• সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

কলকাতায় চুরি যাওয়া মূল্যবান হীরা উদ্ধার, যেন বাস্তবে ফেলুদার গল্প

প্রকাশ:  ১৪ আগস্ট ২০২৩, ১৯:৩২
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক
২১ বছর ধরে এই হীরা নিয়ে মামলা চলছিল/সংগৃহীত

ভারত থেকে কোহিনূর হীরা চুরির কথা সবারই জানা। আজও সেই হীরা ফেরাতে পারেনি দিল্লি। তবে কলকাতা থেকে চুরি যাওয়া হীরার খোঁজ পাওয়া গেল শেষ পর্যন্ত। দীর্ঘ ২১ বছর তল্লাশির পর হীরা খুঁজে পাওয়ার ঘটনাকে ’জয় বাবা ফেলুনাথ’ সিনেমার কাহিনীর সঙ্গে তুলনা করা চলে। হীরাটি প্রকৃত মালিকের হাতে তুলে দেওয়ার সময় বিচারকও উদ্ধৃত করেন কালজয়ী এ সিনেমার নাম।

অস্কারজয়ী সত্যজিৎ রায়ের কালজয়ী সিনেমার মধ্যে অন্যতম “জয় বাবা ফেলুনাথ”। ওই সিনেমায় দেখানো হয়, “মূল্যবান এক বস্তু লুকিয়ে রাখা হয়েছিল দুর্গা মূর্তির সঙ্গে থাকা সিংহের মুখে। বহু তল্লাশির পর নিজের বুদ্ধিতে সিংহের মুখ থেকে সেটি উদ্ধার করেন ফেলুদা।”

একইভাবে কলকাতা থেকে চুরি যাওয়া গোলকুণ্ডা হীরাটি যেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে, তা শুনলে অবাক হবেন অনেকেই। বাড়ির মিটারবক্সের পেছনে সুইচবোর্ডের একটি সুইচের পেছনে লুকানো ছিল চুরি যাওয়া মহামূল্যবান সেই হীরা।

পুলিশ জানায়, ৩২ ক্যারেটের গোলকুণ্ডা হীরাটি কলকাতার বাসিন্দা প্রণব কুমার রায়ের কাছ থেকে চুরি হয়। হীরাটির বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা। ২১ বছর ধরে এই হীরা নিয়ে মামলা চলছিল। বহুবার তল্লাশির পর সেটির খোঁজ পাওয়া গেছে।

যা ঘটেছিল

পুলিশ বলছে, দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা প্রণব কুমার রায় দীর্ঘদিন ধরে মূল্যবান হীরাটির মূল্য বুঝতে চাইছিলেন। সেই সূত্রেই ২০০২ সালের জুন মাসে ইন্দ্রজিৎ তপাদার নামে এক হীরা বিক্রেতার সঙ্গে পরিচয় হয় তার। হীরার বিষয়ে কথা বলতে ইন্দ্রজিৎ আরেক ব্যক্তিকে নিয়ে প্রণব কুমার রায়ের বাড়ি যান। আংটির জন্য কেমন হীরা প্রয়োজন তা নিয়ে আলাপের মধ্যেই ইন্দ্রজিৎ তপাদারের সঙ্গে আসা ব্যক্তি একটি আগ্নেয়াস্ত্র বের করে প্রণবের কাছ থেকে হীরাটি নিজের কাছে নেন। এ নিয়ে উত্তেজনার মধ্যেই ওই ব্যক্তি হীরাসহ পালিয়ে যান। তারপর আর সেই হীরার খোঁজ পাওয়া যায়নি।

বিষয়টি নিয়ে প্রণব রায় থানায় মামলা করলে সেই মামলায় প্রথমে ইন্দ্রজিৎ তপাদার ও পরে সেই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তবে হীরার খোঁজ মেলেনি। পুলিশও হাল ছেড়ে দেয়নি। বারবার হীরার খোঁজে তল্লাশি করে তারা।

ইন্দ্রজিৎ তপাদারের বাড়ির যে গেট দিয়ে পুলিশ ভেতরে ঢুকতো, সেই গেটের পাশেই ছিল একটি মিটারবক্স। মিটারবক্সের পেছনে ছিল সুইচবোর্ড। আসা-যাওয়ার সময় সেটি চোখে পড়লেও গুরুত্ব দেননি পুলিশ কর্মকর্তারা। তবে সম্প্রতি হঠাৎ করেই মিটারবক্স ও সুইচবোর্ডটি খতিয়ে দেখলে সেটি থেকে উদ্ধার হয় হীরাটি।

বলা যায়, পুলিশের বুদ্ধির কাছে অবশেষে হার মানল চোরের বুদ্ধি। ২১ বছর পর অবশেষে প্রণব কুমার রায় ফিরে পেলেন সেই হীরা। আর গ্রেপ্তার করা হয়েছে অভিযুক্তকেও। এ ঘটনা স্বাভাবিকভাবেই ফিরিয়ে এনেছে জয় বাবা ফেলুনাথের সেই গল্পকেও।

আদালত হীরার আকার পরিবর্তন না করার শর্ত ও দুই কোটি টাকার বন্ডের জিম্মায় প্রণব রায়কে এটি বুঝিয়ে দিয়েছেন। আর তপাদারকে দোষী সাব্যস্ত করে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

গোলকুণ্ডা হীরা ৩২ ক্যারেটের বিরল ও মহামূল্যবান রত্নের একটি। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বের অন্যতম প্রাচীনতম রত্ন এই হীরার টুকরাটি।

কলকাতায় চুরি যাওয়া মূল্যবান হীরা উদ্ধার, যেন বাস্তবে ফেলুদার গল্প,কলকাতা,হীরা উদ্ধার
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close