• সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

পাকিস্তান ত্রাণ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার খবর ‘সঠিক নয়’

প্রকাশ:  ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০:১৮
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

পাকিস্তানের বন্যাদুর্গতদের সাহায্যে বাংলাদেশ সরকার এক কোটি ৪০ লাখ টাকা মূল্যের মানবিক ত্রাণ সহায়তা বরাদ্দ করলেও এখন পর্যন্ত এই ত্রাণ পাঠানোর ব্যাপারে পাকিস্তানকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রস্তাব দেয়া হয়নি। কিন্তু ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) খবর প্রকাশ হয়েছে যে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ত্রাণ পাঠানোর প্রস্তাব করেছে এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনী সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে।

বাংলাদেশের ত্রাণ নিলে বিশ্ব পরিমণ্ডলে পাকিস্তানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হতে পারে, এমন আশঙ্কায় ইসলামাবাদ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে ওই খবরগুলোয় বলা হয়।

ত্রাণ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের এসব খবর সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ইসলামাবাদে কূটনৈতিক সূত্র।

এই খবরের কারণে রীতিমতো বিব্রত হওয়ার কথা জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসলামাবাদে একজন কূটনৈতিক কর্মকর্তা। তিনি জানান, বাংলাদেশ থেকে এখন পর্যন্ত তারা কোন ত্রাণ পাওয়ার আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবই পাননি। সেখানে ত্রাণের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের প্রশ্ন কিভাবে আসে?

ত্রাণ প্রস্তাব এখনো প্রক্রিয়াধীন

অন্যদিকে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে, ত্রাণ বরাদ্দ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু পাকিস্তানে এই ত্রাণ পাঠানো এবং ত্রাণ দেয়ার প্রস্তাব এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

পাকিস্তানে ত্রাণ পাঠাতে হলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দেশটির জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থায় আবেদন জানাতে হয়। আবেদন গৃহীত হলে সেই ত্রাণ কিভাবে, কোন পথে আসবে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়। সে মোতাবেক শুরু হয় ত্রাণ পাঠানোর কার্যক্রম। কিন্তু এখন পর্যন্ত পুরো বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বরাদ্দর বাইরে আর কোন অগ্রগতির কথা জানা যায়নি।

ভারতীয় গণমাধ্যমের তথ্য

ভারতীয় গণমাধ্যম তথ্য সূত্র হিসেবে বাংলাদেশ সংবাদমাধ্যমের উল্লেখ করেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে প্রকাশিত খবরগুলোয় ভারত ও আফগানিস্তানের গণমাধ্যমের বরাত দেয়া হয়েছে। এর বাইরে কোনো বিশ্বাসযোগ্য সূত্র বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো মন্তব্য কোথাও দেখা যায়নি।

ত্রাণ গ্রহণ না করার কারণ হিসেবে একটি খবরে বলা হয় যে, বাংলাদেশ যেখানে এক সময় পাকিস্তানের অংশ ছিলো, এমন একটি দেশের কাছ থেকে সাহায্য নেওয়া পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জন্য বিব্রতকর হতে পারে।

ত্রাণ পাঠানো আলোচনার ব্যাপার

পাকিস্তানে ভয়াবহ বন্যার কারণে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিলে গত পহেলা সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বন্যা-কবলিত পাকিস্তানে মানবিক ত্রাণ সহায়তা তহবিলের অনুমোদন দেয়।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ বরাদ্দের কথা জানায়।

ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে ১০ মেট্রিক টন বিস্কুট, ১০ মেট্রিক টন ড্রাই কেক, এক লাখ পানি বিশুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট, ৫০ হাজার প্যাকেট খাওয়ার স্যালাইন, পাঁচ হাজার মশারি এবং দুই হাজার করে কম্বল ও তাঁবু।

কিন্তু বাংলাদেশের কূটনৈতিক সূত্র বলছে, বিস্কুট, পাটের চট, ওরস্যালাইন এবং পানি বিশুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট এসবের কোনটাই পাকিস্তানের প্রয়োজন নেই। এ কারণে আলোচনা হয়তো চলমান রয়েছে।

কোন্‌ কোন্‌ পণ্য ত্রাণ হিসেবে যাবে সেগুলো আলোচনার ব্যাপার। ত্রাণ বিষয়ে আলোচনা কূটনৈতিক চ্যানেলে ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনের সঙ্গে হওয়ার কথা।

তবে পাকিস্তান যেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে এ নিয়ে কোন তথ্য প্রকাশ করেনি, সেখানে এ ধরণের খবর প্রকাশ তাদের জন্য অস্বস্তিকর বলে ইসলামাবাদে কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

ভয়াবহ ও আকস্মিক বিপর্যয়

স্মরণকালের ভয়াবহ ও আকস্মিক এই বন্যায় সড়ক, মহাসড়ক, বাড়িঘর ও ফসলি জমিসহ পাকিস্তানের এক তৃতীয়াংশ এলাকা তলিয়ে গেছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে গ্রামগুলো। হাজার হাজার মানুষ তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছে। অনেকের সেই ঠাঁইটুকু মেলেনি। মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন পার করছে দেশটির লাখ লাখ মানুষ ।

পাকিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার তথ্যানুযায়ী, পাকিস্তানে ভারী বর্ষণ এবং হিমবাহের কারণে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ৩ কোটি ৩০ লাখ মানুষ।- অর্থাৎ প্রতি ৭ জনের ১ জন এই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত।

বন্যায় এখন পর্যন্ত ১৩৫৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে যার মধ্যে ৪৫০টি শিশু। দেশটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।

এর আগে সর্বশেষ ২০১০ সালে পাকিস্তানে বন্যায় ২ হাজারের বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল। তবে ধারণা করা হচ্ছে, এবারের বন্যায় মৃতের সংখ্যা এক যুগের আগের এই সংখ্যা ছাড়িয়ে যাবে।

সাহায্যের জন্য আবেদন

আগে থেকেই ভঙ্গুর অর্থনীতির এই দেশটি বন্যার কারণে পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় পাকিস্তান সরকার বন্যা দুর্গতদের জন্য সাহায্য পাঠাতে বিভিন্ন দেশ ও দাতা সংস্থাগুলোর কাছে আবেদন জানিয়েছিলো।

আশঙ্কা করা হচ্ছে যে বন্যার কারণে পাকিস্তানের ৪ হাজার কোটি ডলারের বেশি অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।

দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘পাকিস্তানের অর্থনীতিতে বন্যার প্রভাব’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে আসে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১০ই সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এমন দুর্যোগপূর্ণ সময়ে পাকিস্তানের সরকার ও জনগণের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছে

বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট এই বিপর্যয়ের বিষয়ে করণীয় কি হবে সে বিষয়ে মত বিনিময় করতে পাকিস্তান সফর করেছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্র এরইমধ্যে ৩ কোটি ডলার সহায়তা দেয়ার প্রস্তাব করেছে। যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, চীন, কাতার এবং তুরস্কও সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। খবর: বিবিসি বাংলা।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম

খবর,প্রত্যাখ্যান,পাকিস্তান,ত্রাণ,প্রস্তাব,বাংলাদেশ
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close