হয়, যাচাই-বাছাইয়ের নামে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাকে কীভাবে মুক্তিযোদ্ধা বানানো হয়েছে।’
সরকার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাকে তালিকাভুক্ত করার জন্য পরিপত্র জারি করার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে যাছাই-বাছাই কমিটির সাথে সংশ্লিষ্ট মুক্তিযোদ্ধারা অর্থের লোভে এমনটি করেছে বলেও অভিযোগ করেন আজিজুল। তিনি বলেন, ‘এতে সরকারের সফলতার উদ্যোগকে কলঙ্কিত করা হয়েছে।’
এর আগে জেলার আরও একজন মুক্তিযোদ্ধা তার বীর খেতাব বর্জনের পাশাপাশি এবং মৃত্যুর পর গার্ড অব অনার না দিতে অনুরোধ করেছেন।
মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল হকের আবেদনের বিষয়নি নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তামিম আল ইয়ামিন বলেন, ‘তিনি আমার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে আবেদন করেছেন। তার আবেদন বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’