• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

সেলুলয়েডে মুক্তিযুদ্ধ

প্রকাশ:  ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৮:২৯ | আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৮:৪৯
বিনোদন ডেস্ক

একটি জাতির জন্য, একটি দেশের জন্য স্বাধীনতার চেয়ে মূল্যবান কিছু নেই। স্বাধীনতার জন্য অনেক জীবন, অনেক রক্ত ঝরাতে হয়। তাই স্বাধীনতা যুদ্ধের চেয়ে মূল্যবান ও স্মরণীয় অধ্যায় একটা জাতির কিছুই নেই। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অনেক রক্ত, অনেক প্রাণের বিনিময়ে আমরা একটা স্বাধীন দেশ পেয়েছি। পেয়েছি স্বাধীনতা। আমাদের সেই গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় আমাদের সেলুলয়েডের পর্দায় কীভাবে উঠে এসেছে? কীভাবে, কোন দৃষ্টিকোণ থেকে বয়ান করা হয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধকে?

গত চার দশকে অর্ধশতাধিক মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। অধিকাংশ চলচ্চিত্রেই মুক্তিযুদ্ধকে দেখা হয়েছে উপরিতল থেকে। বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রগুলোতে যুদ্ধ, নারী এবং ধর্ষণের মতো ঘটনাকে নির্লজ্জভাবে 'বাণিজ্যিক' দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করা হয়েছে। অধিকাংশ চলচ্চিত্রেই যুদ্ধ এবং চরিত্রগুলোর কিছু সাধারণীকরণ দেখা যায়। যেমন, রাজাকার মানেই দাড়ি-টুপিওয়ালা মোল্ল্যা। মুক্তিযোদ্ধা মানেই প্রগতিশীল। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এদেশের মোল্ল্যারাও দেশের জন্য যুদ্ধে গিয়েছে। আবার তথাকথিত প্রগতিশীলদের অনেকেই দেশের প্রয়োজনের সময় গা ঢাকা দিয়েছে। অধিকাংশ সিনেমায় মুক্তিযোদ্ধা মানেই মাথায় গামছা আর পরনে লুঙ্গি। বস্তুত, গৌরবান্বিত মহান মুক্তিযুদ্ধের বিশালতা, বীরত্বগাথা বস্তুনিষ্ঠভাবে কিঞ্চিতকরই উঠে এসেছে আমাদের চলচ্চিত্রে।

সম্পর্কিত খবর

    কিন্তু কেন? অনেক কারণের মধ্যে অন্যতম কারণ নিশ্চয় নির্মাতাদের গল্প বাছাইয়ে মননশীলতা ও ইতিহাস সচেতনতার অভাব। অতি বাণিজ্যিক মনোভাব। ফলে অধিকাংশ চলচ্চিত্রেরই গল্প খুব দূর্বল। আছে নির্মাণের দূর্বলতাও। কারিগরি সমস্যা ও বাজেট স্বল্পতাও অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচিত। ফলে কিছু প্রামাণ্যচিত্রে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত স্বরূপ তুলে ধরার প্রয়াস দেখা গেলেও পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধ বিবর্ণ, বিকৃত, মূল ও মূল্যবোধ বিচ্ছিন্ন ভাবে উঠে এসেছে বারবার।

    তবে আশার কথা হচ্ছে কিছু মেধাবী, ইতিহাস সচেতন নির্মাতা এর ব্যতিক্রম। তারা চেষ্টা করেছেন সততার সাথেই সিনেমার ক্যানভাসে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চিত্রটি তুলে ধরতে।

    ৪৮ তম বিজয় দিবসে পূর্বপশ্চিমবিডি.নিউজ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্রর ইতিবৃত্ত।

    মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগে যুদ্ধ শুরু চলচ্চিত্রে

    ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের পর কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান নির্মাণ করেন ‘জীবন থেকে নেয়া’। ১৯৭০ সালে মুক্তি পাওয়া এই চলচ্চিত্রে সংসারের একগোছা চাবির মধ্য দিয়ে পাকিস্তানী স্বৈরচারী শাসন ক্ষমতা বোঝানো হয়। প্রতীকী হলেও এখানে যুক্ত হয়েছে প্রভাতফেরির বাস্তব দৃশ্য, ১৯৬৯ সালের গণ আন্দোলন। এ চলচ্চিত্রে ব্যবহার করা হয় ‘আমার সোনার বাংলা’ ও ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গান দুটি। এই দুটি গানের একটি স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত, অন্যটি একুশের গান হিসেবে সবার হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের আগে স্বাধীনতার বানী নিয়ে নির্মিত হয়েছিল আরও একটি চলচ্চিত্র। ৬ দফা আন্দোলনকে ভিত্তি করে ১৯৭০ সালে নির্মিত ফখরুল আলম পরিচালিত ‘জয়বাংলা’ চলচ্চিত্রটি পাকিস্তান সেন্সর বোর্ড আটকে রাখে। ১৯৭২ সালে এটি মুক্তি পায়। এ দুটো চলচ্চিত্রকে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্রের ভিত্তি প্রস্তর বলা যায়।

    ৭১-এ ক্যামেরার লড়াই

    ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বেশ কিছু প্রামাণ্যচিত্র নির্মিত হয়। জহির রায়হানের ‘স্টপ জেনোসাইড’, ‘এ স্টেট ইজ বর্ন’এবং আলমগীর কবিরের ‘লিবারেশন ফাইটার্স’ তার ভেতর বিশেষ গুরুত্ববহ। এছাড়া বাবুল চৌধুরী নির্মাণ করেন ‘ইনোসেন্ট মিলিয়ন’। এসব প্রামাণ্যচিত্রে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর নৃশংসতা, গণহত্যা, শরণার্থী মানুষের দুঃখ-দুর্দশা, মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব, মুজিবনগর সরকারের তৎপরতাসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্ব জনমত সৃষ্টিতে এসব প্রামাণ্যচিত্র বিশেষ ভূমিকা রাখে। ওই সময়েই জহির রায়হান মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ধীরে বহে মেঘনা’ নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। কিন্তু বিজয়ের দেড় মাসের মধ্যেই জহির রায়হান নিখোঁজ হন। পরে আলমগীর কবির চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন। সে সময় উল্লিখিত চারটি প্রামাণ্য চিত্র ছাড়াও দশ মিনিটের একটি সংবাদচিত্র নির্মিত হয়। এ ছাড়া বিদেশী নির্মাতারা বেশ কিছু প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেন।

    স্বাধীন বাংলাদেশে পর্দায় মুক্তিযুদ্ধ

    চাষী নজরুল ইসলামের হাত ধরে স্বাধীন বাংলাদেশে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণ। চাষী নজরুল ইসলামের ‘ওরা ১১ জন’ মুক্তি পায় ১৯৭২ সালে। ওই বছর মুক্তি পায় সুভাষ দত্ত নির্মিত ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’, আনন্দ পরিচালিত ‘বাঘা বাঙালী’, মমতাজ আলী পরিচালিত ‘রক্তাক্ত বাংলা’। আলমগীর কবির ১৯৭৩ সালে মুক্তি দেন ‘ধীরে বহে মেঘনা’। একই বছর নির্মিত হয় খান আতাউর রহমান পরিচালিত ‘আবার তোরা মানুষ হ’, কবীর আনোয়ার পরিচালিত ‘শ্লোগান’, আলমগীর কুমকুম পরিচালিত ‘আমার জন্মভূমি’। ১৯৭৪ সালে নির্মিত হয় নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত ‘আলোর মিছিল’, চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘সংগ্রাম’ ও এস আলী পরিচালিত ‘বাংলার ২৪ বছর’।

    গতি কমে গেলো

    ১৯৭৪ সালের পর প্রায় দুই বছর মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক কোন চলচ্চিত্র নির্মিত হয়নি। ১৯৭৬ সালে মুক্তি পায় হারুন-অর-রশীদের ‘মেঘের অনেক রং’। ১৯৮১ সালে মুক্তি পায় শহীদুল হক পরিচালিত ‘কলমীলতা’।

    পর্দায় অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগ

    ‘কলমীলতা’র পর প্রায় ১৩ বছর মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক কোনো চলচ্চিত্র নির্মিত হয়নি। এ সময়টাতে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র মুক্তি পায় কিন্তু সেখানে মুক্তিযুদ্ধ একেবারেই অনুপস্থিত ছিল। অভিযোগ আছে ওই সময়ে অনেক বেশি ফ্যান্টাসি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। এ সময় সম্পর্কে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে বাংলাদেশ কই। টেক্সাসের পাহাড় আছে, আরবের ঘোড়া আছে, নেই শুধু বাংলাদেশ’। তবে ওই সময়ে বিকল্পধারায় বেশ কিছু প্রামাণ্য, স্বল্পদৈর্ঘ্য ও পূর্ণদৈর্ঘ্য মিলিয়ে বেশ কিছু চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। এর মধ্যে মোরশেদুল ইসলামের ‘আগামী’, তানভীর মোকম্মেলের ‘হুলিয়া’ ও ‘নদীর নাম মধুমতি’, আবু সাইয়ীদের ‘ধূসর যাত্রা’, নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চুর ‘একাত্তরের যীশু’, তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদের ‘মুক্তির গান’ উল্লেখযোগ্য।

    ‘আগুনের পরশমনি’ আলো ফোটালো পর্দায়

    দীর্ঘ এক যুগ পর ১৯৯৪ সালে সরকারি অনুদানে কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ নির্মাণ করেন ‘আগুনের পরশমনি’। এরপর ১৯৯৮ সালে ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ চলচ্চিত্রেও মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। এ সময়টাতে হুমায়ূন আহমেদ ছাড়া আর কেউ মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেননি।

    আবারও হোঁচটের পরের অধ্যায়

    ১৯৯৮ সালের পর চার বছর নির্মিত হয়নি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র। এরপর তারেক মাসুদ নির্মাণ করেন ‘মাটির ময়না’। এতে মুক্তিযুদ্ধের আগের ও মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের একটি পরিবারের ঘটনা-প্রবাহকে দেখানো হয়েছে। একই সময়ে সেলিনা হোসেনের উপন্যাস অবলম্বনে চাষী নজরুল ইসলাম নির্মাণ করেন ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’। একই পরিচালক ২০০৪ সালে রাবেয়া খাতুনের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মাণ করেন ‘মেঘের পর মেঘ’। ওই বছরে হুমায়ূন আহমেদ নির্মাণ করেন ‘শ্যামলছায়া’ ও অভিনেতা তৌকীর আহমেদ নির্মাণ করেন ‘জয়যাত্রা’। ২০০৬ সালে মুক্তি পায় চাষী নজরুল ইসলামের ‘ধ্রুব তারা’ ও মোরশেদুল ইসলামের ‘খেলাঘর’।

    ২০১১ সালে নাসির উদ্দিন ইউসুফ নির্মাণ করেন ‘গেরিলা’। সৈয়দ শামসুল হকের নিষিদ্ধ লোবান উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এ ছবিতে যুদ্ধের বিস্তৃত প্রেক্ষাপট ধরার চেষ্টা করা হয়। ওই বছর মুহম্মদ জাফর ইকবালের উপন্যাস অবলম্বনে মোরশেদুল ইসলাম নির্মাণ করেন ‘আমার বন্ধু রাশেদ’। সাম্প্রতিক সময়ে সরকারী অনুদানে কিছু মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে তানভীর মোকাম্মেল পরিচালিত ‘জীবনঢুলী’ ও জাহিদুর রহমান অঞ্জনের ‘মেঘমল্লার’। বর্তমানে কয়েকটি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মান্নান হীরা পরিচালিত ‘একাত্তরের ক্ষুদিরাম’ ও ‘একাত্তরের মা জননী’। এ ছাড়া বেশ কিছু চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধের উল্লেখ করা হলেও তাতে মুক্তিযুদ্ধ মূল প্রেক্ষাপট হিসেবে আসেনি।

    ২০১২ সালে মাসুদ আখন্দ নির্মাণ করেন ‘পিতা’, ২০১৩ সালে তানভীর মোকাম্মেল ‘জীবনঢুলি’এবং মিজানুর রহমান শামীম ‘৭১ এর গেরিলা’ নির্মাণ করেন। ২০১৪ সালে মুক্তি পায় মনসুর আলীর ‘৭১-এর সংগ্রাম’, জাহিদুর রহিম অঞ্জনের ‘মেঘমল্লার’, গোলাম মোস্তফা শিমুলের ‘অনুক্রোশ’, সাদেক সিদ্দিকীর ‘হৃদয়ে ৭১’, শাহ আলম কিরণের ‘৭১ এর মা জননী’ এবং মৃত্যুঞ্জয় দেবব্রতর ভারতে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘যুদ্ধশিশু’। সোহেল আরমান ২০১৫ সালে নির্মাণ করেন ‘এইতো প্রেম’। এবছর আরও মুক্তি পায় মানিক মানবিকের ‘শোভনের স্বাধীনতা’ ও মোরশেদুল ইসলামের ‘অনিল বাগচীর একদিন’।

    জাতীয় পুরস্কারে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র

    মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে সুনির্মিত চলচ্চিত্রগুলো যোগ্যতার বলে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রের সংখ্যা কম নয়। জাতীয় পুরস্কারজয়ী চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে আছে হারুনুর রশীদ পরিচালিত 'মেঘের অনেক রং' (১৯৭৬), শাহরিয়ার কবিরের উপন্যাস অবলম্বনে নাসির উদ্দিন ইউসুফ পরিচালিত একাত্তরের যীশু (১৯৯৩), জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের নির্মিত প্রথম ছবি আগুনের পরশমনি (১৯৯৪), তানভীর মোকাম্মেল পরিচালিত নদীর নাম মধুমতি (১৯৯৫), কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের উপন্যাস অবলম্বনে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার চাষী নজরুল ইসলাম নির্মিত হাঙর নদী গ্রেনেড (১৯৯৭), কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার ও সংগীতজ্ঞ খান আতাউর রহমান নির্মিত শেষ চলচ্চিত্র এখনো অনেক রাত(১৯৯৭), স্বনামধন্য পরিচালক তানভীর মোকাম্মেল নির্মিত বাংলাদেশে দেশভাগ নিয়ে একমাত্র চলচ্চিত্র ‘চিত্রা নদীর পাড়ে’, প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ নির্মিত বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম সেরা সিনেমা ‘মাটির ময়না’ (২০০২), স্বনামধন্য পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘বীর সৈনিক’ (২০০৩), আমজাদ হোসেনের ‘অবেলায় অসময়’ অবলম্বনে জনপ্রিয় অভিনেতা তৌকির আহমেদ পরিচালিত ‘জয়যাত্রা’, কথাশিল্পী রাবেয়া খাতুনের উপন্যাস অবলম্বনে চাষী নজরুল ইসলাম ‘মেঘের পরে মেঘ’ (২০০৪), সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের ‘নিষিদ্ধ লোবান’ উপন্যাস ও নিজস্ব অভিজ্ঞতা অবলম্বন করে নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু পরিচালিত ‘গেরিলা’ (২০১১), জনপ্রিয় শিশু সাহিত্যিক ড.মুহম্মদ জাফর ইকবালের কিশোর উপন্যাস অবলম্বনে মোরশেদুল ইসলাম পরিচালিত ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ (২০১১), বদরুল আনাম সৌদের প্রথম চলচ্চিত্র ‘খন্ডগল্প ৭১’ (২০১১), কবি নির্মলেন্দু গুণের কবিতা অবলম্বনে সরকারী অনুদানে মাসুদ পথিক পরিচালিত ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়ান’ (২০১৪), কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ছোট গল্প’রেইনকোট’ অবলম্বনে জাহিদুর রহিম অঞ্জন সরকারী অনুদানে নির্মিত ‘মেঘমল্লার’ (২০১৪), আনিসুল হকের উপন্যাস অবলম্বনে সরকারী অনুদানে শাহ আলম কিরন পরিচালিত ‘একাত্তরের মা জননী’ (২০১৪)।

    এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী প্রেক্ষাপট নিয়ে নির্মিত দাঙ্গা, দেশপ্রেমিক, ঘাতক, শ্রাবন মেঘের দিন, উত্তরের খেপ, লাল সবুজ, গহীনে শব্দ জাতীয়ভাবে পুরস্কার অর্জন করে।

    শেষ কথা

    বস্তুত, বিশ শতকের শেষ প্রান্তে এবং নতুন বেশ কয়েকজন নির্মাতা মুক্তিযুদ্ধের ছবি নির্মাণ করে দর্শকের পুনরায় অশ্রুসিক্ত করে তুলেছেন। তৌকীর আহমেদের 'জয়যাত্রা', হুমায়ূন আহমেদের 'শ্যামলছায়া', তারেক মাসুদের 'মাটির ময়না', খান আতার 'এখনো অনেক রাত', চাষী নজরুল ইসলামের 'ধ্রুবতারা', 'মেঘের পর মেঘ' ও 'হাঙ্গর নদী গ্রেনেড'; মোরশেদুল ইসলামের 'খেলাঘর', 'আমার বন্ধু রাশেদ', 'অনিল বাগচীর একদিন', তানভীর মোকাম্মেলের 'রাবেয়া' ও 'জীবন ঢুলী'; নাসিরউদ্দীন ইউসুফের 'গেরিলা', জাহিদুর রহিম অঞ্জনের 'মেঘমল্লার', আরেফিনের 'ভুবন মাঝি' থেকে শুরু করে শাহ আলম কিরণের 'একাত্তরের মা জননী', সোহেল আরমানের 'এইতো প্রেম', মানিক মানবিকের 'শোভানের স্বাধীনতা'সহ আরও অনেক ছবিতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস উঠে এসেছে।

    মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বেশিরভাগ চলচ্চিত্রই নির্মিত হয়েছে প্রধানত মধ্যবিত্ত জীবনের দৃষ্টিকোণ থেকে। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ মুগ্রামে বাস করলেও এবং মুক্তিযুদ্ধে তাদের অংশগ্রহণের আকাঙ্খার কারণ ও প্রেরণার সূত্র থাকলেও তার যথেষ্ট প্রতিনিধিত্ব মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্রে নেই। সেলুলয়েডে একটি বাস্তব ও পুর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র দেখার অপেক্ষোয় রয়েছেন এ দেশের চলচ্চিত্রমোদী দর্শকেরা।

    প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস পৌঁছে দিতে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রের অনেক বড় ভূমিকা আছে। এদিকে সময়ের সিনেমা সংশ্লিষ্ট যারা আছেন, তারা দৃষ্টি দেবেন, এটাই প্রত্যাশা।

    পিবিডি/ হাসনাত

    সেলুলয়েডে মুক্তিযুদ্ধ
    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close