• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

মাদারীপুরের নির্বাচনী হালচাল

আ.লীগে গ্রুপিং জট, নতুন নেতৃত্বে বিএনপির আস্থা

প্রকাশ:  ২৩ মে ২০১৮, ১৫:৪৪ | আপডেট : ২৩ মে ২০১৮, ১৬:৩৫
মাদারীপুর প্রতিনিধি

আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাদারীপুর-৩ (কালকিনি-মাদারীপুর সদরের একাংশ) আসনে ২০ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। এই আসনে আওয়ামীলীগের বড় বাঁধা হয়ে দাড়াতে পারে দলীয় গ্রুপিং। পক্ষে-বিপক্ষে নানা যুক্তিতে বিভক্ত মাদারীপুর-৩ আসনের আওয়ামীগের সম্ভব্য দলীয় প্রার্থীরা। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভোটের হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিতে নতুন নেতৃত্বের উপর আস্থা রাখছেন বিএনপি।

আওয়ামী লীগ

কালকিনি উপজেলা আওয়ামীলীগের ঘাটি হিসেবে পরিচিত। এই আসন থেকে তৎকালীন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মরহুম আব্দুর রাজ্জাক সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তাই এই আসনটি আওয়ামীলীগের জন্য গুরুত্ববহন করে।

এছাড়াও বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী আলহাজ্ব সৈয়দ আবুল হোসেন ৪ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ৩ বার প্রতিমন্ত্রী ও মন্ত্রী হন। তিনি দীর্ঘদিন এই আসনে একক নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন।

দলীয় ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, এই আসনে বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী আলহাজ্ব সৈয়দ আবুল হোসেন কালকিনিসহ মাদারীপুরে বেশ কয়েকটি এলাকায় উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যক স্কুল ও কলেজ স্থাপন করে ব্যাপকভাবে সুনাম অর্জন করেন। এছাড়াও তিনি সাধারণ মানুষের বিপদ আপদে নানা ধরণের সহযোগিতা করে ভোটারদের মনে স্থান করে নিয়েছেন। ভদ্র ও মার্জিত হওয়ায় সাধারণ মানুষ তাকে খুব পছন্দ করেন।

সৈয়দ আবুল হোসেন ১৯৯১ সাল থেকে ৪ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে একবার প্রতিমন্ত্রী ও দুইবার মন্ত্রী হন। বিশ্বব্যাংকের মিথ্যা অভিযোগে তার মন্ত্রীত্ব ও দশম জাতীয় সংসদ সদস্যর মনোনয়ন না পাওয়ায় এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উপজেলা আ’লীগ সমর্থক ও এলাকাবাসীর প্রাণের দাবী সৈয়দ আবুল হোসেনকে মনোনয়ন দেয়ার। সেই সাথে কালকিনির ত্যাগী ও পুরোনো নেতা-কর্মীদের একটি বড় অংশ মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাদশ সংসদ নির্বাচনে সৈয়দ আবুল হোসনকেই মনোনয়ন দিয়ে উন্নয়নের ধারা অব্যহত রাখবেন।

এছাড়াও এই আসনে বর্তমান এমপি ও কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কৃষিবিদ আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবাহান গোলাপের নামও শোনা যাচ্ছে। তাছাড়া বঙ্গবন্ধুমানব কল্যাণ কেন্দ্রীয় কমিটি সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সায়েম সরদার মনোয়ন চাইবেন বলে একাধিক সুত্রে জানা যায়।

দলীয় সূত্রে আরো জানা যায়, বর্তমান সংসদ সদস্য আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাছিম মাদারীপুর সদরের সন্তান হলেও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাদারীপুর-৩ এ তাকে মনোনয়ন দিলে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাই তিনিও মনোনয়ন পাওয়ার আশাবাদি।

এছাড়াও ড. আবদুস সোবাহান গোলাপ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও দলীয় দপ্তর সম্পাদক এবং মাদারীপুর-৩ আসনের সন্তান হওয়ায় তার সমর্থকরা দলীয় মনোনয়ন চাইতে জোর অনুরোধ করবেন বলে জানা যায়।

সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাবেক উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মীর গোলাম ফারুক বলেন, বিশ্বব্যাংক সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের নামে যে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছিল তা সর্বত্র মিথ্যা প্রমাণীত হয়েছে। তাই কালকিনি উপজেলা আওয়ামীলীগ সমর্থিত সাধারণ মানুষের একটাই দাবি এবার সৈয়দ আবুল হোসেনকে দলীয় মনোনয়ন দিয়ে মাদারীপুর-৩ সংসদ এলাকার সম্মান অক্ষুন্ন রাখতে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আলহাজ সৈয়দ আবুল হোসেন বলেন, দলীয় প্রধান দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করব।

বিএনপি

সাম্প্রতিক সময়ে কালকিনি উপজেলায় বিএনপির কর্মকাণ্ড অনেকটাই স্থিতিমিত। ইতোপূর্বে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড জোরালো থাকলেও নানাবিধ কারণে দলীয় কর্মসূচির মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে।

এই আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশুকুর রহমান মাশুক, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় গণশিক্ষা বিষয়ক সহ-সম্পাদক আনিচুর রহমান তালুকদার খোকন ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি আসাদুজ্জামান পলাশের নাম শোনা যাচ্ছে।

দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশুকুর রহামান মাশুক এলাকার প্রবীণদের মাঝে জনপ্রিয় হলেও বর্তমানে এলাকার সাথে তার যোগাযোগ কম।

অপরদিকে যুবক শ্রেণীর মধ্যে কেন্দ্রীয় বিএনপি’ গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন জনপ্রিয় এবং তিনি নিয়মিতভাবে এলাকায় থাকেন।

এছাড়াও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি আসাদুজ্জামান পলাশ চার থেকে পাঁচটি ইউনিয়নে জনপ্রিয় হওয়ায় তার পক্ষে সমর্থকরা মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা যায়। কালকিনি উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব হোসেন মুন্সী বলেন, বিএনপি দলীয় প্রধান যাকে মনোনয়ন দিবেন আমরা তাকে নিয়েই নির্বাচন করব এবং জয়ী হব বলে আশা রাখি।

নাম না প্রকাশে একজন নেতা বলেন, এই আসনে আনিচুর রহমান তালুকদার খোকনের জন্য স্থানীয় নেতাকর্মীরা মনোনয়ন চাইবে, কারণ এলাকায় তার সমর্থক বেশী আছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র নেতা ও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী আসাদুজ্জামান পলাশ জানান, আমি বিগত দিনে ছাত্র রাজনীতি যেভাবে নিজেকে নিয়োজিত করেছি, পরিচ্ছন্ন রাজনৈতির সাথে থেকেছি। যদি দলীয় প্রধান আমাকে মনোনয়ন দেয়, তাহলে অবশ্যই মাদারীপুর- ৩ আসনে প্রার্থী হবো এবং কালকিনি মানুষের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাব।’

জাতীয়পার্টি

এছাড়াও জাতীয় পার্টি থেকে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক ও কালকিনি উপজেলা কমিটির সভাপতি এম.এ খালেক। তিনি জানান, আমরা শরীক দলের অংশ। তাই দলের সিন্ধান্ত থাকলে আমি নিজে এই আসন থেকে জাতীয়পার্টির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিব।

আমি দীর্ঘদিন ধরে কালকিনি উপজেলা জাতীয়পার্টির সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছি। আশা করি দলীয় প্রধান পল্লী বন্ধু হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ আমাকে মনোনয়ন দিবেন।’

এছাড়াও এই আসনে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য অধ্যাপক বেলায়েত হোসেনের নাম শোনা যাচ্ছে।

/পি.এস

আ.লীগ,গ্রুপিং,জট,বিএনপি
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close