• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

কোটা বিলুপ্তি সংবিধানের লঙ্ঘন: জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়

প্রকাশ:  ২০ এপ্রিল ২০১৮, ১৭:০৬ | আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০১৮, ১৭:১১
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

সরকারি চাকরিতে জেলা কোটা বিলুপ্ত করা হলে সেটি সংবিধান লঙ্ঘনের শামিল হবে বলে মন্তব্য করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ‘বিদ্যমান কোটা পদ্ধতির যৌক্তিকতা’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এই মন্তব্য করেছে মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে প্রতিবেদনটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘জেলা কোটা বাংলাদেশের সংবিধানের ২৯(৩)(ক) অনুচ্ছেদের বিধান। কাজেই কোটাভিত্তিক নিয়োগের বিদ্যামান নীতিমালা হতে বিচ্যুত হলে সংবিধান আরোপিত মূলনীতি ক্ষুণ্ণ হয়।

সম্পর্কিত খবর

    অর্থাৎ জেলা কোটা পদ্ধতি সঠিকভাবে অনুসরণ না করা সংবিধান লঙ্ঘন করারই শামিল।’ এই প্রতিবেদনে জেলা কোটা ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা বা অন্য কোনো কোটা সম্পর্কে কিছু মন্তব্য করা হয়নি।

    এদিকে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনা করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে প্রধান করে শিগগিরই একটি কমিটি গঠন করবে সরকার। আগামী ২৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর এ কমিটি গঠন করা হতে পারে।

    তার নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এমন তথ্য। কোটা পদ্ধতি তুলে দেয়ার বিষয়ে গেজেট প্রকাশের কোনো অগ্রগতি নেই বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খান।

    তিনি বলেন, অগ্রগতি কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রী যদি বলেন যে এখনই ঘোষণা দাও, আমরা দু’দিনেই দিয়ে দিতে পারব। কোটা পদ্ধতি সংস্কারে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে কমিটি গঠনের অগ্রগতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখনও কিছু হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফেরার আগে কমিটি হতে পারে কিনা- জানতে চাইলে মোজাম্মেল হক বলেন, না, আপাতত বোধহয় না।

    কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের বিষয়ে বলেন, ‘কোটা নিয়ে যখন এত কিছু, তখন কোটাই থাকবে না। কোনো কোটারই দরকার নেই।

    কোটা যদি দরকার হয় ক্যাবিনেট সেক্রেটারিতো আছেন। আমিতো তাকে বলেই দিয়েছি। সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বসে তারা কাজ করবেন। সেটা তারা দেখবেন।’ কোটা বাতিলের কথা বললেও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের অন্যভাবে চাকরির ব্যবস্থা করে দেবেন বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর আন্দোলন স্থগিত করে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।

    এদিকে ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতির যৌক্তিকতা’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন তৈরি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবুল কালাম আজাদ।

    তবে বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি। প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন অনগ্রসর জেলার নাগরিকদের প্রজাতন্ত্রের কাজে নিয়োগ করতে সমান সুযোগ দিতে ১৯৭২ সালের ৯ মে প্রথম কোটাভিত্তিক পদ সংরক্ষণের নীতিমালা জারি করা হয়।

    জেলা কোটা বাংলাদেশের সংবিধানের ২৯(৩)(ক) অনুচ্ছেদের বিধান। কাজেই কোটাভিত্তিক নিয়োগের বিদ্যমান নীতিমালা হতে বিচ্যুত হলে সংবিধান আরোপিত মূলনীতি ক্ষুণ্ণ হয়। সংবিধানের ২৯(৩)(ক) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘নাগরিকদের যে কোনো অনগ্রসর অংশ যাহাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করিতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে তাহাদের অনুকূলে বিশেষ বিধান প্রণয়ন করা হইতে’।

    সংবিধান সংশোধন ছাড়া যদি জেলা কোটা বাদ দেয়া হয় তা সংবিধান লঙ্ঘনের শামিল হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, জেলা কোটা বাতিলের আগে সংবিধান সংশোধন করে সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদ পরিবর্তন করতে হবে।

    এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নূর বৃহস্পতিবার বলেন, ‘আমরা কোটা সংস্কারের কথা বলেছিলাম। প্রধানমন্ত্রী তা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন চাই। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কি বলল সেটা আমাদের কাছে বিবেচ্য নয়। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’

    জানা গেছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে কোটা সংস্কারের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত বা নির্দেশনা পৌঁছায়নি। সংসদ সচিবালয় বা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তারা কোনো লিখিত নির্দেশনা পাননি।

    ফলে সরকারের এ দুটি মন্ত্রণালয় বা বিভাগ কোটা সংস্কারের কাজ শুরু করেনি। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ সংক্রান্ত কাজ কিছুটা এগিয়ে রেখেছেন। তারা মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে প্রধান করে একটি প্রস্তাবিত কমিটির খসড়া প্রস্তুত করে রেখেছেন।

    কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। সদস্য হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সরকারি কর্মকমিশনসহ (পিএসসি) সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও কয়েকজন শিক্ষাবিদ এবং সাবেক আমলার নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

    প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে রাষ্ট্রীয় সফরে যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। এই সফর শেষে আগামী ২৩ এপ্রিল তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। তিনি দেশে ফেরার পর কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনায় কমিটি গঠন হতে পারে। সূত্র: যুগান্তর

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close