• বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

১৫ ফ্ল্যাটের অ্যাপার্টমেন্ট ধ্বংসস্তূপ, বেঁচে রইলেন মাত্র ৩ জন

প্রকাশ:  ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৮:১৪
নিউজ ডেস্ক

দক্ষিণ তুরস্কের একটি বাড়ির ধ্বংসস্তূপের পাশেই বসে বসে ছিল ১৭ বছরের তরুণী দামালা। ধসে পড়া এই অ্যাপার্টমেন্টের হাউসিংয়ে তারা অনেক পরিবার একসঙ্গে ছিলেন। তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু ১৯ বছর বয়সি সায়েদা ছিল দামালাদের পাশের ফ্ল্যাটে। বিবিসিকে দামালায় জানায়, ৬ বছর বয়স থেকেই সায়েদার সঙ্গে তার বন্ধুত্ব। তারা এখানে একসঙ্গে বড় হয়েছে। কিন্তু জীবিত উদ্ধার করা যায়নি সায়েদাকে।

গত সোমবারের ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় ২৪ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর জানা গেছে। এখনো উদ্ধার অভিযান চলছে। ভূমিকম্পের পর ধ্বংসাবশেষ থেকে কুকুরের সাহায্যে গন্ধ শুকে খুঁজে বের করা হয় দামালাকে। পুরো এই অ্যাপার্টমেন্টে ছিল ১৫টি ফ্ল্যাট। আর এতগুলো পরিবারের মাঝে জীবিত উদ্ধার হয়েছেন মাত্র ৩ জন। অরকান নামের ওই অ্যাপার্টমেন্ট ভবনটি ধসে পড়ার পর এর আশপাশের ভবন এবং ওই ভবনের বাসিন্দাদের স্বজনরা ভিড় করেছিলেন তিন দিন ধরে। কিন্তু উদ্ধারকারীরা শেষ পর্যন্ত জানিয়েছেন, তারা শুধু তিনজনকেই জীবিত উদ্ধার করতে পেরেছেন। বাকিদের কোনো খবর তারা দিতে পারেননি।

এমন ঘটনা তুরস্কের বেশ কয়েকটি আবাসিক ব্লকেই দেখা গেছে। উদ্ধার কাজ এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন কর্মীরা। কিন্তু জীবিত কাউকে উদ্ধারের সম্ভাবনা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছে। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবনের নিচে আটকা পড়লেও এক সপ্তাহ পর্যন্ত ভুক্তভোগীদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাবার পরাপর্শ দিয়েছেন তারা।

ভলিবল খেলোয়াড়দের খোঁজে চলছে অভিযান

সোমবারের ভূমিকম্পের পর তুরস্কে আদিয়ামান ইলিয়াস নামে একটি হোটেল ভবন ধসে পড়ে। হোটেলটিতে তুরস্কের স্কুল ভলিবল খেলোয়াড়দের একটি দল ছিল। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সেখান থেকে তিনটি মরদেহ উদ্ধার করেছেন উদ্ধারকারীরা।

তুরস্ক নিয়ন্ত্রিত উত্তর সাইপ্রাসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হোটেল থেকে দুই শিক্ষক ও এক ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। হোটেল ভবনটি ভেঙে পড়ার আগ পর্যন্ত ছেলে-মেয়েসহ মোট ৩৯ জনের স্কুল ভলিবল দল সেখানে অবস্থান করছিল। খেলোয়াড়দের পরিবারের সদস্যরা তাদের অপেক্ষায় সেখানে অবস্থান করছেন।

শিক্ষক এবং অভিভাবকদের সঙ্গে ফামাগুস্তা তুর্কি মাআরিফ কলেজ থেকে আদিয়ামানে ভ্রমণ করেছিল খেলোয়াড়দের দলটি। সাত তলা ভবনটি পড়ে যাওয়ার পর দলের চারজন বেঁচে গেছে বলে জানা গেছে।

সিরিয়ায় বিদ্রোহী অধ্যুষিত এলাকায় ত্রাণ সহায়তার অনুমতি

বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমে মানবিকতার কারণে লক্ষাধিক ক্ষতিগ্রস্তের জন্য ত্রাণ সহায়তার অনুমোদন দিয়েছে সরকার। গত শুক্রবার মন্ত্রিপরিষদের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সিরিয়ান প্রজাতন্ত্রের সমস্ত অংশে মানবিক সাহায্য বিতরণের জন্য মন্ত্রিপরিষদ অনুমোদন করেছে। এই ত্রাণ বিতরণ জাতিসংঘের সহায়তায় আন্তর্জাতিক কমিটি অব রেড ক্রস এবং সিরিয়ান আরব রেড ক্রিসেন্ট দ্বারা তত্ত্বাবধান করা উচিত।

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ হিসেবে সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমে সাহায্য প্রদান অব্যাহত রাখার জন্য জাতিসংঘ থেকে চাপ দেয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা আল জাজিরা। কারণ ভূমিকম্পের আগে থেকেই এখানকার ৪০ লাখ মানুষের ত্রাণ সহায়তার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু গত তিন সপ্তাহে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এই এলাকায় সরকারের তরফ থেকে কোনো সাহায্য বিতরণ করা হয়নি।

গত সোমবারের ভূমিকম্পে সিরিয়ায় প্রায় তিন হাজার ২০০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছেন। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন লাখো মানুষ। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের সিরিয়া প্রতিনিধি শিভাঙ্ক ধানপালা শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ভূমিকম্পে সিরিয়ায় প্রায় ৫ লাখ ৩০ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে থাকতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত এই মানুষগুলোকে সারাদেশে আশ্রয় সহায়তা দেয়া প্রয়োজন। এই বিশাল সংখ্যার মানুষগুলো এরইমধ্যে যুদ্ধের কারণ বাস্তুচ্যুতির শিকার হয়েছে। সিরিয়ার জন্য এই ভূমিকম্প সংকটের মাঝেই তীব্র আরেক সংকট সৃষ্টি করেছে। তারা অর্থনৈতিক ধাক্কা, কোভিড এবং এখন ব্যাপক শীতের মাঝে রয়েছে।’

তুরস্ক ও সিরিয়ার জন্য ৮ কোটি ডলার সাহায্য প্রতিশ্রুতি স্মরণকালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ার ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় ৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ইউএসএআইডি) অর্থায়নে ক্ষতিগ্রস্তদের আশ্রয়, শীতের পোষাক, খাদ্য, পানি এবং স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হবে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

উদ্ধারকারীরা বলছেন, এখনই সরবরাহ প্রয়োজন, না হলে ঠাণ্ডার কারণে আরও বেশি মানুষ মারা যাবে। ইউএসএআইডির পরিচালক সামান্থা পাওয়ার জানিয়েছেন, এরইমধ্যে দুর্যোগকবলিত মানুষদের নিরাপদ ও সুস্থ রাখতে স্বাস্থ্যবিধি ও স্যানিটেশন সহায়তা দেয়া হয়েছে। একটি মার্কিন সহায়তা দল বর্তমানে তুরস্কের আদিয়ামান, আদানা এবং আঙ্কারা শহরের বাইরে কাজ করছে। দলটিতে দুর্যোগ পুনরুদ্ধার বিশেষজ্ঞ, ১৫৯ জন অনুসন্ধান ও উদ্ধারকর্মী এবং ১২টি কুকুরসহ প্রায় ২০০ জন কর্মী রয়েছেন। ধ্বংসস্তূপ সরাতে সক্ষম মেশিনসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম এরই মধ্যে নিয়ে কাজ শুরু করেছে ইউএসএআইডির দলটি।

ভূমিকম্প
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close