• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

ফিরোজার বংশের বাতি নিভিয়ে দিলো নেপালে ইউএস বাংলা

প্রকাশ:  ২০ মার্চ ২০১৮, ১৩:০৭ | আপডেট : ২০ মার্চ ২০১৮, ১৩:৪৮
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

প্রিয়কের মা ষাটোর্ধ ফিরোজার রক্তচাপ তখন ২৩০/১১০। নিজ রুমের বেলকনির পাশে খোলা জানালাটা ঘেঁষে খাটে বসে আছেন। কি যেনো বললেন, কাঁপাকাঁপা ঠোঁটে। দু’একটা শব্দ ছাড়া কিছুই বোঝা যায় না। ২০/২০ শয়নকক্ষটিতে এতো মানুষ যে পা ফেলার উপায় নেই। কয়েকবার বললেন আমার, হাঁসফাঁস লাগছে। একটু পর পর খোলা জানালাটার দিকে তাকাচ্ছেন ফিরোজা। যেনো উঁকি দিতে চাচ্ছেন দোতলা থেকে নীচে। কারণ তার ঐ দুতলার কক্ষটির নীচেই কফিনবন্দি হয়ে শুয়ে আছেন তার আদরের একমাত্র সন্তান ফারুক হোসেন প্রিয়ক আর নাতনি প্রিয়ন্ময়ী।

উল্লেখ্য, গত ১২ মার্চ দুপুরে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়। এতে ৫১ আরোহী নিহত হন। এরমধ্যে চার ক্রুসহ ৩৬ বাংলাদেশি ছিলেন। তাদের মধ্যে ২৬ জন নিহত হয়েছেন।

সম্পর্কিত খবর

    এর মধ্যে ২৩ জনের লাশ সোমবার দেশে পৌঁছেছে। তাদের মধ্যে বাবা প্রিয়ক ও মেয়ে প্রিয়ন্ময়ী লাশও ছিল।

    প্রতিবেশিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ফিরোজা বেগমের স্বামী মারা গেছেন ৭/৮ বছর আগে।

    একমাত্র ছেলে, ছেলের বৌ আর একমাত্র নাতনিকে নিয়েই তার দিন কাটত। স্বামী রেখে গেছেন শ্রীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের পাশে কোটি টাকার সম্পদ।

    শৌখিন ফটোগ্রাফার প্রিয়ক তার পৈতৃক সম্পত্তিতে বাড়ি আর দোকান নির্মাণ করে আয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন। প্রতিমাসে পেতেন মোটা অংকের ভাড়া।

    নেপাল যাওয়ার আগে বন্ধুদের বলে গিয়েছিলেন, দেখিস ঘুরে এসে আরও কিছু বাড়ি আর দোকান নির্মাণ করব। মা আর মেয়েটাকে সময় দেবো। সারাদিন আড্ডা দেবো তোদের সাথে। ব্যবসা আমাকে দিয়ে হবে না।

    সব কিছুই এখন মিথ্যে হয়ে গেল। প্রিয়কের বৃদ্ধা মা ফিরোজা বেগম আর তার সাদাসিধে স্ত্রী এখন দু’চোখে ঘোর অন্ধকার দেখছেন।

    কীভাবে এই সম্পদ রক্ষা করবেন, পরিচালনা করবেন, এখনই পেয়ে বসেছে তাদের নিকট মানুষ আর প্রিয়কের বন্ধুদের।

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রিয়কের এক বন্ধু বলেন, প্রিয়কের রেখে যাওয়া সম্পদের উপর তার লাশ দাফনের আগেই চোখ পড়েছে লোভী কয়েকজন প্রভাবশালী আত্মীয়ের।

    অ্যানীর জীবনের অশনি সংকেত এখনই আঁচ করতে পারছেন তারা। তাকে ঘর ছাড়া করা হতে পারে সম্পত্তির আশায়। এরই মধ্যে প্রিয়কের প্রতি মাসের আয় দেড় লাখ টাকা বাড়ি ও দোকান ভাড়া তার মা ও স্ত্রীকে না দিতে বলে দেওয়া হয়েছে।

    প্রিয়কের ১০/১২ জন বন্ধু এক হয়েছিলেন। ঘুরে ঘুরে তারা একবার অ্যানীর কাছে যান তো আরেকবার ফিরোজার কাছে যান; আবার লাশের পাশে যান। এসময় তাদেরই একজন হঠাৎ ডুকরে কেঁদে ওঠেন।

    সেই বন্ধু বললেন, নেপালের ত্রিভূবন বিমান বন্দরের এটিসি থেকে ইউএস বাংলার উড়োজাহাজটিকে ‘বাংলা স্টার’ বলা হচ্ছিল। হায়রে স্টার! এই বাংলা স্টার ফিরোজা চাচীরে নির্বংশ করে দিয়ে গেল। এই বংশের প্রদীপ জ্বালানোর আর কেউ থাকলো না।

    দুর্ঘটনার পর পরিবারের পক্ষে নেপাল গিয়েছিলেন প্রিয়কের চাচাতো ভাই সোহান। তিনিই লাশ চিহ্নিত করে নিয়ে ফিরেছেন।

    তিনি বলেন, তার চাচী ফিরোজা বেগম কেমন যেনো আচরণ করছেন। সবই বুঝছেন, আবার কিছুই যেন বুঝছেন না। নিজ হাতে ওষুধ খাচ্ছেন। আবার মুখ চোখ অস্বাভাবিক করে কেমন জানি করছেন, বুঝিয়ে বলার নাই।

    প্রিয়ক- প্রিয়ন্ময়ীরা নেপাল যাওয়ার আগে তাদের নিয়ে ছবি তুলেছেন ফিরোজা বেগম। নিজ হাতে রান্না করে খাইয়েছেন। ছেলের কাছেই ছিলো তার সব আবদার। বুক খালি করা একরাশ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বারবার কি যেনো বলতে চাইছেন, কিন্তু মুখ ফুঁটে বলতে পারছেন না।

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close